মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। দেশটির সীমান্ত অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় সশস্ত্র বিদ্রোহী জোটের কাছে হেরে গিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
Published : 03 May 2024, 02:28 PM
নাগরিকদের জন্য সেনাপ্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে গত ফেব্রুয়ারিতে আইন জারির পর এবার ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী পুরুষদের বিদেশে কাজে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
বৃহস্পতিবার জান্তা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, যাদের জন্য সেনাপ্রশিক্ষণ গ্রহণ বাধ্যতামূলক তাদের বিদেশে কাজে যাওয়ার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনপত্র গ্রহণ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি দিন দিন জটিল আকার ধারণ করছে। সীমান্ত অঞ্চলের বেশ কিছু এলাকায় সশস্ত্র বিদ্রোহী জোটের কাছে হেরে গিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী। এ পরিস্থিতিতে দেশের সব তরুণ-তরুণীদের জন্য সেনাপ্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে ফেব্রুয়ারিতে একটি আইন জারি করে মিয়ানমারের জান্তা সরকার।
যেখানে বলা হয়, ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সের সব পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সের সব নারীদের অন্তত দুই বছর সেনাবাহিনীর অধীনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে।
ওই আইন জারির পর অনেকেই সেনাপ্রশিক্ষণ গ্রহণ এড়াতে নানা ভাবে দেশ ছাড়ার প্রচেষ্টা শুরু করে বলে জানা গেছে।
এশিয়া ও ম্যধপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে মিয়ানমারে অনেক মানুষ কাজ করেন। আগে সরকার থেকে মিয়ানমারের নাগরিকদের বিদেশে কাজ করতে যেতে কোনো বাধা দেওয়া হত না।
সেনাপ্রশিক্ষণ নিয়ে আইন জারির পর মিয়ানমারের প্রায় এক লাখ পুরুষ বিদেশে কাজ করতে যাওয়ার জন্য অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন বলে জানায় বিবিসি। যা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি। এ থেকেই বোঝা যাচ্ছে তরুণরা দেশ ছেড়ে পালাতে চাইছেন।
বিবিসি জানায়, এর আগেও মিয়ানমারের তরুণরা বিবিসি প্রতিনিধিদের কাছে তাদের দেশ ত্যাগের মরিয়া চেষ্টার কথা জানিয়েছেন।
এমনই একজন ৩২ বছর বয়সের এক তরুণ। যিনি সানচাং টাউনশিপ থেকে ইয়াংগনে এসেছেন জাপান যাত্রার প্রস্তুতি নিতে।
তিনি বিবিসিকে বলেন, “সবাই ভবিষ্যৎ নিয়ে তাদের আশা-ভরসা হারিয়ে ফেলেছে।
সেনাপ্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করে মিয়ানমারে আইন জারি
“দেশে কোনো কাজ নেই। তারা কী এটাই চায় যে সবাই সেনাবাহিনীতে যোগ দিক? আমাদের কী আর কিছুই করার নেই?”
লেওয়ে টাউনশিপের ২৮ বছরের যুবক কো ফিও। তিনি বিবিসিকে বলেন, “জান্তা প্রশাসনের নির্দেশে পর দেশে তরুণদের কাজের আর কোনো সম্ভাবনাই অবশিষ্ট নেই।”
সে দেশে বিবিসির প্রতিনিধিরা দেখেছেন, ফেব্রুয়ারির আইন জারির পর কিভাবে তরুণরা মরিয়া হয়ে দেশ ছাড়তে চাইছেন। অনেক তরুণ থাইল্যান্ড সীমান্তবর্তী মায়ে সত শহরে আশ্রয় নিয়েছেন।
২০২১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে মিয়ানমারের ক্ষমতা দখল করে দেশটির সশস্ত্র বাহিনী। অভ্যুত্থান রক্তপাতহীন ভাবে হলেও পরে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে মিয়ানমার জুড়ে তীব্র বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। জান্তা সরকার কঠোর হাতে ওই বিক্ষোভ দমন করে। বহু বিক্ষোভকারী প্রাণ হারান। গ্রেপ্তার হন আরো অনেকে।
সে সময় বড় বড় শহরগুলোতে বিক্ষোভ দমন করা সম্ভব হলেও বিভিন্ন রাজ্যের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আদিবাসী বিচ্ছিন্নতাবাদী নানা সশস্ত্র বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর লড়াই শুরু হয়।
গত বছর শেষভাগে বিচ্ছিন্নতাবাদী কয়েকটি দল জোট গঠন করে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তুমুল আক্রমণ শুরু করে এবং গত কয়েক মাসে সেনাবাহিনীকে হারিয়ে তারা বেশ কিছু এলাকার দখল নিয়েছে।