ভারতের কৃষকরা এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিতর্কিত তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে যে আন্দোলন করে আসছিলেন, তা সফল হতে চলেছে।
Published : 19 Nov 2021, 10:24 AM
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, শুক্রবার জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী চলতি মাসে শুরু হওয়া পার্লামেন্ট অধিবেশনেই আইন তিনটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
“আজ আমি আপনাদেরকে, পুরো দেশকে বলতে এসেছি, আমরা তিনটি কৃষি আইন প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ মাসের শেষদিকে পার্লামেন্টের যে অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে, সেখানে এ কৃষি আইনগুলো প্রত্যাহারের সাংবিধানিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে,” বলেছেন তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে পাস হওয়া বিতর্কিত এ তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে ভারতের হাজার হাজার কৃষক মাসের পর মাস দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থান নিয়ে তাদের প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন।
মোদীর ঘোষণার পর তাৎক্ষণিকভাবে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি।
ভারতের ২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার অর্থনীতির প্রায় ১৫ শতাংশই কৃষির উপর নির্ভরশীল; দেশটির ১৩০ কোটি জনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি এ খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিতর্কিত তিনটি আইন পাস হওয়ার পর এর প্রতিবাদ জানিয়ে কৃষকরা বলেছিলেন, নতুন এ কৃষি সংস্কার আইনগুলো ভারতের নিয়ন্ত্রিত বাজারব্যবস্থাকে ভেঙে দেবে এবং সরকারও ধীরে ধীরে নির্ধারিত মূল্যে গম ও ধান কেনা বন্ধ করে দেবে; যার ফলশ্রুতিতে তাদেরকে ফসল বেচতে বেসরকারি ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষিতে নামতে হবে।
আইনগুলো এভাবে জীবন-জীবিকাকে অনিশ্চিত অবস্থার দিকে ঠেলে দেবে দাবি করে ভারতের কৃষকরা আইনগুলো বাতিল, ফসল কিনতে সরকারের বাধ্যবাধকতা বহালসহ আরও বেশ কিছু দাবি জানিয়েছিলেন।
শুক্রবারের ভাষণে আইনগুলো প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে মোদী বলেছেন, ‘‘আমাদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। কিন্তু কৃষি আইনের সুফলের কথা কিছু কৃষককে আমরা বোঝাতে পারিনি।’’
আন্দোলনের পথ ছেড়ে কৃষকদের আবার ক্ষেতে ফিরতেও আবেদন জানান এ ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘‘আসুন, সব আবার নতুন করে শুরু করা যাক। এখন কাউকে দোষারোপের সময় নয়।’’
শিখ ধর্মীয় নেতা গুরু নানকের জন্মদিনে মোদীর কৃষি আইন প্রত্যাহারের ঘোষণাকে অনেক বিশ্লেষকই ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন বলে জানিয়েছে আনন্দবাজার।
তাদের ভাষ্য, কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে দিল্লির উপকণ্ঠে অবস্থানকারী কৃষকদের বড় অংশই পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। এদের মধ্যে শিখ এবং জাঠ জনগোষ্ঠীর সংখ্যাও অনেক। এদিকে আগামী বছরের শুরুতেই পাঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশে বিধানসভা নির্বাচন।
এ দুই রাজ্যে নির্বাচনে খারাপ ফল ভারতজুড়ে বিজেপির আধিপত্যে ‘চিড় ধরাতে পারে’, বলছেন অনেকে। যদিও সাম্প্রতিক এক জরিপে উত্তর প্রদেশে আগামী বিধানসভা নির্বাচনেও বিজেপিই ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছে বলে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।