অতীত সম্পর্কের কথা বার বার মনে করিয়ে দেওয়ার মতো কথা বা কাজ থেকে বিরত থাকার চেষ্টা করতে হবে।
Published : 03 Jan 2023, 01:44 PM
প্রেম বা বিয়ের বিচ্ছেদে কাছের বন্ধুকে সান্তনা দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছু বিষয় খেয়াল রাখা দরকার।
কারণ সঙ্গ দিতে গিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেন, ‘বলছিলাম এরকম হবে’; তবে এই পন্থাটা ভুল।
ভারতের সম্পর্ক-বিষয়ক পরামর্শক অনলাইন প্রতিষ্ঠান ‘বিয়োন্ড থটস ডটকম’য়ের প্রতিষ্ঠাতা, ‘ভাসতু কন্সালটেন্ট অ্যান্ড সেইক্রিড জিওমেট্রি এক্সপার্ট’য়ের পরামর্শক হুসেইন মিনাওয়ালা বলেন, “আপনি বন্ধুকে ভালোবাসেন বলে তাদের প্রতি যত্নশীল। বন্ধু বর্তমানে ভালো নেই জেনে তার প্রতি সহমর্মী হয়ে পাশে থাকার চেষ্টা করছেন। যদিও আপনার কথা বা আচরণ তাকে বিভ্রান্ত করতে পারে বলে আপনি কিছুটা শঙ্কিত।”
তবে সব কিছুর পরেও সঙ্গ দিতে তার পাশে থাকাটাই হচ্ছে প্রথম শর্ত।
ফেমিনাডটইন’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বন্ধুর প্রেমের সম্পর্কে বিচ্ছেদ ঘটলে তাকে মানসিকভাবে সহায়তা করতে করণীয় কয়েকটি উপায় সম্পর্কে পরামর্শ দেন হুসেইন।
কখনই বলবেন না ‘আমি আগেই বলেছিলাম’
খুব বেশি বাস্তব কথা এসময় বন্ধুর কষ্টের কারণ হতে পারে।
হুসেইনের বলেন, “অনেকজনকেই দেখেছি বন্ধুকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে জ্ঞান দিয়ে ফেলেন। এই সময়ে বন্ধু খুবি নাজুক মানসিক অবস্থায় থাকে। তাকে পূর্বে সতর্ক করার পরেও যদি সে ভুল করে থাকে এবং তার কষ্টের সময়ে পুরানো ঘটনা মনে করিয়ে দেয়া বা নিজের জ্ঞান জাহির করা স্বার্থপরতার লক্ষণ।”
একটা নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করা
বন্ধুর জন্য এমন একটা পরিবেশ তৈরি করা উচিত যেন যে প্রাণ ভরে শ্বাস নিতে পারে। আরাম করতে পারে এবং মন খুলে কথা বলতে পারে। জায়গাটা তার প্রাক্তনের বাসা, দেখা করা স্থান বা তার কথা মনে করিয়ে দেয় এমন স্থান থেকে দূরে হওয়া শ্রেয়।
বন্ধুর আবেগ প্রকাশের জন্য নিরাপদ আবেগঘন মানসিক অবস্থান তৈরি করতে পারলে সে মন খুলে সব কথা বলতে পারবে এবং নিজেকে হালকা অনুভব করবে।
হুসেইন পরামর্শ দেন, “খুব ভালো শ্রোতা হয়ে তাকে মন খুলে কথা বলার জন্য উৎসাহ দিতে হবে। তার কথার ভুল ত্রুটি যাচাই না করে বরং তাকে স্বাধীনভাবে বলতে দিতে হবে। ভালো পরিবেশ ও ভালো শ্রোতা- বন্ধুকে বর্তমান পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে।”
কোনো রকম বাছবিচার ছাড়া একটানা বন্ধুর কথা শোনা তার অভিব্যাক্তিতে বাধার সৃষ্টি করে না।
হুসেইন বলেন, “বন্ধুর পছন্দের খাবার দেওয়া, তাকে জড়িয়ে ধরা ইত্যাদি বিষয়গুলো তাকে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য ও তার প্রতি আপনার টান প্রকাশ করবে।”
বন্ধুর স্বাস্থ্যের প্রতি মনোযোগ
সম্পর্কজনিত জটিলতায় অনেকেই শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। আত্মবিশ্বাসী মানুষ অনিরাপদ, চনমনে ও কর্মউদ্দীপ্ত মানুষ ঘরকুনো হয়ে যাওয়ার মতো দৃষ্টান্ত দেখা যায়।
সম্পর্কে বিচ্ছেদ মানসিক স্বাস্থ্যের মতো শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরেও প্রভাব ফেলে।
তাই বন্ধুর স্বাস্থ্যের খোঁজ রাখা, খাবারের সময় খোঁজ নেওয়া, পানি পান ও আলো বাতাসে বাইরে যাওয়ার বিষয়ে উৎসাহ দিতে হবে।
কাজে ব্যস্ত রাখা
বন্ধু যদি খেলাধুলা পছন্দ করে তাহলে তাকে বাইরে খেলা দেখতে নিয়ে যাওয়া বা খেলতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। অথবা একসঙ্গে বই পড়া, ছবি আঁকা বা নতুন কোনো কাজ করতে পারেন।
বাইরে হাঁটতে যাওয়া, জিম করা বা বন্ধু আগ্রহ পায় এমন যে কোনো কাজে শরীক হলে যে কিছুটা স্বস্তি বোধ করবে। বিচ্ছেদের কষ্ট ভুলতে পারবে এবং একাকিত্বের অনুভূতি থেকে মুক্তি পাবে।
প্রাক্তনের কথা মনে করিয়ে দেওয় বা তার প্রতি আবেগ জেগে উঠে এমন কোনো কাজ করা, জায়গায় যাওয়া বা আচরণ থেকে বিরত থাকা ভালো উপায়।
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া
যদি এই ধরনের প্রচেষ্টা বিফলে যায় আর বন্ধুর মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটে তাহলে হতে পারে তার বিশেষজ্ঞের সহায়তার প্রয়োজন রয়েছে। সংকোচ না করে বন্ধুকে বিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত।
সকল প্রচেষ্টার পরেও মনে রাখতে হবে যে, প্রতিটা মানুষই আলাদা। বন্ধুর ওপরে জোর করে কিছু চাপিয়ে না দিয়ে বা কড়াভাবে কিছু না বলে বরং তাকে তার মতো করে বুঝে আচরণ করা উচিত।
হুসেইনের মতে, বন্ধুকে আপনি ভালো চেনেন। তাই তার অবস্থা বুঝে সবচেয়ে ভালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এতে সে স্বাভাবিক ও ভালো অনুভব করবে।
আরও পড়ুন