চেয়ারে বসে কাজ করার ফাঁকে হাঁটু ভাঁজ করে বসার অভ্যাস করলে নানান উপকার পাওয়া যায়।
Published : 03 Nov 2022, 01:51 PM
যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা করেছেন তারা ‘স্কোয়াট’ শব্দটির সঙ্গে নিশ্চয়ই পরিচিত। বাংলায় যাকে বলে উঠবস করা।
ছোটবেলায় কান ধরে উঠবস করা থেকে আমাদের ‘স্কোয়াটিং’য়ের শুরু। কিন্তু খেয়াল করলে দেখবেন, ছোটবেলায় দুই হাঁটু ভাঁজ করে বুকে ঠেকিয়ে দিয়ে যতটা আরামের বসতে পারতেন, এখন আর তা পারেন না।
ব্যায়ামাগারে এটাকেই বলা হয় ‘ডিপ রেস্টিং স্কোয়াট’ বা ‘ডিপ বডিওয়েট স্কোয়াট’।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ফিটনেস অ্যান্ড ওয়েলনেস কমিউনিটি কুদোস’য়ের প্রশিক্ষক জোয়ি থার্মান ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “এই ভঙ্গিতে বসা অবস্থায় নিতম্ব আর ‘গ্লুটস’ বা পশ্চাতের পেশি থাকে হাঁটুর নিচে, দুই পায়ের পাতা সাবলীলভাবে মাটিতে থাকে সমতলভাবে। পেশির ওপর খুব বেশি চাপ পড়ে না এই ভঙ্গিতে বসলে।”
মানবদেহের জন্য বসার এই ভঙ্গি একদম নিরাপদ। যে কারণে ছোট শিশুরা নিজেই এই ভঙ্গিটা শিখে নেয়। মাটিতে পড়ে যাওয়া কিছু তুলতে গিয়ে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষগুলো এই ভঙ্গিতেই বসে। এমনকি সন্তান প্রসবের ক্ষেত্রে এই ভঙ্গিতে বসলে ‘পেরিনিয়াল টিয়ার্স’ হয় সবচাইতে কম।
তবে আমাদের অলস জীবনযাত্রা আর চেয়ারের প্রতি পরিপূর্ণ নির্ভরতার কারণে অনেকেই এভাবে বসার ক্ষমতা হারান।
থার্মান বলেন, “ব্যবহার না করলে ক্ষমতা হারায় এই কথা শরীরের নড়াচড়ার ক্ষমতার জন্য খুব ভালোভাবে প্রযোজ্য। বয়স যত বাড়ে, নড়াচড়া কমে, বসে থাকার মাত্রা বাড়ে। এতে শরীরের বিভিন্ন স্থানের নরম ‘টিস্যু’ শক্ত হতে থাকে। হাড়ের জোড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকা জায়গাগুলো ভরাট হয়ে যায় এবং আমাদের স্নায়ুতন্ত্র পুরোটুকু নড়তে না পারার পরিস্থিতিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়ে সেটাকেই স্বাভাবিক ধরে নেয়।”
ডিপ রেস্টিং স্কোয়াট’য়ের উপকারিতা
দুই হাঁটু ভাঁজ করে বুকে ঠেকিয়ে বসতে পারার একটি বড় উপকারিতা হল, নড়াচড়ার ক্ষমতার উন্নয়ন। বিশেষ করে পায়ে গোড়ালির নড়াচড়া।
থার্মান বলেন, “অনেকেরই পায়ের গোড়ালি ততটুকু নড়াচড়া করতে পারে না যতটুকু স্বাভাবিকভাবে পারা উচিত। যে কারণে দৈনন্দিন কাজে যে নড়াচড়া করতে হয় সেই কাজে আহত হওয়ার আশঙ্কা কমে না।”
তিনি আরও বলেন, “হাড়ের জোড়গুলো স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করাতে পারলে পেশির ওপর চাপ কম পড়ে, ফলে ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে। নিজের সন্তান বা সন্তানের সন্তানকে কোলে তুলে নেওয়ার তফাৎটা চিন্তা করুন। কোমরে ব্যথা পাওয়ার আতঙ্ক ছাড়াই যদি নাতি নাতনীদের কোলে তুলে নিতে পারেন তাহলে কতই না ভালো হয়।”
“ব্যায়াম করার ক্ষেত্রেও এর উপকারিতা আছে। ধরা যাক ‘পাওয়ার লিফ্টার’দের কথা। নিচু হয়ে কোনো ব্যথা ছাড়াই যদি ওজনটা তুলে আনা যায় একটানে তবে তাদের জন্য খুবই সুবিধা হয়। আর সেই সুবিধা দিতে পারবে ‘ডিপ রেস্টিং স্কোয়াট’। কারণে এতে শরীরের পেছন দিকটা শক্তিশালী হয়,” বলেন এই ব্যায়াম প্রশিক্ষক।
যেভাবে করতে হয় ‘ডিপ রেস্টিং স্কোয়াট’
থার্মান বলেন, “দুই পায়ের পাতার মাঝখানে আপনার নিতম্বের সমান পরিমাণ জায়গা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ান। এবার কাঁধ সোজা রেখে ধীরে ধীরে হাঁটু ভাঁজ করে নিচু হয়ে বসতে হবে। নিতম্ব এমনভাবে নিচে নেমে যাবে যেন আপনি খুব নিচু একটা চেয়ার বা পিঁড়িতে বসতে যাচ্ছেন।”
কোনো ব্যাথা কিংবা অস্বস্তি ছাড়া যতটা নিচে যাওয়া সম্ভব যেতে হবে। শুরুতে ধীরে করতে হবে। এভাবে বসাটা কোনোভাবেই ব্যথা সৃষ্টি করা উচিত নয়।
যে অবস্থায় ব্যথা অনুভূত হবে সেখানে থেমে সামলে নিন। হাত দিয়ে কিছু একটা ধরা এমন কিছু হাতের নাগালে থাকতে হবে।
হাঁটু ভাঁজ করা বসা অবস্থায় ১০ সেকেন্ড থাকার চেষ্টা করে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। সারাদিনে এভাবে করতে হবে ছয়বার।
থার্মান বলেন, “অনেকক্ষণ চেয়ারে বসে কাজ শেষ করে এই ব্যায়ামের অভ্যাস করা উপকারী। প্রতিবার সময় বাড়ানোর চেষ্টা করতে হবে। ৩০ সেকেন্ড স্থায়ী করতে পারলে অনেক ভালো।”
আরও পড়ুন