ধনী হওয়ার স্বপ্নে সর্বস্ব হারায় যেভাবে

‘আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ’ হতে গিয়ে আঙ্গুলটাই যেন না হারায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Oct 2020, 05:59 AM
Updated : 28 Oct 2020, 05:59 AM

জীবনে অর্থের প্রয়োজন যেন কখনই ফুরায় না। বেঁচে মৌলিক চাহিদাগুলো পূরণ করতে গেলেও এযুগে বেশ বড় সংখ্যায় উপার্জন করতে হয়। আর আর্থিক সচ্ছলতা অর্জন করতে কে না চায়।

তবে জীবনের যেকোনো ক্ষেত্রেই উন্নতি করতে হলে সময়, মেধা, শ্রম সবই ব্যয় করতে হবে, আর্থিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে হয়ত একথা সবচাইতে বেশি প্রযোজ্য।

তাই আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হতে গেলে বেশিরভাগ সময়ই আপনার আঙ্গুলটাই হারাতে পারেন।

ব্যবসা ও বিনিয়োগ-বিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে জানানো হল রাতারাতি ধনী হতে গিয়ে সারাজীবনের সঞ্চয় হারানোর কিছু ফাঁদ সম্পর্কে। 

লটারির টিকেট: ভাগ্য পরীক্ষার জন্য দুএকটা লটারির টিকেট কিনলেই যে মস্ত ভুল হয়ে যাবে তা নয়। তবে মনে রাখা উচিত, তা থেকে বড় কোনো পুরষ্কার পেতে হলে আপনাকে প্রচণ্ড ভাগ্যবান হতে হবে। কতটা ভাগ্যবান তা পরিমাপ করতে পারবেন লটারিতে পুরষ্কার জেতার সম্ভাবনার পরিসংখ্যান ঘাটলে।

উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক যুক্তরাষ্ট্রের বহুল জনপ্রিয় ‘পাওয়ারবল’ লটারির কথা। এতে ‘জ্যাকপট’ জেতার সম্ভাবনা হল প্রায় ২৯ কোটি ২২ লাখ ১ হাজার ৩৩৮ বারের মধ্যে ১ বার। উল্কাপিণ্ডের আঘাতে একজন মানুষের মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনাও এর চাইতে ভালো, প্রায় সাত লাখের মধ্যে একবার।

একটা টিকেটের বদলে দুইটা থেকে দুই লাখ টিকেট কিনেও প্রথম পুরষ্কার পাওয়ার সম্ভাবনায় তেমন কোনো পরিবর্তন আসে না। অথচ এই দুসাধ্যকে বধ করতে গিয়ে অনেকেই নিজের সারাজীবনের সঞ্চয় বিনিয়োগ খুইয়ে বসেন।

কেতাদুরস্ত পোশাক: পোশাক মার্জিত সুন্দর হওয়ার গুরুত্ব নতুন করে বলার প্রয়োজন নেই। ভালোমানের পোশাক কিনতে হলে ভালো অংকের পয়সা দিতে হবে সেটাই স্বাভাবিক। আর আর্থ-সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখার পেছনেও পোশাকের বড় ভূমিকা আছে। তবে মাসে লাখ টাকা উপার্জন করলেই যে লাখ টাকার ঘড়ি পরতে হবে, কয়েক কোটি টাকার গাড়ি চড়তে হবে এমনটা জরুরি নয়।

হাল ফ্যাশনের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে আয়ের তুলনায় পোশাক পরিচ্ছদে অতিরিক্ত ব্যয় আপনার জীবনযাত্রাকে ব্যয় বহুল করে তুলবে। একদিনে না হলেও এমন জীবনযাত্রা চলতে থাকলে বিপুল মাত্রার সেই অপব্যয় একদিন বিপদ ডেকে আনবে।  

না বুঝেই ব্যবসা: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইউ.এস সেনসান ব্যুরো’য়ের প্রতিবেদন বলে প্রতিবছর সেদেশে চালু হয় প্রায় চার লাখ নতুন ব্যবসা। আর বন্ধ হয় যায় প্রায় চার লাখ ৭০ হাজার ব্যবসা। আর তা সেই সময়ে যখন কোনো মহামারী নেই, অর্থনীতির চাকা সচল।

একজন সফল উদ্যোক্তা হতে হলে শুধু অভিনব উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। সেই নতুন উদ্যোগ থেকে তৈরি হওয়া পণ্য বা সেবা গ্রহণের যথেষ্ট ক্রেতা থাকতে হবে। সেই সঙ্গে বিনিয়োগ করার সময় থেকে শুরু করে তা থেকে উপার্জন আসা পর্যন্ত ব্যবসা টিকিয়ে রাখার আর্থিক প্রস্তুতিও থাকতে হবে।

