ডার্ক চকলেটের উপকারিতা বেশি হলেও খেতে হবে পরিমাণ মতো।
Published : 18 Feb 2024, 11:53 AM
চকলেট কেবল সুস্বাদু বা বিলাসবহুল খাবার নয় এর রয়েছে নানান স্বাস্থ্যোপকারিতা।
তবে সব ধরনের চকলেট কি স্বাস্থ্যকর? এ নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্ক।
ডার্ক ও মিল্ক বা দুধের চকলেটের মধ্যে তুলনা করতে গেলে বিভিন্ন উপাদানের পার্থক্য দেখা যায়। এদের রয়েছে আলাদা উপকারিতা ও অপকারিতা।
এই বিষয়ে ভারতের খাদ্য পরিকল্পক এবং পুষ্টিবিদ দিব্বা গোপাল হেল্থ শটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ডার্ক চকলেটে কোকোর পরিমাণ বেশি, এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট-ও বেশি থাকে। তাই হৃদসংক্রান্ত রোগ দূরে রাখতে উপকারী। অন্যদিকে দুধের তৈরি চকলেট খেতে সুস্বাদু। এতে থাকে চিনি ও চর্বি।”
ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী
ডার্ক চকলেটের প্রধান উপাদান কোকোয়া। এতে প্রায় ৭০ শতাংশ বা তার বেশি কোকোয়া থাকে যা, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
দিব্বা বলেন, “মিষ্টি উপাদান ছাড়াও এতে থাকা কোকোয়া কিছুটা তিতা স্বাদ দেয়। এটা শরীরের অক্সিডেটিভ চাপের বিরুদ্ধে কাজ করে, প্রদাহ কমায় এবং হৃদরোগ ও কিছু ক্যান্সারের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।”
ডার্ক চকলেটের কয়েকটি উপকারিতা হল-
হৃদ-স্বাস্থ্য ভালো রাখে: ডার্ক চকলেটে রয়েছে ফ্লাভানয়েডস যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। ২০১৭ সালে ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের প্রকাশিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ডার্ক চকলেট এবং কোকোয়া খাওয়া খারাপ বা ‘এলডিএল’ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। যা সাধারণত স্থূলকায় বা অধিক ওজনের ব্যক্তিদের মাঝে দেখা যায়।
জ্ঞানীয় কার্যকারিতা বাড়ায়: ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্লাভানয়েডস স্নায়ু সুরক্ষক হিসেবে কাজ করে। এটি জ্ঞানীয় দক্ষতা বাড়ায় এবং বয়সের সাথে সাথে জ্ঞানীয় দক্ষতা হ্রাসের ঝুঁকে কমায়।
মন ভালো রাখে: ডার্ক চকলেটে আছে ‘এন্ডোর্ফিন্স’ ও ‘সেরেটোনিন’য়ের মত মন ভালো করা হরমোন সৃষ্টির ক্ষমতা। তাই এটি উদ্বেগ কমাতে এবং বিরক্তি হ্রাস করতে সহায়তা করে। ফলে মন ভালো থাকে।
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: ডার্ক চকলেটের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দেহকে ফ্রি রেডিকেল থেকে সুরক্ষিত রাখে, ক্ষতিগ্রস্ত কোষ সারিয়ে তোলে এবং অক্সিডেটিভ চাপ সম্পর্কিত রোগের ঝুঁকি কমায়।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে: দিব্বা গোপাল ব্যাখ্যা করেন, “ডার্ক চকলেটে শর্করার মাত্রা কম এবং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে পারে। তাই ওজন কমাতে বা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে এটি সহায়তা করে।”
তবে জেনে রাখা প্রয়োজন যে, ডার্ক চকলেটের এই উপকারিতাগুলো কেবল পরিমিত পরিমাণে গ্রহণ করলে পাওয়া যাবে।
অতিরিক্ত ডার্ক চকলেট খাওয়া বিভিন্ন ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে, যেমন- মূত্রবর্ধন, অনিদ্রা, ত্বকে অ্যালার্জি, হজমের সমস্যা এবং মাথা ব্যথা।
দুধের তৈরি চকলেট কি স্বাস্থ্যকর?
