ত্রিশ বছর কিংবা তিন মাসের সম্পর্ক- বন্ধন অটুট রাখতে নিজেদের মধ্যে নিরীক্ষা চালানো জরুরি।
Published : 05 Jan 2025, 01:51 PM
হিসাবের ভুলভ্রান্তি বা সমস্যা চিহ্নিত করতে যেমন ‘অডিট’ করা হয়, তেমনি সম্পর্কের মাত্রা ঝালিয়ে নিতেও নিরীক্ষার প্রয়োজন হয়।
তবে সেটা অবশ্যই জেরার মুখের ফেলে দেওয়া নয়।
এই বিষয়ে ‘শিকাগো স্কুল অফ প্রফেশনাল সাইকোলজি’র খণ্ডকালিন অধ্যাপক ও মনোবিজ্ঞানী ড. প্যাট্রিস লেগয় ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “রিলেশনশিপ অডিট’ বা সম্পর্কের নিরীক্ষা করা মাঝেমধ্যেই জরুরি। কারণ মনে করা হয় সম্পর্কে অন্তরীণ সমস্যাগুলো প্রায় সময় এড়িয়ে যাওয়া হয়, ভাবনাটা এমন যে সমাধান এমনিতেই হয়ে যাবে। তবে কোনো সমস্যাই ভোজবাজীর মতো উবে যায় না।”
আর নিরীক্ষার বিষয়টা এত জটিল করারও দরকার নেই। একটা সময় ধরে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে হবে, কোন বিষয়টা কাজ করছে, কোনটা করছে না। আর সেটা খুবই সাধারণভাবে দুজন মিলে পার্কে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা ছুটির দিনে বিকেল সন্ধ্যায় হালকা আলাপ আলোচনার মধ্যেই করা সম্ভব।
এই পরামর্শ দিয়ে ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের মনস্তত্ত্ববিদ সুসাল অ্যালবার্স একই প্রতিবেদনে বলেন, “যদি সম্পর্কে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা না হয়, তবে সেগুলো ধীরে ধীর বরফের মতো জমাট বাঁধতে থাকে।”
যেভাবে সম্পর্কের নিরীক্ষা চালাতে হবে
সময় নির্ধারণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ। কাজের ব্যস্ততা যাচ্ছে বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে উদ্বিগ্ন- এমন পরিস্থিতিতে সম্পর্কের নিরীক্ষা চালানো যাবে না। দুজনকেই নিরুত্তেজ থাকতে হবে।
লেগয় পরামর্শ দিতে গিয়ে বলেন, “প্রথমে মনে হতে পারে মুখোমুখি বসে আলাপ করবেন। তবে আমি বলবো, পাশাপাশি বসে যেভাবে মানুষ গল্প করে সেভাবেই কথাবার্তা চালাতে হবে। হতে পারে সেটা পার্কে হাঁটতে হাঁটতে কিংবা রেস্তোরাঁয় বসে খেতে খেতে।”
“আর এজন্য বিশাল কোনো প্রস্তুতিরও প্রয়োজন নেই। বিশাল কোনো ফর্দ নিয়েও বসতে হবে না। শুধু কী কী বিষয় নিয়ে কথা বলা জরুরি সেগুলো টুকে নিয়ে আলাপ শুরু করাই হবে ভালো”- বলেন এই মনোবিদ।
নিরীক্ষার জন্য যেভাবে কথা শুরু করতে হবে
সব ভালো যার শেষ ভালো- কথাটার উল্টো পদ্ধতি কাজ করবে এখানে। অর্থাৎ ভালো কিছু বলে আলোচনা শুরু করতে হবে।
এই বিশেষজ্ঞদ্বয় তাই পরামর্শ দিচ্ছেন- সম্পর্কের মধ্যে কোন জিনিটা পছন্দ, সঙ্গীর কোন বিষয়গুলো ভালোবাসেন সেগুলোর প্রকাশ দিয়েই কথাবার্তা শুরু করতে হবে। মনে রাখতে হবে এটা কোনো বিতর্ক প্রতিযোগিতা নয় যে জয়ী হতে হবে।
অ্যালবার্স বলেন, “যুগলদের মধ্যে আলাপ আলোচনার কঠিনতম দুটি বিষয় হল- অর্থনৈতিক বিষয় এবং সঙ্গম। মনে হতে পারে এগুলো দূরে থাক। তবে সম্পর্ক উন্নয়নে তালিকায় এগুলো রাখা গুরুত্বপূর্ণ।”
আর কী ধরনের প্রশ্ন করা যেতে পারে সেগুলোর একটা ধারণাও দিয়েছেন এই দুই মনোবিজ্ঞানী।
আমরা একসঙ্গে কবে ভালোমতো কাজ করেছি?