শেয়ার বাজার: সবার জন্য শেয়ার বাজার নয়, আর সেখান থেকে মুনাফা বের করে আনা এতটাও সহজ নয়, এই সত্যটাকে মেনে নিতে হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল সিপিএ ফাইনান্সিয়াল লিটারেসি কমিশন’য়ের সদস্য সিপিএ শন স্টেইন স্মিথ বলেন, “বর্তমান সময়ের পুঁজি বাজারে বিনিয়োগ করে বড় ধরনের মুনাফা পাওয়া একজন সাধারণ মানুষের জন্য অত্যন্ত জটিল ও ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের সফলতার ইতিহাস উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করে না। আর প্রযুক্তিগত উন্নয়ন এই বিষয়টাকে আরও জটিল ও অনিশ্চিত করছে প্রতিনিয়ত।”

সর্বস্ব বিনিয়োগ: ব্যবসা, পুঁজি বাজার কিংবা যেকোনো বিনিয়োগের ক্ষেত্রেই ঝুঁকি থাকবে। ঝুঁকি বেশি হলেই সেই বিনিয়োগ সফল হলে বড় মুনাফা আসে। তাই যেখানেই বিনিয়োগ করুন না কেনো, শুধু মোটা অংকের মুনাফা দেখে নিজের সর্বস্ব বিনিয়োগ করা হবে ভয়ংকর নির্বুদ্ধিতা। কারণ বিনিয়োগে আশানুরুপ মুনাফা না আসলে কিংবা ব্যবসায় লোকসান হলে খোয়াতে হবে সবকিছুই। উল্টো দেনার দায় ঘাড়ে চাপতে পারে।

পড়ে সই করুন: যেকোনো বিনিয়োগ, লেনদেন, চুক্তির পরিষ্কার ও নিখাদ অঙ্গিকারনামা বা তদ্রুপ আইনসিদ্ধ কাগজপত্র থাকা উচিত। আর আইনসিদ্ধ এই কাগজগুলো সাক্ষর বা আঙুলের ছাপ যাই দিন না কেনো, কাগজে কি লেখা আছে তা আপনাকে পরিষ্কারভাবে জানতে হবে, বুঝতে হবে। নিজে বুঝতে যদি না পারেন তবে আপনার লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত নয় এমন কোনো বিশ্বস্ত তৃতীয় পক্ষকে সঙ্গে নিন লেনদেনের খুঁটিনাটি, শর্তের মারপ্যাঁচগুলো বোঝার জন্য। আর এই লেনদেনে লাভ লোকসানের ভাগাভাগি, মতবিরোধ সমাধানের উপায়, দায়িত্বের বন্টন ইত্যাদি সকল খুঁটিনাটি বিষয় চুক্তিপত্রেই থাকা জরুরি।  

প্রতারণার ফাঁদ: অর্থ নিয়ে কত ধরনের প্রতারণা আর প্রতারক আছে তা গুনে শেষ করা সম্ভব নয়। প্রতিদিনই নিত্যনতুন ফাঁদ সৃষ্টি হচ্ছে।

একদিন ই-মেইল খুলে দেখতে পেলেন আপনি কয়েক লক্ষ ডলার জিতেছেন, পেতে হলে দিতে হবে ব্যাংক হিসেবের বিভিন্ন তথ্য। কেউ ফোন করে বলছে, ভাই আপনার বিকাশ নম্বরে টাকা চলে গেছে, দয়া করে যদি পাঠিয়ে দেন। মোবাইলে ম্যাসেজ এল, “ভাইয়া, খুব বিপদে পড়েছি, জরুরি কিছু টাকা বিকাশ করুন। ফেইসবুকে কমদামে কোনো পণ্য বিক্রির বিজ্ঞাপন, যেখানে কিছু টাকা দিতে হবে অগ্রিম। বিনিয়োগে অস্বাভাবিক মুনাফা অর্জনের সুযোগ। অমুক প্রতিষ্ঠানের অংশীদার হওয়ার সুযোগ।

এসবই প্রতারণা। অর্থ উপার্জন কখনই সহজ ছিল না, ভবিষ্যতেও সহজ হবে না। বিনিয়োগে সবসময় ঝুঁকি থাকবে। তবে কোনো ঝুঁকিটা স্বাভাবিক আর কোনটা অস্বাভাবিক সেটা বুঝতে হবে। তাই যেকোনো লোভনীয় সুযোগ লুফে নেওয়ার আগে সন্দেহপ্রবণ হতে হবে। যত বেশি লোভনীয়, সন্দেহটাও ততই প্রবল হওয়া উচিত।

বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত একা নেওয়াটা সবসময় বোকামি। বিষয়গুলো বোঝে এবং বিশ্বাস করা যায় এমন মানুষের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।

আরও পড়ুন