প্রতিদিন সঞ্চয় করার পন্থা

খরচ কমানোর স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা সহজ কাজ নয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2022, 11:51 AM
Updated : 20 Nov 2022, 11:51 AM

অর্থ কোথায় খরচ হচ্ছে তা জানতে না পারলে সাশ্রয়ী হওয়া যাবে না।

অথচ সাশ্রয়ী হওয়ার চিন্তা করলে প্রথমেই মাথায় আসে বড় খরচগুলোর কথা। তবে দৈনন্দিন জীবনযাত্রার খুটিনাটি খরচগুলোতে সাশ্রয়ী হওয়ার অভ্যাস রপ্ত করতে পারলে মাসের শেষে খানিকটা সঞ্চয় করা সম্ভব হয়।

সকালের চা কফি ঘরে বানানো

সকালে ঘর থেকে বেরিয়ে অফিস কিংবা অন্যান্য গন্তব্যে পৌঁছানোর মধ্যে হয়ত এক বা একাধিক কাপ চা-কফি পান করছেন নিয়মিত। সারাদিনে আরও অনেক কাপ চা, কফি পান করা হবে।

ক্যালিফোর্নিয়ার আর্থিক-বিষয়ক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আর্ন্ড মিডিয়া’র আর্থিক সহযোগী সম্পাদক হিরন্ময়ি শ্রিনিভাসন রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সারাদিনের চা কফির বন্দোবস্ত করা না গেলেও অন্তত সকালের চা কফিটা বাসায় বানিয়ে পান করলে কিছুটা সাশ্রয় হয়ই।”

“দোকানের চা, কফির হিসাব করলে যে সাশ্রয় হবে তা দিয়ে সহজেই দুজন মানুষের এক সপ্তাহের কাঁচা বাজার করা যায়”, মন্তব্য করেন হিরন্ময়ি।

আর যদি প্রতিদিন রেস্তোরাঁর কফি পান করার অভ্যাস থাকে তবে সেটা বাদ দিলে কয়েক হাজার টাকা সাশ্রয় হবে।

এখন রেস্তোরাঁর কফি আর ঘরে বানানো কফির স্বাদের মধ্যে তফাৎটাকে বিবেচনায় আনা যৌক্তিক। সেক্ষেত্রেও উপায় আছে।

ভালোভাবে কফি বানানো শিখতে হবে এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কিনে নিতে পারেন।

চা, কফি যেহেতু আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় পানীয়, তাই তা ভালোভাবে বানানোর জন্য কেনা যন্ত্রটি দীর্ঘমেয়াদে সাশ্রয়ী হবে। 

ব্যবহারের পর বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা

ল্যাপটপ কিংবা ফোনের চার্জার, কম্পিউটারের বৈদ্যুতিক সংযোগ, ওভেন, এসি ইত্যাদি ব্যবহার করা না হলেও দিনের পর দিন বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখার অভ্যাস অনেকের আছে। হয়ত ভাবছেন এতে আর কতটুকুই বা বিদ্যুৎ খরচ হয়।

একটা হিসাব করলে হয়ত কিছুই না। তবে ঘরে যদি এমন কয়েকটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র টানা বিদ্যুত সংযোগে থাকে তখন বিদ্যুৎ খরচটা বেড়ে যায়।

হিরন্ময়ি বলেন, “তাই ব্যবহারের পর বৈদ্যুতিক যন্ত্রের সংযোগ খুলে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে। আর এতে অনেক দূর্ঘটনা থেকে বাঁচা যায়।”

ওয়াশিং মেশিন ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া

ওয়াশিং মেশিনে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে কাপড় ধোয়া এবং তা ‘ড্রায়ার’রে না শুকিয়ে বাইরে মেলে দিয়ে শুকানোর অভ্যাস করলে অনেক বিদ্যুত সাশ্রয় হবে।

ধোয়া কাপড় ওয়াশিং মেশিনে না শুকালে ওয়াশিং মেশিনের বিদ্যুত খরচের ৯০ শতাংশই কমিয়ে ফেলা যায়।

