প্রেমের হরমোন বাড়িয়ে দিতে পারে যৌনাকাঙ্ক্ষা

যৌন আকাঙ্ক্ষায় সমস্যা তৈরি করতে পারে ‘অক্সেটোসিন’- যা প্রেমের হরমোন নামেও পরিচিত।

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2019, 08:54 AM
Updated : 25 Sept 2019, 08:55 AM

‘হাইপার সেক্সুয়াল ডিসঅর্ডার’য়ের কারণে একজন মানুষের চিন্তায় সবসময় ঘুরপাক খেতে থাকে যৌনসঙ্গমের কথা। আর প্রতি মুহূর্তে সঙ্গমের অদম্য আকাঙ্ক্ষা তাকে তাড়া করে বেড়ায়।

এই সমস্যার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মস্তিষ্কের ‘অক্সেটোসিন’ হরমোনের মাত্রাতিরিক্ত সরবরাহ। যা ‘সোহাগ’ বা ‘লাভ’ অর্থাৎ প্রেমের হরমোন নামেও পরিচিত।  

‘হাইপার সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার’য়ে ভুগছেন এমন একাধিক নারী ও পুরুষকে নিয়ে গবেষণায় এই তথ্য জানা গেছে।

‘হাইপার সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার’ বা অতিরিক্ত যৌনআকাঙ্ক্ষা ‘কম্পালসিভ সেক্সুয়াল বিহেইভিয়র ডিজঅর্ডার’ নামেও পরিচিত।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এই সমস্যাকে ‘ইম্পালস-কন্ট্রোল ডিজওর্ডার’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বিশ্বব্যাপী প্রায় তিন থেকে ছয় শতাংশ মানুষ এই সমস্যায় ভোগেন বলে দাবি করেন সুইডেনের ‘উপসালা ইউনিভার্সিটি’র  গবেষকরা।

গবেষণার প্রধান উপসালা ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক আড্রিয়ান বোস্ট্রোম বলেন, “আমাদের উদ্দেশ্য ছিল ‘হাইপার সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার’য়ের পেছনে দায়ী ‘এপিজেনেটিক রেগুলেটরি মেকানিজম’ বা বংশগতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা। যাতে আমরা বুঝতে পারি অন্যান্য রোগের তুলনায় এর কোনো পৃথক বৈশিষ্ট্য আছে বা নেই।”

“আমাদের গবেষণাই প্রথমবারের মতো দেখিয়েছে যে ‘হাইপার সেক্সুয়ালিটি’ বা অতিরিক্ত যৌন আকাঙ্ক্ষার জন্য চিকিৎসা নিচ্ছেন তাদের মাঝে ‘ডিএনএ মেথিলেইশন’ এবং ‘মাইক্রো আরএনএ অ্যাক্টিভিটি’র উপস্থিতি এবং তাদের মস্তিষ্কে ‘অক্সেটোসিন’ হরমোনের প্রভাব।

স্টকহোমের ক্যারোলিন্সকা ইনস্টিটিউটে ‘অ্যান্ড্রোলজি/সেক্সুয়াল মেডিসিন গ্রুপ’য়ের গবেষকদের নিয়ে এই গবেষণাটি পরিচালনা করেন বোস্ট্রোম।

কোন শ্রেণির মেথিল (অ্যালকোহল) ডিএনএ’য়ের অণুতে রয়েছে তা জানার প্রক্রিয়া হল ‘ডিএনএ মেথিলেইশন’।

গবেষক দলটি মোট ৮,৮৫২ অংশের ‘ডিএনএ মেথিলেইশন’ পর্যবেক্ষণ করেছেন যেগুলো সম্পর্ক-যুক্ত ছিল কাছাকাছি অবস্থিত ‘মাইক্রো-আরএনএ’য়ের সঙ্গে। উদ্দেশ্য ছিল নমুনাগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করা।

আরএনএ বা রিবোনিউক্লেইক অ্যাসিড হল জীবকোষে থাকা দুটি জটিল যৌগের একটি, যার প্রধান কাজ হল ডিএনএ’র থেকে প্রাপ্ত তথ্য বহন করে প্রোটিনের সংশ্লেষণ নিয়ন্ত্রণ করা। আরএনএ’র অণু হল মাইক্রো-আনএনএ।

এই পর্যবেক্ষণ থেকে পাওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখা হয় আরও ১০৭ জন মানুষের তথ্যের সঙ্গে, যাদের মধ্যে ২৪ জন ছিলেন মদ্যপানে আসক্ত। মাদকাশক্তির সঙ্গে রোগের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা সেটা মিলিয়ে দেখার উদ্দেশ্য ছিল এই গবেষণা।

ফলাফলে দেখা যায়, ‘হাইপার সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার’য়ে আক্রান্ত ব্যক্তির দুই অংশের ‘ডিএনএ’তে পরিবর্তন আসে।

বিশ্লেষণে বলা হয়, মস্তিষ্কে যে জীনগুলো অতিমাত্রায় ছড়ানো এবং ‘অক্সেটোসিন’য়ের মাত্রা নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে জড়িত, ‘মাইক্রো আরএনএ’ সেগুলোকেই আক্রমণ করে।

আগের গবেষণাগুলোতে দেখা গেছে, সামাজিকভাবে জুটি বাঁধা, যৌনসঙ্গমের মাধ্যমে গর্ভধারণ এবং নারী-পুরুষের হিংস্র ব্যবহারের সঙ্গে ‘অক্সেটোসিন’ হরমোনের সম্পর্ক আছে।

গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য এই রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় উপকারী প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন গবেষকরা।

সুইডেনের ‘উমেয়া ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক জুসি জোকিনেন বলেন, “‘হাইপার সেক্সুয়াল ডিজঅর্ডার’য়ের পেছনে ‘অক্সেটোসিন’ ও ‘মাইক্রো আরএনএ’য়ের ভূমিকা নিয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন আছে। তবে আমাদের গবেষণা বলে, ওষুধ আর ‘সাইকোথেরাপি’য়ের মাধ্যমে ‘অক্সেটোসিন’য়ের প্রভাব দমিয়ে রাখার উপকারী দিকগুলো নিয়ে গবেষণা অলাভজনক হবে না।”

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন