রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে যুক্তরাষ্ট্রের খসড়া প্রস্তাবে ভোট দেওয়া থেকে বিরত থাকার ব্যাখ্যা দিয়ে ভারত জানিয়েছে, ইউক্রেইন পরিস্থিতি নিয়ে তারা অত্যন্ত ‘উদ্বিগ্ন’।
Published : 26 Feb 2022, 05:56 PM
ইউক্রেইন ইস্যুতে কূটনৈতিক তৎপরতা ব্যর্থ হওয়াটা খুবই দুঃখজনক জানিয়ে ভারত নিজের অবস্থান তুলে ধরে জানায়, বৈরিতা নিরসনে সংলাপই হচ্ছে একমাত্র সমাধান।
জাতিসংঘে ভারতের স্থায়ী রাষ্ট্রদূত টিএস তিরুমূর্তি শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, “ইউক্রেইনের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।”
‘ভারসাম্যপূর্ণ এবং অনড় অবস্থান’ ধরে রাখা হচ্ছে জানিয়ে ভারত বলছে, “সকল সদস্য রাষ্ট্রকে আন্তর্জাতিক আইন এবং জাতিসংঘ সনদকে সম্মান করতে হবে,এর মাধ্যমেই তৈরি হয় আগামীর গঠনমূলক পথ।”
বিবৃতিতে সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক সংহতিকে সম্মান জানিয়ে অনতিবিলম্বে সংঘাত-সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ফোনালাপের কথা তুলে ধরা হয়।
UNSC’s consideration of the draft resolution on Ukraine
Watch: India’s Explanation of Vote by Permanent Representative @AmbTSTirumurti ⤵️@MeaIndia pic.twitter.com/UB2L5JLuyS
— India at UN, NY (@IndiaUNNewYork) February 25, 2022
শুক্রবার নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউক্রেইনে রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানিয়ে প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর পক্ষে ১১টি ভোট পড়লেও পরিষদের স্থায়ী সদস্য রাশিয়ার ‘ভিটো’র ফলে তা পাস হয়নি।
প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ভোট দিয়েছিল যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, নরওয়ে, আলবেনিয়া, আয়ারল্যান্ড, মেক্সিকো, ব্রাজিল, কেনিয়া, ঘানা ও গ্যাবন। আর ভোটদানে বিরত ছিল চীন, ভারত ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্যের মধ্যে স্থায়ী পাঁচ সদস্য হল- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ফ্রান্স এবং রাশিয়া। এর মধ্যে যে কোনো দেশ যে কোনো প্রস্তাব ‘ভিটো’ দিয়ে আটকে দিতে পারে।
রাশিয়া নিজের সেই ক্ষমতাবলেই প্রস্তাবটি আটকে দিয়েছে। ফলে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে শেষ পর্যন্ত প্রস্তাবটি আর পাস হতে পারেনি।
এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা পরিষদে ভোটাভুটির আগে ইউক্রেইনে রুশ অভিযানের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর জন্য ভারতকে চাপ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে আলাপে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন রুশ আগ্রাসনের নিন্দা জানাতে ‘সম্মিলিতভাবে জোরালো প্রতিক্রিয়ার’ ওপর গুরুত্ব দেন।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের আকস্মিক অভিযান শুরুর ঘোষণাকে যুক্তরাষ্ট্র বলছে, “ইউক্রেইনের ওপর আক্রমণ কোনো উস্কানি ছাড়াই পূর্বপরিকল্পিত এবং অন্যায্য।”
শুক্রবার বেইজিংয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন ইউক্রেইন ইস্যুতে তার দেশের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, চীন সব দেশের আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হলেও তারা ‘নিরাপত্তা সংক্রান্ত রাশিয়ার বৈধ উদ্বেগ’ অনুধাবন করে।
চীন এখনও ইউক্রেইনকে বৈধ রাষ্ট্র হিসেবেই স্বীকার করে এবং রাজনৈতিক সমাধানের দরজা বন্ধ হয়ে যায়নি বলে বিশ্বাস করে বলেও জানান তিনি।
তবে কিয়েভ এবং মস্কোর মধ্যে কীভাবে আলোচনা হতে পারে, সে বিষয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই মুখপাত্র কোনো ধারণা দেননি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
ইউক্রেইনের পূর্বে অবস্থিত দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের স্বাধীনতাকে চীন আদৌ স্বীকৃতি দেবে কী না, দিলেও তা কবে নাগাদ, সে বিষয়েও কথা বলতেও রাজি হননি ওয়েনবিন।
রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার ওপর শতাধিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, সেগুলো কাজ করেনি। নিষেধাজ্ঞা কেবল ভোগান্তিই বাড়ায়।