Published : 09 Oct 2023, 03:39 PM
বাজার থেকে কিনে আনা মিষ্টি কুমড়া কিংবা টিনজাত অবস্থায় পাওয়া এই সবজি থেকে মিলবে নানান পুষ্টি।
ছোট চিংড়ি দিয়ে কুমড়ার তরকারি কিংবা কুমড়া ভর্তা- যেভাবেই খাওয়া হোক, কমলা রংয়ের এই সবজিতে থাকা নানান উপাদান নানানভাবে দেহে উপকার করে।
একটি টিনজাত কুমড়া থেকে মিলবে- ৮৩ ক্যাললি, ০.৭ গ্রাম চর্বি, ২.৭ গ্রাম প্রোটিন, ১৯.৮ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস, ৭ গ্রাম আঁশ, ৮ গ্রাম চিনি।
আর এক কাপ চৌক করে কাটা কুমড়া থেকে পাওয়া যায়- ১২৬ ক্যাললি, ০ গ্রাম চর্বি, ১ গ্রাম প্রোটিন, ৭.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইটস, ০.৫ গ্রাম আঁশ, ৩ গ্রাম চিনি।
এছাড়াও রয়েছে উচ্চ মাত্রায় নানান রকম ভিটামিন, খনিজ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস। তাই এই মৌসুমে মিষ্টি কুমড়ার তরকারি হতে পারে পুষ্টিকর খাবার।
আঁশের যোগান দিতে পারে
“দৈনিক আঁশের চাহিদা মেটাতে পারে কুমড়া”- ইটদিসনটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে এভাবেই মন্তব্য করেন মার্কিন পুষ্টিবিদ এলিজাবেথ ওয়ার্ড।
এক কাপ রান্না করা কুমড়া থেকে পাওয়া যায় ২ গ্রাম আঁশ। তাই এই সবজি খাদ্যতালিকায় রাখলে পাকস্থলীর উপকার হয়। এছাড়া আঁশ দেহ থেকে কোলেস্টেরল বের করে দিতে পারে। রক্তের শর্করার মাত্রায় আনে ভারসাম্য।
এই সবজিতে থাকা ‘প্রিবায়োটিক ফাইবার’ অন্ত্রের ভালো ব্যাক্টেরিয়ার জন্য উপকারী। ফলে হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
ত্বকের সুস্বাস্থ্য
ভিটামিন এ, সি এবং ই ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে। আর এসবই মিলবে কুমড়া থেকে- জানান শিকাগো ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ম্যাগি মিখাইলজিক।
এক কাপ কুমড়ায় থাকে ১০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন সি, প্রায় ১,৯০০ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন এ এবং ২.৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন ই।
মিখাইলজিক আরও বলেন, “বেটা-ক্যারোটিন পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন এ’তে রূপ নিয়ে অতিবেগুনি রশ্মির কারণে হওয়া ত্বকের ক্ষতি পোষাতে পারে। ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়, ত্বক রাখে আর্দ্র। আর ভিটামিন ই- একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা ‘ফ্রি র্যাডিকেল’ থেকে হওয়া ক্ষতি পূরণ করে।
চোখের জন্য উপকারী
কুমড়ায় থাকা নানান রকম ভিটামিন খনিজের মধ্যে একটি হল বেটা-ক্যারোটিন, এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের কারণেই কুমড়ার রং হয় উজ্জ্বল কমলা।
মিখাইলজিক বলেন, “এই উদ্ভিজ্জ উপাদান দেহে পরিবর্তিত হয়ে ভিটামিন এ’তে রূপ নেয়। আর এই ভিটামিন যে চোখের জন্য উপকারী সেটা প্রায় সবারই জানা।”
এছাড়া লুটেইন এবং জিয়াক্সানথিন মিলবে এই সবজি থেকে। এই দুই উপাদান বয়সের কারণে হওয়া দৃষ্টিশক্তি কমার হাত থেকে বাঁচাতে পারে।
রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে
ভিটামিন এ এবং সি উচ্চা মাত্রায় থাকার কারণে দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে কুমড়া।
‘অ্যাপলাইড ফুড রিসার্চ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে মিখাইলজিক জানান- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে এই গবেষণার ফলাফলে নানান রকম ভিটামিন ও খনিজের উৎকৃষ্ট উৎস হিসেবে দৈনিক খাদ্য তালিকায় কুমড়া রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়।
পটাসিয়ামের উৎস
এক কাপ কুমড়া থেকে প্রায় ৫০০ মাইক্রোগ্রাম পটাসিয়াম পাওয়া যায়। আর সাধারণভাবে দেহে পটাসিয়ামের দৈনিক চাহিদা হল ৪,৭০০ মাইক্রোগ্রামস।
স্বাস্থ্যকর রক্তচাপ, স্বাভাবিক হৃদগতি ও পেশির কার্যকারিতার জন্য পটাসিয়াম প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘দ্যা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ হেল্থ’য়ের তথ্যানুসারে পটাসিয়ামের অভাব থেকে কিডনি অর্থাৎ বৃক্কে পাথর হওয়া ও হাড় ভঙ্গুর রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে
মিখাইলজিক বলেন, “পটাসিয়াম, ভিটামিন সি, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের উৎস হিসেবে কুমড়া হৃদ-স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ কার্ডিওলজি’র তথ্যানুসারে রক্তচাপ কমাতে বা স্বাভাবিক রাখতে পটাসিয়াম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। উচ্চ রক্তচাপ সরাসরি হৃদযন্ত্রের ক্ষতি করে।
এছাড়া খাদ্য আঁশ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে পারে। ফলে কমে নানান ধরনের হৃদরোগের ঝুঁকি। আর এসব উপাদানই মিলবে কুমড়া থেকে।
কুমড়ার বীজও উপকারী
শুধু সবজিটা নয় এর বীজও পুষ্টি উপাদানে ভরপুর।
মিখাইলজিক বলেন, “দানা ছোট কিন্তু উপকারের মাত্রা প্রচুর। মিলবে উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, আঁশ ও স্বাস্থ্যকর চর্বি। এছাড়া জিঙ্ক’ও পাওয়া যাবে- যা কিনা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আরও পড়ুন