রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দৃঢ় রাখতেও দেহ পর্যাপ্ত আর্দ্র রাখা প্রয়োজন।
Published : 10 Jan 2024, 07:17 PM
শীতকালে সুস্থ থাকতে পর্যাপ্ত পানি পানের প্রয়োজন। পিপাসা কম লাগে বলে পানি পানও কম হয়ে যায়।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ক্যারোলিন ইয়ং বলেন, “শীতকালে আর্দ্রতাকে অবহেলা করার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় এবং ত্বকের স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে দেখা দিতে পারে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যা। তাই শীতকালে বেশি পানি পান করা উচিত।”
শীতকালে দেহ থেকে বেশি পানি বের হয়ে যায়
শীতকালের বাতাস শুষ্ক হওয়ার ফলে দেহ থেকে অতিরিক্ত পানি বের হয়ে যায়। শ্বাস প্রশ্বাস এবং ত্বকের বাষ্পীভবনের মাধ্যমে অধিক পানি বের হয়ে যায় বলে ঘাটতি পূরণের জন্য বাড়তি পানি পানের প্রয়োজন রয়েছে।
“শীতের মাসগুলোতে শরীর থেকে পানি ক্ষয়ের মাত্রা বাড়তে পারে। এই সময় বাইরে সাধারণের তুলনায় ঘরের ভেতর উষ্ণ এবং শুষ্ক থাকে। তাই তরলের চাহিদা বৃদ্ধি পায়”- ইটদিসনটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন ইয়ং।
পানি পান ইলেকট্রোলাইট’য়ের ভারসাম্য রক্ষা করে
গবেষণায় দেখা গেছে যে, পর্যাপ্ত পানি পান দেহে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে প্রয়োজন। এটা শীতকালেও প্রযোজ্য।
অনেকেই মনে করে যে, পানিশূন্যতা কেবল গরম কালে ঘটে। তবে শীতকালেও এমনটা হতে পারে। যারা নিয়মিত পানি পান করেন তাদের স্নায়ু ও পেশি কার্যক্রিয়ার জন্য ইলেকট্রোলাইটের স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য নিশ্চিত করতে পারে পানি।
শীতে মূত্র ত্যাগের পরিমাণ বাড়ে
“শীতকালে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি মূত্র নির্গত হয়”- মন্তব্য করেন ইয়ং।
ঠাণ্ডা পরিবেশ থাকার ফলে বৃক্ক সাধারণত স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি মূত্র তৈরি করতে পারে যা দেহকে পানিশূন্য করে ফেলে।
তাই এই সময় অধিক পানি পানের প্রয়োজন।
ঠাণ্ডা পরিবেশে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে
শীতকাল আরামদায়ক হলেও এই মৌসুমে অনেক বেশি ঠাণ্ডা-কাশির সমস্যা দেখা দেয়। তবে ভালো খবর হল, এই সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
ঠাণ্ডা তাপমাত্রার বিরুদ্ধে সুরক্ষিত রাখতে দেহ রোগ প্রতিরোধকারী কোষের কার্যকারিতা বাড়ায়। ফলে ত্বক ও শরীর সুস্থ থাকে।
ইয়ং বলেন, “ঠাণ্ডা তাপমাত্রার ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। প্রচুর পানি পান করা ত্বকের ভেতর থেকে আর্দ্রতা রক্ষা করে শুষ্কতা প্রতিরোধের সহায়তা করে। না হলে পরবর্তী সময়ে ফাটল, অস্বস্তি, চুলকানি, জ্বালাপোড়া এবং অন্যান্য সমস্যার কারণ হতে পারে।”
পানি পান দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে
ইয়ং’য়ের ভাষায়, “শীতকালে পর্যাপ্ত পানি পান করা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। কারণ দেহের হাইপোথারমিয়া প্রতিকারের জন্য আর্দ্রতা রক্ষা করা প্রয়োজন।”
আর্দ্র থাকলে শরীরের ‘থার্মোরেগুলেশন’ বা তাপমাত্রার স্ব-নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা উন্নত করে। এতে ঠাণ্ডা তাপমাত্রার সাথে ভালোভাবে মানিয়ে নিতে সাহায্য করে। আর্দ্র থাকা ঠাণ্ডার মাসে উষ্ণ থাকতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ঘরের তাপমাত্রা বাইরের তুলনায় বেশি পানিশূন্যতা সৃষ্টি করে
বাইরের বাতাস ঠাণ্ডা ও শুষ্ক থাকে। তবে ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ কৌশল অনেক বেশি পানিশূন্যতার সৃষ্টি করে।
এ সময় কৃত্রিমভাবে ঘর গরম করার প্রক্রিয়া ঘরের পরিবেশ, শ্বাস প্রশ্বাস, ত্বকে বাষ্পীভবনের মাধ্যমে পানির ক্ষয় বৃদ্ধি করে।
তাই এই ক্ষয় পূরণের জন্য অধিক পানি পানের প্রয়োজন রয়েছে।
আর্দ্র থাকা শীতকালে ওজন বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করে
শীতের মাসগুলোতে স্বাভাবিকভাবেই কম নাড়াচাড়া করা হয়। ফলে অনেকেরই ওজন কিছুটা বেড়ে যায়। পানিশূন্যতা অনেক সময় ক্ষুধার ইঙ্গিত দেয় ফলে অধি-ভোজনের ঝুঁকি বাড়ে।
তাই আর্দ্র থাকার মাধ্যমে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করা বা খাবার ইচ্ছা কমানোর মধ্য দিয়ে ওজন বৃদ্ধির ঝুঁকি অনেকটাই কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
শীতে শ্বাস নিতে দেহের অধিক পানির প্রয়োজন
ঠাণ্ডা তাপমাত্রায় শ্বাসযন্ত্রের প্রক্রিয়া কিছুটা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই পানি পানের প্রয়োজন। এছাড়াও শুষ্ক ঠাণ্ডা বাতাস ফুসফুসের কাজ কিছুটা কঠিন করে তোলে। আর্দ্র থাকা শ্বাসযন্ত্রের ‘মিউকাস মেমব্রেন’কে সহায়তা করে।
গরমকালের মতো ঘাম চোখে পড়ে না
শীতকালেও শরীর ঘামে, যদিও গরমকালে তুলনায় কিছুটা কম। তবে এই সময় বাইরে থাকা অবস্থায় ঘাম অতটা চোখে পড়ে না।
খেয়াল না করলেও এসময় ঠিকই শরীর থেকে তরল পদার্থ হ্রাস পেতে থাকে।
“শীতকালে ব্যায়াম করার সময় আমাদের চিন্তার চেয়েও বেশি পরিমাণ পানি পানির প্রয়োজন কারণ এই সময় আমাদের ঘাম হয় ঠিকই তবে বোঝার আগেই বাষ্পীভূত হয়ে যায়”- বলেন ইয়ং।
যদি খুব বেশি তীব্র ব্যায়াম করা হয় যেমন- এক ঘণ্টারর বেশি সময় ব্যায়াম করা হলে গরমকালের মতোই ইলেকট্রোলাইট যুক্ত তরল গ্রহণের প্রয়োজন হবে।
আরও পড়ুন
যেভাবে পানি পান করলে উপকার মিলবে বেশি