মিল্ক চকলেট বা দুধের তৈরি চকলেট হল- পূর্ণ কোকোয়া, কোকোয়া বাটার, চিনি এবং দুধের সংমিশ্রণ। যারা কিছুটা ক্রিমভিত্তিক মিষ্টি স্বাদ পছন্দ করেন মিল্ক চকলেট তাদের জন্যই।
এটা এন্ডোর্ফিন্স এবং সেরোটোনিন হরমোন নিঃসরণে সহায়তা করে। ফলে মন ভালো থাকে, মানসিক চাপ কমে।
এছাড়াও মিল্ক চকলেটে অল্প পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
দুধের তৈরি চকলেটে শর্করার মাত্রা ও চর্বির মাত্রা বেশি থাকায় ডার্ক চকলেটের মতো সমান উপকারী নয়। তবে সুষম খাবারের পাশাপাশি পরিমিত গ্রহণে স্বাস্থ্যের উপকার পাওয়া যায়।
ডার্ক চকলেট বনাম দুধের তৈরি চকলেট
দুই ধরনের চকলেটের স্বাদ ভিন্ন এবং এতে মিশ্রিত উপাদান ভিন্ন রকমের। তাই পার্থক্যও রয়েছে নানান দিক থেকে।
কোকোয়া: দুই ধরনের চকলেটেই কোকোয়া পাওয়া যায়। এটা ফ্লাভানয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ডার্ক চকলেটে কোকোয়ার মাত্রা বেশি এবং চিনির মাত্রা দুধের তৈরি চকলেটের তুলনায় কিছুটা কম।
দুধ: মিল্ক চকলেটে দুধ ও চিনির মিশ্রণ থাকায় তা একটি ক্রিমভিত্তিক স্বাদ দেয়। আর কোকোয়ার মাত্রা থাকায় পুষ্টি মূল্য ডার্ক চকলেটের তুলনায় কম।
চিনি: পুষ্টিগুণের বিবেচনায় ডার্ক চকলেটে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ডের মাত্রা বেশি। চিনি ও চর্বির মাত্রা দুধের তৈরি চকলেটের তুলনায় কম।
ল্যাক্টোজ অসহিষ্ণুতা: যাদের ল্যাক্টোজের প্রতি সংবেদনশীলতা রয়েছে তারা মিল্ক চকলেট খেলে কিছুটা অস্বস্তিতে পড়তে পারে। এক্ষেত্রে ডার্ক চকলেট খাওয়া নিরাপদ।
ক্যালোরি: কোকোয়া বাটার এবং দুধের উচ্চ চর্বি মি্ল্ক চকলেটে থাকায় এতে ক্যালরির মাত্রা বেশি। তাই সুষম খাবারের পাশাপাশি পরিমিত গ্রহণ করতে হয়। অন্যদিকে ডার্ক চকলেটে সাধারণত ক্যালরির মাত্রা কম থাকে।
কোনটা বেশি উপকারী?
পুষ্টিবিদ দিব্বা গোপালের মতে, “মিল্ক চকলেটের তুলনায় ডার্ক চকলেট স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে কোকোয়ার মাত্রা বেশি যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং কিছু নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যোপকার করে থাকে। যেমন- হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।”
এতে মিল্ক চকলেটের তুলনায় শর্করার মাত্রা ও ক্যালোরির মাত্রা কম।
তবে যে ধরনের চকলেট বাছাই করা হোক না কেনো, স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে গ্রহণ করতে হবে পরিমিত।
ছবি: পেক্সেলস ডটকম।
আরও পড়ুন
যে খাদ্যাভ্যাসে পেটের মেদ বাড়ে না