সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে গেলও বিশেষজ্ঞরা বলছেন প্রাকৃতিক উপাদান বোটক্সের বিকল্প হতে পারে না।
Published : 10 Apr 2025, 02:53 PM
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সম্প্রতি নতুন কিছু প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। প্রাকৃতিক উপাদান দিয়েই কীভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া যায়, সে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে অনেক ভিডিও এবং রিলসে।
এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোর মধ্যে কলার খোসা এবং তিসির বীজ বা ফ্ল্যাক্স সিড উল্লেখযোগ্য।
তবে এই উপাদানগুলো কি সত্যিই বোটক্সের বিকল্প হতে পারে?
বোটক্স বলতে যা বোঝায়
বোটক্স একটি চিকিৎসা পদ্ধতি, যেখানে ‘বোটুলিনাম টক্সিন’ নামক পদার্থ ত্বকের নিচে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়।
সিএনএন ডটকম’য়ে এই বিষয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, এটি মুখের মাংসপেশিগুলোকে সাময়িকভাবে অবশ করে দেয়, যার ফলে বলিরেখা কমে যায় এবং ত্বক মসৃণ হয়।
তবে, বোটক্সের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে এবং এটি ব্যয়বহুল।
প্রাকৃতিক বোটক্স: কলার খোসা ও তিসির বীজ
সামাজিক মাধ্যমে কিছু প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার যে পদ্ধতি সম্পর্কে জানানো হচ্ছে, সেটাকে অনেকেই বোটক্সের প্রাকৃতিক বিকল্প হতে পারে বলে দাবি করছেন।
কলার খোসা এবং তিসির বীজ ব্যবহার করে কীভাবে প্রাকৃতিক বোটক্স করা যায় তার বিস্তারিত অনেকে জানাচ্ছেন।
ত্বকের যত্নে কলার খোসা
কলার খোসায় লুটেইন নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি একটি প্রাকৃতিক ক্যারোটিনয়েড যৌগ, যা উদ্ভিদ-জগতে পাওয়া যায়। যা ত্বককে আর্দ্র করতে এবং বলিরেখা কমাতে সহায়ক হতে পারে। পাশাপাশি সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকেও ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।
সিএনএন ডটকম’য়ের ফ্যাশন ও সৌন্দর্য-বিষয়ক সাংবাদিক কেইটি চিত্রাকর্ন প্রতিবেদনে জানান, কলার খোসার অভ্যন্তরীণ অংশ ত্বকে মাখার পর ত্বক মসৃণ ও উজ্জ্বল হয়।
এর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য ব্রণ কমাতে সহায়ক। ত্বকে নিয়মিত কলার খোসা ব্যবহারে ব্রণের দাগও অনেকটাই কমতে পারে।
তিসির বীজ বা ফ্লাক্স সিড: ত্বকে ব্যবহারের উপকারিতা
রয়েছে উচ্চমাত্রার ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সহায়ক হতে পারে। কিছু ব্যবহারকারী তিসির বীজের জেল ব্যবহার করে ত্বকে টানটানভাব ও মসৃণতা অনুভব করেছেন।
তিসির বীজ, ত্বকের সুস্থতা ও সৌন্দর্যের জন্য প্রাকৃতিক উপাদান হিসেবে সুপরিচিত। এতে রয়েছে ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ফাইটোকেমিকেল এবং লিগনান যৌগ।
তিসি বীজের প্রধান উপাদান ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস, যা ত্বকের প্রদাহ কমাতে ভালো কাজ করে। ব্রণ, একজিমা এবং অন্যান্য ত্বকের প্রদাহজনিত সমস্যাও কমাতে পারে। এছাড়া ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখার পাশাপাশি স্থিতিস্থাপকতা বাড়ায়, যা বলিরেখা প্রতিরোধেও গুরুত্বপূর্ণ।
তিসির বীজে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমূহ ত্বকের কোষকে ‘ফ্রি র্যাডিকেলস’য়ের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে। ফলে ত্বকের বার্ধক্য প্রক্রিয়া ধীর হয় এবং ত্বক উজ্জ্বল ও স্বাস্থ্যকর থাকে।
ফাইটোকেমিক্যাল ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতে সহায়ক। ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও টানটানভাব বজায় রাখতে এই উপাদান কার্যকর।
তিসির জেল বা তেল সরাসরি প্রয়োগ করলে ত্বকের আর্দ্রতা বৃদ্ধি পায় এবং রুক্ষতা কমে। এটি ত্বককে মসৃণ ও নমনীয় করে তোলে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো হয়।
তবে তিসি বীজ ব্যবহারের আগে ত্বকের ছোট একটি অংশে অ্যালার্জি পরীক্ষা করে নেওয়া উচিত। যাতে কোনো নেতিভাচক প্রতিক্রিয়া দেখা না দেয়।
সিএনএন ডটকম-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ত্বক বিশেষজ্ঞ মুনীব শাহ বলেন, “তিসির বীজ ও কলার খোসার মতো অনেক প্রাকৃতিক উপাদান আছে যা ত্বকের জন্য উপকারী হতে পারে। তবে এগুলোকে বোটক্সের বিকল্প বলা যাবে না।”
কলার খোসা এবং তিসির বীজের মাধ্যমে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পদ্ধতিগুলো সামাজিক মাধ্যমে জনপ্রিয়তা পেলেও বোটক্সের মতো পেশাদার চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর পুরোপুরি বিকল্প হিসেবে এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলোকে বিবেচনা করা উচিত নয় বলে এই বিশেষজ্ঞরা মত দেন।
তাই এসব ব্যবহার করার আগে সতর্কতা, প্রয়োজন ও পরিমাণ সবই বিবেচনায় রাখা উচিত।
আরও পড়ুন