এমন না যে একঘেয়ে বা বিরক্ত লাগছে মানে সব কিছু থেকে দূরে সরে থাকতে হবে।
Published : 27 Jan 2025, 06:34 PM
এমন একটা সময় যাচ্ছে, যখন বিনোদনের মাধ্যম হাতের মুঠোতে। তারপরও অনেক সময় লাগে বিরক্তি; একঘেয়ে সময় যেন কাটতেই চায় না।
তবে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন, একঘেয়ে বোধ করার ক্ষেত্রে উদ্দেশ্য কাজ করে; আর সেটা হল কষ্টের অনুভূতি ভুলে থাকা।
এই বিষয়ে ইউনিভার্সিটি অফ ভার্জিনিয়া’র ২০১৪ সালের করা একটি পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীরা ১৫ মিনিট নিজস্ব চিন্তাভাবনায় ডুবে থাকার চাইতে ‘ইলেক্ট্রিক শক’ নেওয়াটা বেশি উত্তেজনাকর মনে করছে।
ফলাফল হিসেবে ধরা হয়, কষ্টের অনুভূতির মতোই একঘেয়ে বা বিরক্ত বোধ করার পেছনে উদ্দেশ্য কাজ করে।
এই বিষয়ে সিএনএন’য়ের চিকিৎসা-বিষয়ের প্রধান প্রতিবেদক ডা. সঞ্জয় গুপ্তাকে এক পডকাস্টে মার্কিন মনোবিজ্ঞানী জেমস ড্যানকের্ট বলেন, “কষ্ট দেওয়ার জন্য ব্যথার অনুভূতি তৈরি হয় না। বরং কষ্ট পাওয়ার মাধ্যমে সংকেত প্রদান করা হয় যে, তোমাকে কিছু করতে হবে। যে কোনো পরিস্থিতেই কষ্ট কাটিয়ে উঠতে হবে। একঘেয়ে বা ‘বোর্ডেম’ বিষয়টাও সেরকম।”
“এটা আপনাকে একঘেয়ে বা বিরক্ত বোধ করাতে নয়, এর থেকে বের হয়ে আসতে কোনো কিছু করার পদক্ষেপ নিতে বা সামনে এগিয়ে যেতে নির্দেশ দেয়”- ব্যাখ্যা করেন যুক্তরাষ্ট্রের ওন্টারিও’তে অবস্থিত ‘ইউনিভার্সিটি অব ওয়াটারলু’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের এই অধ্যাপক।
‘আউট অফ মাই স্কাল: দ্য সাইকোলজি অফ বোর্ডেম’ বইয়ের এই লেখক আরও বলেন, “একঘেয়ে হল অনুপ্রেরণার স্তর। যেটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ সেটা করতে চাচ্ছেন, তবে বর্তমানে যা আছে সেগুলো চাচ্ছেন না।”
তিনি- বিরক্ত বোধ বা একঘেয়ে অনুভূতিকে দেখেন একটা হতাশারমূলক আকাঙ্ক্ষা হিসেবে, চারপাশের সব কিছুতে সংযুক্ত থাকার পরও মনে তৃপ্তি জাগছে না।
তাহলে একঘেয়ে অনুভূতি কাটাতে কী করা উচিত?