প্রতিদিনের খরচের হিসাব করা

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সারাদিন এক টাকা থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত যাই খরচ করা হোক, সেটার একটা তালিকা করা যেতে পারে প্রতিদিন।

হিরন্ময়ির ভাষায়, “হাতের স্মার্টফোনটিতে এই কাজের জন্য অনেক অ্যাপ পেয়ে যাবেন। মাস শেষে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন কোন কাজে বাড়তি খরচ করছেন কিংবা কোথায় একটু কিপটেমি করা যায়।”

অর্থ কোথায় খরচ হচ্ছে তা জানতে না পারলে সাশ্রয়ী হওয়া যাবে না।

হুট করে কেনাকাটা

কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই কেনাকাটা করার অভ্যাস থাকলে সাশ্রয়ী হওয়া খুবই কঠিন হবে।

হিরন্ময়ি পরামর্শ দেন, প্রতি মাসের জন্য খরচের হিসাব তৈরি করে তাতে স্থির থাকতে হবে। বিপদ না হলে সেই হিসাবের বাইরে যাওয়া যাবে না।

আবার খরচের হিসেবটাও বাস্তবিক হতে হবে। প্রয়োজনীয় খরচগুলো চাইলেই বাদ দিয়ে দেওয়া যায় না।

এক্ষেত্রে একটি উপায় হল, হুট করে কিছু পছন্দ হলে তা কিনতে মন চাইলে ৩০ দিন অপেক্ষা করা। যা কিনতে চাচ্ছেন তা এই ৩০ দিনের মধ্যে যদি প্রয়োজন না হয় তবে বুঝতে হবে সেটা আপনার দরকার নেই। 

ব্যবহার করছেন এমন জিনিসগুলো বেচে দিন

প্রযুক্তি আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কল্যাণে আজকাল যে কেউ ঘরে থেকেই তার অপ্রয়োজনীয় কোনো জিনিস আরেকজনের কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন। 

আর সবার ঘরেই এমন কিছু না কিছু থাকেই যা ব্যবহার করা হয় না। বরং বিক্রি করে দিলে কিছু অর্থ হাতে আসা সম্ভব।

ঘরে খাওয়া

যতটা সম্ভব বাইরে খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করে ঘরে রান্না করে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলার চেষ্টা করা উচিত। এই পদ্ধতিতে অনেক সাশ্রয় করা সম্ভব এবং এতে স্বাস্থ্যও ভালো থাকবে।

হিরন্ময়ি বলেন, “প্রতি সপ্তাহে একদিন রাখুন পুরো সপ্তাহের বাজার করার জন্য। সম্ভব হলে মাসের বাজার একবারেও করতে পারেন। বেশি পরিমাণে সদাই কিনলে খরচ কিছুটা কমানো যায়। তবে ঘরের জন্য সদাই কিনে যদি বাইরে খেতে যান তবে খরচ হবে দ্বিগুন।”

তাই যতটা সম্ভব ঘরে রান্না করা খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

খুচরা পয়সার জন্য মাটির ব্যাংক

দিনের শেষে পকেটে হয়ত বেশ কয়েকটা পয়সা থেকে যায়। সেগুলো একটা মাটির ব্যাংকে ফেলার অভ্যাস করা যেতে পারে।

আবার বেতন পেয়েই একটা বড় নোট মাটির ব্যাংকে রাখার প্রতিশ্রুতিও খারাপ নয়।

হিরন্ময়ির ভাষায়, “যেটাই পন করুন তাতে দৃঢ় হতে হবে, মেনে চলতে হবে। এভাবে দুই টাকা, পাঁচ টাকা করে সাশ্রয়ও একটা সময় বড় অংকে পরিণত হবে।”

আরও পড়ুন

Also Read: ব্যয়বহুল প্রেম সাশ্রয়ী করতে

Also Read: ধনী হওয়ার স্বপ্নে সর্বস্ব হারায় যেভাবে

Also Read: শিশুকে শৃঙ্খলা শেখানোর উপায়