সাত দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলা করা শ্রীলঙ্কার জ্বালানি তেলের মজুদ নিয়ে কঠোর সতর্কবার্তা দিয়েছেন দেশটির জ্বালানি মন্ত্রী।
Published : 04 Jul 2022, 04:23 PM
স্বাভাবিক চাহিদা বিবেচনায় নিলে দ্বীপদেশটির হাতে এখন একদিনেরও কম পেট্রল আছে, অন্যদিকে আড়াই সপ্তাহের আগে পরবর্তী চালানও পৌঁছানোর কথা নয়।
রোববার কাঞ্চনা ভিজেসেকেরা এমনটাই বলেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জ্বালানি, খাবার ও ওষুধের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমদানির অর্থ পরিশোধে সংগ্রাম করা শ্রীলঙ্কা গত সপ্তাহে জরুরি নয় এমন যানবাহনে পেট্রল ও ডিজেল বিক্রি স্থগিত করেছে।
রোববার ভিজেসেকেরা সাংবাদিকদের জানান, তাদের কাছে এখন ১২ হাজার ৭৭৪ টন ডিজেল ও চার হাজার ৬১ টন পেট্রোল আছে।
“পেট্রলের পরবর্তী চালান ২২-২৩ জুলাইয়ের মধ্যে পাওয়া যাবে আশা করছি,” বলেন তিনি।
ডিজেলের একটি চালান এই সপ্তাহের শেষদিকে পৌঁছাবে বলে আশা করলেও ভিজেসেকেরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, পর্যাপ্ত জ্বালানি ও অপরিশোধিত তেল আমদানির ক্ষেত্রে যথেষ্ট অর্থ শ্রীলঙ্কার হাতে নেই।
জ্বালানি কিনতে শ্রীলঙ্কার কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন কেবলমাত্র ১২ কোটি ৫০ লাখ ডলার দিতে পারবে, যা জ্বালানির পুরো চালান খালাসের জন্য প্রয়োজনীয় ৫৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চেয়ে অনেক কম।
এ বছর জ্বালানি দেওয়া ৭ সরবরাহকারী দেশটির কাছে এখনও ৮০ কোটি ডলার পায় বলেও জানিয়েছেন ভিজেসেকেরা।
শ্রীলঙ্কা ব্যক্তিগত যানবাহনে জ্বালানি তেল বিক্রিতে আগামী সপ্তাহ পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর দেশটির জ্বালানি তেল ফুরিয়ে যাওয়ার এ খবর এল।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, ১৯৭০ এর দশকের তেল সংকটের সময় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে জ্বালানি তেল রেশনিংয়ের পর সম্ভবত শ্রীলঙ্কাই প্রথম দেশ যারা সাধারণ মানুষের কাছে পেট্রল বিক্রি বন্ধ করল।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির অর্থ পরিশোধে পর্যাপ্ত বিদেশি মুদ্রা না থাকায় ১৯৪৮ সালে যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সোয়া দু্ই কোটি জনসংখ্যার দ্বীপদেশটি এখনই সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকট পার করছে।
জ্বালানি, খাবার এবং ওষুধের ব্যাপক ঘাটতি শ্রীলঙ্কায় জীবনযাত্রার ব্যয়কে রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছে দিতে সাহায্য করেছে।
পরিস্থিতি মোকাবেলায় শ্রীলঙ্কা কয়েক সপ্তাহ ধরেই বিদেশি বিভিন্ন রাষ্ট্র ও সংস্থার দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের একটি দলের সঙ্গে ৩০০ কোটি ডলার বেইলআউটের একটি চুক্তি নিয়ে তাদের আলোচনা বৃহস্পতিবার শেষও হয়েছে।
দুই পক্ষের মধ্যে কোনো চুক্তি না হলেও আইএমএফের দলটি আলোচনায় ‘ব্যাপক অগ্রগতি’ হয়েছে বলে দাবি করেছেন।
শ্রীলঙ্কার জনগণ, বিশেষ করে দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ যারা এই সংকটে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, তারা এখন যে ভয়াবহ দুর্ভোগের মুখোমুখি, দলটি তার কিছুটা প্রত্যক্ষ করেছে বলেও জানিয়েছে তারা।
বিদেশি মুদ্রার সংকটে থাকা শ্রীলঙ্কা সস্তায় তেল পাওয়ার লক্ষ্যে বিশ্বের অন্যতম বড় দুই তেল উৎপাদক দেশ রাশিয়া ও কাতারে তাদের কর্মকর্তাদেরও পাঠিয়েছে।