সম্পর্কের ক্ষেত্রে শঙ্কার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন আসলে প্রেম কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কের কথাই সবার আগে মাথায় আসে।
Published : 18 Dec 2021, 09:16 PM
বন্ধুত্বের সম্পর্কেও যে এমন কোনো বিষয় থাকে তা মাথায় আনা অনেকের কাছেই অহেতুক মনে হতে পারে।
নিউ ইয়র্কের ‘সেক্স অ্যান্ড রিলেশনশিপ থেরাপিস্ট’ রেচেল রাইটস ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড’ ওয়েবাসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলেন, “যেকোনো ধরনের সম্পর্কে শঙ্কা বা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ যে বিষয়টা নিয়ে ভাবছে এবং যাকে কেন্দ্র করে ভাবছে, সেটা মানুষভেদে ভিন্ন হয়। একই ব্যক্তি এ বিষয় নিয়ে ভাবার সময় একজন ব্যক্তির জন্য যে বিষয়কে আশঙ্কাজনক মনে করছে, ওই একই বিষয় আরেকজন ব্যক্তির জন্য হতে পারে ইতিবাচক দিক।”
লস অ্যাঞ্জেলেস’য়ের সনদস্বীকৃত ‘ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি থেরাপিস্ট’ কারলা জ্যামব্রানো-মরিসন বলেন, “প্রেম কিংবা বৈবাহিক সম্পর্কে একজন ব্যক্তির নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে কমবেশি সবারই ধারণা আছে। বন্ধুত্বের সম্পর্কের ক্ষেত্রেও বিষয়টা অনেকটা একই রকম। কারণ, বন্ধুর কাছ থেকেও আমাদের প্রত্যাশা কিছু ক্ষেত্রে একই রকম। বন্ধুর কাছ থেকে আমরা চাই শ্রদ্ধাশীল ব্যবহার, শারীরিক ও মানসিকভাবে নিরাপদ অনুভূতি এবং মনের কথাগুলো নির্দিধায় বলতে পারার আস্থা।”
এই দুই বিশেষজ্ঞ তুলে ধরেন কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক তা বন্ধুত্বের সম্পর্কে আশঙ্কাজনক।
একমুখী সম্পর্ক: জ্যামব্রানো-মরিসন বলেন, “কখনও কি মনে হয় আড্ডার জন্য আপনিই সবাইকে ডেকে আনেন কিন্তু আপনাকে কেউ ডেকে আনে না? আবার এমনও মনে হতে পারে যে আপনার বন্ধুরা শুধু তার কোনো প্রয়োজনের সময়ই আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করে, অন্যসময় তার খোঁজ মেলে না। সম্পর্কে দুইপক্ষের আগ্রহের মাত্রা পুরোপুরি আধাআধি ভাগ হবে এমনটা অবাস্তব। আবার কেউ যোগাযোগ করছে না মানেই যে সে আপনাকে নিয়ে ভাবে না এমনটা ভেবে নেওয়াও ভুল।”
রাইটস বলেন, “মানুষের ব্যস্ততা থাকতেই পারে কিংবা হতে পারে তার নিজস্ব সময় কাটানোর প্রয়োজন ছিল। তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনার যদি এমন মনে হয় যে আপনার বন্ধুর কাছ থেকে যতটা মনযোগ আপনি চান এবং তার কাছে নিজেকে মুল্যবান মনে হওয়ার জন্য যতটুকু মনযোগ প্রয়োজন, ততটা আপনি পাচ্ছেন না, তবে বিষয়টা শঙ্কার। ব্যাপারটাকে হালকাভাবে সামাল দিতে পারেন, সরাসরি বলে ফেলতে পারেন, ‘মাঝেমধ্যে তুই নিজেও তো ফোন করে ডাকতে পারিস।”
ব্যক্তিগত দিকটাকে শ্রদ্ধা না করা: রাইটস বলেন, “আপনার বন্ধু এমন কিছু বলে বা করে, যা আপনাকে মানসিকভাবে আঘাত দেয়। মানা করার পরেও তার পুনরাবৃত্তি ঘটেই যাচ্ছে। এমন অবস্থায় তাকে সরাসরি বলতে হবে, ‘আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে তোমার মন্তব্য আমার ভালো লাগেনি, অপমানিত বোধ করেছি। আমাদের মধ্যে একটা ভালো বন্ধুত্বের সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে তোমার এমন আচরণ বন্ধ করতে হবে। সেটা কি তোমার পক্ষে সম্ভব?”