সেই জায়গাগুলো নিয়ে ভাবুন, যেখানে একসঙ্গে কাজ করে আনন্দ পেয়েছেন। হতে পারে সেটা বাসায় অতিথি আপ্যায়ন বা সংসারের খরচ ভাগাভাগি। আর যেটাতে আনন্দ পাননি সেই ধরনের বিষয়গুলো মাথা খাটিয়ে বের করলে বোঝা সম্ভব হবে সম্পর্কে কোন জায়গাগুলো ভালোমতো কাজ করছে না।
নিজেদের মধ্যে যোগাযোগটা কি ভালো?
যোগাযোগের মধ্যে ভাঙন থাকলে সম্পর্কে সব ধরনের গোলমাল বাধতে বাধ্য। তাই একজন আরেকজনের কথা ঠিকমতো শুনছেন কিনা, সেটা বোঝা গুরুত্বপূর্ণ।
নিজেদের মধ্যে এমন যোগাযোগের বিষয় গড়ে তুলতে হবে যাতে সব বিষয় ঠিক মতো খোলাসা করা সম্ভব হয়।
সম্পর্কে দুশ্চিন্তা বা উদ্বেগের বিষয় কী?
হয়ত বাসার কোনো একটা জিনিস একজনের পছন্দ, অন্যজনের পছন্দ না। সেটা হয়ত পরিবর্তন করা সম্ভব না। তবে দুজন দুজনের প্রয়োজন ঠিক মতো মেটাতে পারছেন কিনা সেটা উদ্ধারের জন্য এই প্রশ্নটা করা প্রয়োজন। হতে পরে সম্পর্কটা খুব দ্রুত বা ধীরে আগাচ্ছে, হতে পারে একজনের প্রয়োজনটা অন্যজন বুঝতে পারছে না। বিষয় যেটাই হোক, সেসব সমাধান করার এখনই সময়।
নিজেদের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ কী?
দুজনে বইয়ের একই পাতায় আছেন কিনা সেটা জানা জরুরি। সামনে কী করবেন একসঙ্গে সেগুলো মাথায় রাখতে হবে। নতুন সম্পর্ক হলে- সামনে একসঙ্গে থাকা শুরু করবেন কি-না, পুরানো সম্পর্ক হলে- সন্তান নেবেন কি-না বা পেশাজীবনের সঙ্গে মিলিয়ে একসঙ্গে থাকা হবে কি হবে না- এই ধনরের বিষয়গুলো ‘রিলেশনশিপ অডিট’ চলাকারে উত্থাপন করা জরুরি।
কী পরিবর্তন করা দরকার?
নিজেদের মধ্যে সুবিধা অসুবিধাগুলো আলোচনার পর সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হবে। আর এই ক্ষেত্রে দুজন দুজনকে আরও ভালোভাবে বোঝার ক্ষেত্রে কাজ করবে। সেক্ষেত্রে কাকে কোথায় কী পরিবর্তন করতে হতে পারে, কতটুকু ছাড় দেওয়া সম্ভব এই ধরনের বিষয়গুলো উপলব্ধি করা যাবে।
কতটা ঘন ঘন এই নিরীক্ষা চালানো উচিত
কারও ক্ষেত্রে মাসে একবার কারও আবার সপ্তাহে একবার নিরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন হতে পারে।
“আসলে এটা কোনো ধরাবাঁধা সময় নেই”- বলেন অ্যালবার্স, “যুগলরা নিজেদের মধ্যে প্রয়োজন বোধ করলে নিরীক্ষা চালানো যেতেই পারে।”
তিনি আরও বলেন, “হতে পারে আলোচনার শুরুতে অস্বস্তি কাজ করতে পারে, আর সেটাই স্বাভাবিক। তবে সম্পর্কের কোথায় আলো উজ্জ্বল করা দরকার সেটা অন্তত পরিষ্কার হবে। ফলশ্রুতিতে সম্পর্কের গভীরতা বাড়বে।”
আরও পড়ুন