অসুস্থ হতে কারও ভালোলাগে না। তারপরও রোগে ভুগতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মায়ো ক্লিনিক’ জানাচ্ছে, প্রাপ্তবয়স্ক ও স্বাস্থ্যবান মানুষের বছরে দুতিনবার সর্দি লাগাটা স্বাভাবিক। শিশু কিশোরদের আরেকটু বেশি হবে। সাত থেকে ১০ দিনের মধ্যেই এগুলো ভালো হয়ে যাওয়া উচিত সবারই।
রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকার কোনো নিশ্চিত উপায় নেই, তবে সাবধান থাকলে সম্ভাবনা কমিয়ে আনা সম্ভব অনেকটাই।
সেই সাবধান থাকার কিছু উপায় জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘হলিস্টিক ওয়েলসেন স্ট্রাটেজি’র ‘সার্টিফায়েড ফ্যামিলি ফিজিশিয়ান’ ডা. টমি মিচেল।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মিচেল বলেন, “এক দশকেরও বেশি সময় ধরে রোগী দেখার সুবাদে আমি জেনেছি রোগীদের কোন অভ্যাসগুলো তাদের রোগাক্রান্ত করে। যারা প্রায়ই অসুস্থ হন তাদের মাঝে কিছু অভ্যাস থাকে। যা না থাকলে যে, কেউ অসুস্থ হবে না সেটা বলা যায় না, তবে আশঙ্কা কমবে অবশ্যই।”
শারীরিক মিলন: মিচেল বলেন, “যৌনসঙ্গমের বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত উপকারিতা আছে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, মানসিক চাপ কমায়, ভালো ঘুম আনে, হৃদযন্ত্র ভালো রাখে ইত্যাদি। গবেষণা বলে, যারা সপ্তাহে দুতিন বার শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হন, তাদের শরীরে ‘অ্যান্টিবডি’ মাত্রা যারা এরও কম মাত্রায় সঙ্গম করেন তাদের তুলনায় বেশি থাকে। এমনকি চিকিৎসকরা চিকিৎসা হিসেবেও যৌনমিলনের পরামর্শ দেন।”
যোগব্যায়াম: “যোগব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে, এই দাবির সঙ্গে অনেকেই ভিন্নমত পোষণ করলেও একথা সবাই স্বীকার করবেন যে, যোগব্যায়াম রোগাক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা কমায়”, বলেন ডা. মিচেল।
সর্দি কাশি ও অন্যান্য শ্বাসতন্ত্রের রোগের সম্ভাবনা কমায় এই ব্যায়াম। এছাড়াও এটি মানসিক চাপ কমায় বলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য উপকারী।
ভিটামিন ডি: শরীরের অসংখ্য কাজের জন্য ভিটামিন ডি জরুরি। হাড়ের সুস্বাস্থ্য, পেশির কার্যাবলী অক্ষুণ্ন রাখা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করা এরমধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা দিতেও এর ভূমিকা আছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ তারমধ্যে অন্যতম।
কিছু গবেষণা বলে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকারী কোষগুলোর কার্যবলী নিয়ন্ত্রণ করে এই ভিটামিন এবং প্রদাহ কমায়। তবে ঠিক কীভাবে ভিটামিন ডি এই কাজ করে তা এখনও নিশ্চিত নয়।
হাত ধোয়া: যে কোনো ধরনের রোগ থেকে নিজেকে নিরাপদ রাখার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস হল হাত পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখা। সঠিকভাবে হাত পরিষ্কার করলে ব্যা্ক্টেরিয়া, ভাইরাস যেমন দূর হবে তেমনি কমবে সংক্রমণের আশঙ্কা।
তবে অনেকেই এই সামান্য কাজটি করেন না, ফলে প্রায়ই রোগে ভোগেন। সাবান ও পানি দিয়ে কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড হাত ধুতে হবে এবং পরে ভালোভাবে পানি দিতে সাবান ধুয়ে ফেলতে হবে। হাতের আঙুল, তালু, নখ সবখানে সাবান পৌঁছানো নিশ্চিত করতে হবে।
অসুস্থ মানুষ থেকে দূরে থাকা: রোগী সেবা বা চিকিৎসার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত না হলে অসুস্থ ব্যক্তির সঙ্গে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা খুবই জরুরি। বিশেষ করে যারা বয়স্ক কিংবা নিজেই কোনো দূরারোগ্য ব্যধিতে ভুগছেন তাদের বিষয়টা আরও আমলে নেওয়া উচিত।
আবার এটাও ঠিক যে, চাইলে রোগীর সঙ্গে দূরত্ব রাখা যায় না। এক্ষেত্রে রোগীর সঙ্গে সাক্ষাতের পর ভালোভাবে হাত ধোয়া এবং সম্ভাব্য সংক্রমিত স্থানগুলো পরিষ্কার করা জরুরি। মাস্ক পরা আরেকটি ভালো অভ্যাস রোগ থেকে বাঁচতে চাইলে।
ধূমপান বর্জন: সিগারেটের ধোয়ার মাঝে অসংখ্য ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। আর ধূমপানের মাধ্যমে সেই ক্ষতিকর উপাদানগুলো রক্তে মেশে ফুসফুসের মাধ্যমে। আর সেখান থেকে ছড়িয়ে যায় পুরো শরীরে।
সংক্রমণ ও প্রদাহের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও বাড়ায় ধূমপানের এই অভ্যাস। কারণ ধূমপান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। তাই এই বদোভ্যাস যত দ্রুত ত্যাগ করবেন ততই ভালো।
শরীরচর্চা: শারীরিক পরিশ্রম শরীরকে রোগাক্রান্ত হওয়ার হাত থেকে বাঁচায় একথা অসংখ্য গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। কীভাবে তা হয় তা আজও পরিষ্কারভাবে বোঝা না গেলেও শরীরচর্চার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী হয় এটুকু বোঝা গেছে।
পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়, ফলে প্রদাহের বিরুদ্ধে লড়া্ই করার উপাদানগুলো শরীরের সবখানে পৌঁছে যেতে পারে।
আবার এই অভ্যাস মানসিক চাপ কমায়, আর মানসিক চাপ বেশি থাকা মানেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া। দিনে মাত্র আধা ঘণ্টার শরীরচর্চা এই সবগুলো উপকারিত দিতে পারে।
মধ্যপান বর্জন: ডা. মিচেল বলেন, “অ্যালকোহলের স্বল্পস্থায়ী ও দীর্ঘস্থায়ী দুই ধরনের কুপ্রভাব থাকে।”
স্বল্পস্থায়ী কুপ্রভাব হল- কথা বলায় জড়তা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা হারানো, ক্ষিপ্রতা কমে যাওয়া।
আর দীর্ঘমেয়াদে মদ্যপান নষ্ট করে- যকৃত, হৃদযন্ত্র। ডেকে আনে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার।
তাই সুস্থ থাকতে মদ্যপান বর্জন করতে হবে। মদ হজম করতে শরীরকে বাড়তি পরিশ্রম করতে হয়। বিশেষত, যকৃত। ফলে এর ক্ষমতা কমতে থাকে। আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দূর্বল হতে থাকে। ফলে অল্প অনিয়মেই রোগ হয়।
আরও পড়ুন