এমন প্রশ্নের জবাবে ড্যানকের্ট বলেন, “এই মুহূর্তে যদিও আমাদের কাছে এমন কোনো তথ্য নেই যেটা একঘেয়ে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। তবে অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে আমি পাঁচটি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতি সম্পর্কে পরামর্শ দিতে পারি, যা থেকে পরিস্থিতির উন্নতি করা সম্ভব হবে।”
বিকল্প কিছু করার তালিকা না করা
হতে পারেন আপনি সন্তানের কাছে একঘেয়ে কিংবা কোনো বন্ধুর কাছে হতাশাজনক। তবে এর জন্য তারা কী চাচ্ছে সেই হিসেবে কাজ করতে হবে না।
ড্যানকের্ট বলেন, “খুবই শক্তিশালী ও সাঞ্জস্যপূর্ণ গবেষণায় দেখা গেছে, একঘেয়ে বোধকারীরা মনে করে তাদের কোনো উপায় নাই। নিজের জীবনের ওপর নিয়ন্ত্রণ কাজ করে না। আর তাদেরকে তালিকা ধরে নানান সমাধান দিলেও কাজ হয় না।”
যারা মাঝেমধ্যে একঘেয়ে বোধ করেন, তাদের বিকল্প কিছু করার পরামর্শ দিলে কাজ হয়। তবে যারা নিয়মিত দীর্ঘদিন ধরে বিরক্তি বা একঘেয়ে বোধ করেন তাদের কোনো পন্থাই পছন্দ হয় না।
তাই উপায় হল, তাদেরকে পরামর্শ না দিয়ে মুখ বন্ধ রাখা। আর নিজেদেরকেই একঘেয়েমি কাটানোর উপায় বের করতে দেওয়া।
নিজের জন্য তালিকা তৈরি
নানান কর্মকাণ্ডের জন্য একটা তালিকা করে রাখা যেতে পারে। আর একঘেয়ে বোধ করলে সেই তালিকা অনুসারে কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
ড্যানকের্ট বলেন, “যেমন আমার জন্য প্রধান বিষয়, হাতে গিটার তুলে নেওয়া। তবে আপনার জন্য এটা হতে পারে দ্বিতীয় বা তৃতীয় পছন্দ। অনেক সময় তালিকার প্রথম বিষয়টা কাজ করে না। সেক্ষেত্রে বাকিগুলো চেষ্টা করতে হবে।”
অমনোযোগী অবস্থায় ফোন ঘাটা বন্ধ করা
“আমাদের ফোন আর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম কোনোভাবেই একঘেয়েমি কাটানোর পন্থা নয়। বরং সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে”- বলেন ড্যানকের্ট।
আর সময়ের সাথে সাথে একঘেয়েমির মাত্রায় বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
তবে প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে একঘেয়েমি কাটানোর পক্ষে এই মনোবিজ্ঞানী। যেমন- সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো ভ্রমণ দলের সঙ্গে যুক্ত হওয়া; ইউটিউব দেখে গিটার বা সেলাই শেখা।
আর এগুলোই হল একঘেয়ে থেকে বের হয়ে আসার জন্য নতুন কিছু করার সংকেত।
আশা করবেন না একঘেয়েমি আপনাকে সৃজনশীল করে তুলবে
“আসলে বিষয়টি উল্টো। আমরা গবেষণায় দেখেছি একঘেয়েমিতে ভুগলে বরং সৃজনশীলতা কমে যায়”- বলেন ড্যানকের্ট।
বরং দেখা গেছে, একাকী সময় সৃজনশীল হতে সাহায্য করে।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “স্বল্প সময়ের জন্য অন্যদের থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে নিজেকে নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ করে দেয়। এমনও হতে পরে আপনার মধ্যে এমন কোনো ভাবনা রয়েছে যা সৃজনীশলতার জন্য প্রয়োজন। তবে অন্যদের সঙ্গে থেকে সম্ভব না। এরকম হলে কোনো সমস্যা নেই। তবে জাদুর কাঠির মতো একঘেয়েমি আপনাকে সৃজনশীল করে তুলবে- এমন কোনো কথা নেই।”
একঘেয়েমি থেকে নিজেকে আড়াল না করা
“আলিঙ্গনও করতে হবে না আবার ভুলেও থাকা যাবে না। আসলে এটা ভালো বা খারাপ কিছু না। বরং এর থেকে শিক্ষা নিয়ে বের করার চেষ্টা করতে হবে কী করা উচিত। আর এটা নিয়ে ভালো পন্থায় প্রকাশ করতে হবে”- পরামর্শ দেন ড্যানকের্ট।
সেটা সৃজনশীল কিছু হলে ভালো। না হলে আনন্দ পাওয়া যায় এমন যে কোনো কিছুই করা যেতে পারে। এমনকি নেটফ্লিক্স’য়ে কোনো অনুষ্ঠান বা সিরিজ দেখা।
এই মনোবিজ্ঞানী বলেন, “আসলে আমরা সবাই কোনো না কোনো সময় ‘বোর্ড’ হই। শুধু মাত্র ‘বোরিং’ মানুষরাই ‘বোর্ড’ হয়, এটা একটা ‘জাজমেন্টাল’ চিন্তাভাবনা।”
তার কথায়, “আমরা আসলে কেউ একঘেয়ে না। আমারা আসলে খুবই সাধারণ এবং সংবেদনশীল।”
আরও পড়ুন
একঘেয়ে-ভাব কাটানোর পন্থাও যে কারণে বিরক্তিকর লাগে
ক্লান্তিকর কর্ম-ঘণ্টায় চাপমুক্ত থাকার উপায়