“এসময় সে যদি নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দেয় কিংবা তার আচরণ অস্বীকার করে তবে সেই সম্পর্কে ইতি টানাই হবে মঙ্গল। তারপরও ওই বন্ধু যদি আপনার খুব কাছের হয় তবে আবারও বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করতে পারেন।”
আপনার সমস্যাকে পাত্তা দেয় না, তবে নিজের সমস্যার সমাধান চায়: মরিসন বলেন, “এক বন্ধু আরেক বন্ধুর সমস্যায় সমব্যথী হবে, তার কথা শুনবে, সম্ভব হলে সমস্যার সমাধান করবে। একটা ভালো সম্পর্ক তখনই ভালো যদি সেখানে দুইপক্ষের সমান অংশগ্রহণ থাকবে।”
তবে আপনার বন্ধু যদি নিজের সমস্যার কথা শোনায় অথচ আপনি কিছু বললে সেখানে তার অংশগ্রহণ না থাকে, তাহলে সেই সম্পর্ক স্বাস্থ্যকর নয়।
রাইটস বলেন, “যে মানুষগুলো এমন করে তাদের অধিকাংশই হয় নিজের প্রতি অতিরিক্ত মনযোগী অথবা তা বুঝতেই পারে না তা কী করছে।”
“এক্ষেত্রেও আপনাকে সরাসরি তার সঙ্গে আলাপ করতে হবে, আপনার হতাশার কথা তাকে জানাতে হবে। ভবিষ্যতে যদি সে চেষ্টা করে আপনার প্রতি মনযোগী হওয়ার তবে বন্ধুকে আরও একটা সুযোগ দিতে পারেন।”
নিজের ভুল স্বীকার করে না: জ্যামব্রানো-মরিসন বলেন, “এই পরিস্থিতিতে সমস্যাটা হলো আপনি যাকে বন্ধু ভাবছেন যে আপনার অনুভূতি, চিন্তাধারা বোঝে না। সহানুভূতির ব্যাপারটা তার মাঝে নেই। এখন সে যদি বরাবরই এমন হয় তবে ভবিষ্যতে তার মাঝে সহানুভূতি বা নিজের দোষ দেখার বৈশিষ্ট্য তৈরি হবে এমনটা ভাবার অবকাশ নেই।”
রাইটস বলেন, ‘এই পরিস্থিতি জটিল। কারণ এই পরিস্থিতিকে পাত্তা না দিয়ে অনেকেই বিপদে পড়েন। আশপাশের মানুষ যদি বলে তোমার ওই বন্ধু সুবিধার না, তবে তাতেই কান দিতে হবে।”
বন্ধুর জন্য নিজেকে বদলাতে হয়: মরিসন বলেন, “আপনার নিজস্বতা প্রকাশ করতে গিয়ে যদি আপনার বন্ধুর কাছে হাসির পাত্র হয়ে ওঠেন বা লজ্জা অনুভব করেন, তবে সেই সম্পর্কে আপনার জন্য সুস্থ নয়। আপনি যেমন, ঠিক তেমনভাবেই আপনার বন্ধু আপনাকে মেনে নেবে, এটাই হওয়া উচিত।”
যে বন্ধু-মহলে গিয়ে আপনার মনে হয় আপনার নিজস্বতাকে বদলে ফেলতে হবে, সেই মহল আপনার জন্য হতে পারে মারাত্মক বিপজ্জনক। তাই সেই মহল ত্যাগ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।”
আরও পড়ুন