যান্ত্রিক পর্দার তুলনায় দিনের আলোতে নীল রশ্মির পরিমাণ হাজার গুন বেশি।
Published : 20 Aug 2023, 05:29 PM
কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের নীল রশ্মি থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই ‘ব্লু লাইটি’ প্রতিরক্ষক কাচ চশমায় ব্যবহার করেন।
তবে সাম্প্রতিক গবেষণার ভিত্তিতে গবেষকরা, এই কাচ ব্যবহারের আগে বেহুদা টাকা খরচ করবেন কি-না সে বিষয়ে দ্বিতীয়বার ভাবার কথা বলছেন।
এই গবেষণা পত্রের জ্যেষ্ঠ লেখক, অস্ট্রেলিয়ার ‘ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্ন’য়ের ‘অপ্টোমেট্রি’র সহযোগী অধ্যাপক এবং ‘ভিশন সায়েন্স অ্যান্ড অ্যান্টিরিয়র’ বিভাগের পরিচালক লরা ডওনি বলেন, “চশমায় ‘ব্লু লাইট ফিল্টার’ দেওয়া কাচ ব্যবহারে স্বল্প-মেয়াদে কোনো সুবিধা নেই।”
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি এক বিবৃতিতে আরও বলেন, “আমারা এখনও পরিষ্কার না এই ধরনের কাচ ঘুমের নাকি দৃষ্টিশক্তিতে ভালো কোনো প্রভাব রাখে। আর দীর্ঘমেয়াদে রেটিনার স্বাস্থ্যের ওপরেও কোনো বিশেষ প্রভাব রাখছে কিনা সে ব্যাপারেও উপসংহার টানা যাচ্ছে না।”
ওহিও’তে অবস্থিত ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের ‘কোল আই ইন্সটিটিউট’য়ের চক্ষু ও কর্নিয়া বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রেইগ সি এই বিষয়ে বলেন, “বেশিরভাগ মানুষ জানেন, যান্ত্রিক পর্দার নীল রশ্মির কারণে চোখে কড়কড়ে অনুভূতি হয়। বাস্তবে বিষয় তা নয়।”
গবেষণার সাথে যুক্ত না থেকেও এই চিকিৎসক আরও বলেন, “বেশিরভাগ মানুষের ‘কম্পিউটার ভিশন সিন্ড্রম’য়ে ভোগার সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে কম্পিউটারে কাজ করার সম্পর্ক রয়েছে।”
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যানুসারে এর লক্ষণগুলো হল- শুষ্ক চোখের সমস্যা, চোখ দিয়ে পানি পড়া, ঝাপসা দেখা, আলো সহ্য করতে না পারা, চোখ জ্বালা বা চুলকানো এবং চোখ খুলের রাখতে ও মনোযোগ দিতে সমস্যা হওয়া।
এছাড়া বয়সের সাথে কাছের জিনিস দেখতে সমস্যা হওয়া বা ‘প্রেসবিয়োপিয়া’র কারণে চোখে টানটান অনুভূতি হয়; আর ঝুঁকে পরিষ্কার দেখার চেষ্টার কারণে দেখা দেয়ে ঘাড় ও পিঠ ব্যথা।
“আমি রোগীদের সাধারণত ‘ব্লু লাইট ফিল্টার’ দেওয়া কাচ ব্যবহারের পরামর্শ দেই না”- বলেন সি। “আবার এটাও ভাবা ঠিক হবে না এই ধরনের কাচ চোখের জন্য ক্ষতিকর। তবে চশমার পেছনে খরচের মাত্রাটাই খালি বাড়াবে।”
স্বল্প-মেয়াদী গবেষণা
বৃহস্পতিবার ‘কক্রেন ডেটাবেইজ অফ সিস্টেমেটিক রিভিউজ’য়ে প্রকাশিত এই গবেষণার জন্য নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থায় সংগঠিত ১৭টি পরীক্ষা থেকে এলোমেলোভাবে তথ্য নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়, যেগুলোর স্থায়িত্বকাল ছিল কয়েক দিন থেকে কয়েক মাস পর্যন্ত।
