অনেকসময় স্বাস্থ্যকর খাবারও দেহে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে।
আর খাদ্যাভ্যাস হরমোনের ওপর প্রভাব রাখে। দেহ সক্রিয় রাখতে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। কারণ এটা দেহের রাসায়নিক বাহক হিসেবে কাজ করে।
ভারতের প্রত্যয়িত পুষ্টি প্রশিক্ষক তানিশা বাওয়া হেলদিশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে নানান রকম সমস্যার জন্ম নেয়। যেমন- পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রম বা পিসিওএস (নারীর দেহে পুরুষের হরমোন ‘অ্যান্ড্রোজেন’ বেড়ে যাওয়া), হাইপোথায়রয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজম ইত্যাদি।”
খাদ্যাভ্যাস দেহের ওপর প্রভাব রাখে। ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত ওজন বৃদ্ধি, ত্বকের সমস্যা বা ‘মুড সুইং’য়ের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
নির্দিষ্ট কিছু খাবার এসব সমস্যা আরও বাড়িয়ে তোলে।
গরমে কোল্ড কফি, ঠাণ্ডা মিষ্টান্ন, কাস্টার্ড, ফালুদা খেতে মজাদার হলেও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।
সয়া: “সয়াতে আছে ‘ফাইটোইস্ট্রোজেন’ নামক উদীয়মান বায়োঅ্যাক্টিভ উপাদান যা দেহে এস্ট্রোজেনের মতোই কাজ করে। যে কারণে নারীর দেহের ‘ডিম্বোস্ফোটন’ ব্যাহত হয়। ফলে প্রজনন স্বাস্থ্য হয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়”, বলেন তানিশা বাওয়া।
সয়া থেকে তৈরি টফু, সয়া দুধ এবং সয়া সস স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হলেও দেহের হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
দুগ্ধজাতীয় খাবার: তানিশা বলেন, “দুধ এবং দুধের তৈরি খাবার পরিপাকতন্ত্রে প্রদাহ সৃষ্টি করে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা তৈরি করতে পারে। অতিরিক্ত দুধ পান দেহে ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’য়ের মাত্রা বাড়ায় এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি সৃষ্টি করে।”
“তাই হরমোনের সমস্যা থাকলে দুধের তৈরি খাবার বাদ দেওয়াই ভালো”, পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদ।
পরিশোধিত শস্য: তানিশা বাওয়ার মতে, “খাবার তালিকায় পরিশোধিত শস্য যোগ করা রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বাড়ায়, যে কারণে ইন্সুলিন নিঃসরণ বাড়ে এবং ধীরে ধীরে দেহে এর প্রতিরোধী অবস্থা তৈরি হয়।”
চিনি বা যে কোনো কৃত্রিম মিষ্টি: কৃত্রিম মিষ্টি ও চিনিজাতীয় খাবার অন্ত্রের ব্যাক্টেরিয়ার ওপরে প্রভাব ফেলে ক্ষুধা বাড়ায় এবং হরমোনে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
চিনিও হরমোনের ভারসাম্য সৃষ্টি করে থাকে।
তাই অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার যেমন- বিস্কুট, কেক, ডোনাট, চকলেট ইত্যাদি বাদ দেওয়া উচিত। এগুলোর পরিবর্তে গুড়ের তৈরি খাবার খাওয়া যেতে পারে।
ক্যাফেইন: উচ্চ মাত্রায় ক্যাফেইন গ্রহণ যেমন- কফি, অ্যালকোহল ও চা- ঘুম চক্রে প্রভাব ফেলতে পারে এবং হরমোনে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করে।
গরমকালে ঠাণ্ডা কফির সঙ্গে আইসস্ক্রিম খেতে ভালোই লাগে। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফেইন খাওয়া দেহে কর্টিসোলের মাত্রা বাড়ায়।
কর্টিসোল মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন, যা হুমকির কারণ হতে পারে। তাই হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় ক্যাফেইন থেকে দূরে থাকা আবশ্যক।
আসল কথা হল
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খাবার নিয়ন্ত্রণে রাখার বিকল্প নেই। তাই খাবার নির্বাচনে যতটা সম্ভব সচেতন হতে হবে। মনে রাখতে হবে, নিজের স্বাস্থ্য নিজের হাতে।
আরও পড়ুন