ডওনি বলেন, “আমাদের এই সংক্ষিপ্ত ক্লিনিকাল ট্রায়াল, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য পর্যবেক্ষণের জন্য সমালোচকদের ওপর প্রভাব ফেলবে। আর গবেষণার ফলাফলগুলো গুণগত মানের বিচারে ব্যাখ্যা করারও প্রয়োজন রয়েছে।
এই গবেষণার অন্যতম লেখক ডা. সুমের সিং আরও বলেন, “ব্লু-লাইট ফিল্টার’ দেওয়া কাচ কৃত্রিম যন্ত্র যেমন কম্পিউটার পর্দার নীল রশ্মি থেকে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারে। এর থেকে হাজার গুন বেশি নীল রশ্মি রয়েছে প্রকাতিক দিনের আলোতে।”
তিনি আরও বলেন, “উচ্চ মাত্রায় নীল রশ্মি থেকে রক্ষা দেওয়ার জন্য অবশ্যই কাচ হতে হবে ‘অ্যাম্বার টিন্ট’- যা কিনা রংয়ের তারতম্য বোঝার ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে।”
ডওনি বলেন, “গবেষণায় আমরা দেখিয়েছি যে, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে এই ধরনের কাচ ব্যবহারের জন্য রোগীদের ব্যাপকভাবে পরমর্শ দেওয়া হয়। আর বাজারজাতকারীরা দাবি করে, এর থেকে সুবিধা মিলবে। আসলে খরচ বাড়া ছাড়া আর কিছুই হয় না।”
“আমাদের এই গবেষণা সাধারণ মানুষদের ‘ব্লু লাইট ফিল্টার’ দেওয়া কাচ ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমর্থন করে না”- বলেন ডওনি।
তাই বিষয়টা এটা চক্ষু বিশেষজ্ঞ, গবেষক, রোগী থেকে শুরু করে যারা বাজারজাত করেন তাদেরও জানা উচিত হবে।
যেভাবে চোখকে আরাম দেওয়া যায়
ডা. সি বলেন, “চোখ কড়কড়ে অনুভূতি থেকে রক্ষা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন পন্থা রয়েছে।”
প্রথমত- যদি দুয়েক বছরের মধ্যে চোখ পরীক্ষা করানো না হয়, তবে প্রথমেই চোখের ডাক্তারের কাছে গিয়ে সেই কাজটা করতে হবে। হয়ত চোখ দুর্বল হচ্ছে, যে কারণে চিকিৎসা জরুরি।
ডা. সি পরামর্শ দেন, “ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর কম্পিউটার স্ক্রিন থেকে কতটা দূরে বা কাছে বসেন সেটা জানাতে ভুলবেন না। আর যদি ল্যাপটপ ব্যবহারে অভ্যস্ত হন, তবে বড় পর্দায় যুক্ত করে দেখার অভ্যাস গড়তে হবে। যান্ত্রিক পর্দা ছোট হলে চোখে চাপ পড়ে বেশি।”
বড় পর্দায় পড়তে সুবিধা হয়। টেক্সট’য়ের আকার বড় করে দেখা যায়। ছোট লেখা পড়তে যেমন সমস্যা তেমনি সময় বেশি লাগে। যে কারণে শুধু চোখ নয় পাশাপাশি মাথা, ঘাড় ও পিঠ ব্যথাও দেখা দেয়।
কম্পিউটারের পর্দার দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকা যাবে না। এক্ষেত্রে ২০-২০-২০ নিয়ম পালন করতে হবে। অর্থাৎ প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ ফিট দূরে ২০ সেকেন্ড করে তাকিয়ে থাকতে হবে। এর ফলে সাধারণ মাত্রায় চোখের পলক পড়বে। সবচেয়ে ভালো হয় হেঁটে আসলে। কারণ দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার কারণে ঘাড়-পিঠ ব্যথা করবেই।
যদি শুষ্ক চোখের সমস্যা দেখা দেয় তবে চোখে কুসুম গরম ভাপ দেওয়াতে উপকার মিলবে। তবে চিকিৎসক এই ব্যাপারে আরও ভালো ব্যবস্থাপত্র দিতে পারবেন।
আরও পড়ুন
চশমা পরেও মেইকআপ স্থায়ী করার পন্থা