বন্ধুত্বের সীমারেখা

বয়স বাড়ার সঙ্গে বন্ধুত্বের পরিসর বাড়তে থাকে, বাড়তে থাকে দায়িত্বও। বন্ধুদের সঙ্গে কেবল আনন্দই মূল কথা নয়, বিপদে তার পাশে দাঁড়ানো, যথাসাধ্য সাহায্য করাও বন্ধুত্বের দাবী।

তৃপ্তি গমেজবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 August 2017, 07:34 AM
Updated : 6 August 2017, 07:34 AM

বন্ধুদের সঙ্গে সব বিষয় সহভাগিতা করা কতটুকু ঠিক, আর যত্নশীল বন্ধু মানেই কি প্রেমিক/প্রেমিকা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে দেখা যায় অধিকাংশ ছেলে মেয়েই মনে করেন, বন্ধুদের সঙ্গে বিশেষ কিছু সহভাগিতা করার আগে অবশ্যই তাকে যাচাই করে নেওয়া উচিত।

তাছাড়া বন্ধু বন্ধুই হয়। তবে দুজনের মধ্যে আন্তরিকতা থেকে যদি প্রেমের জন্ম নেয় তা দোষের কিছু নয়। কিন্তু কোনোভাবেই একতরফা প্রেমের জন্য বন্ধুত্বের সম্পর্কে নষ্ট হতে দেওয়া ঠিক নয় ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র কাউসার আহমেদের কাছে বন্ধুত্ব বিষয়টা একটা দায়িত্বের মতো।

তিনি বলেন, “বন্ধুর সঙ্গে মোটামুটি সব বিষয়ই সহভাগিতা করা যায়। তবে অবশ্যই তার আগে বন্ধুর মনমানসিকতাও যাচাই করে নেওয়া প্রয়োজন। কারণ আমি যেই ধরনের অবস্থার ভেতর দিয়ে যাচ্ছি আমার বন্ধুর অবস্থা তার বিপরীতও হতে পারে সেক্ষেত্রে সে আমার বুঝতে পারবেন না।"

তার মতে, বন্ধুকে নির্দ্বিধায় সবকিছু বলা গেলেও বিশেষ কিছু বা গোপনীয় কিছু বলার আগে ভেবে দেখা প্রয়োজন। আবার কোনো বন্ধু যদি নিজের কোনো ব্যক্তিগত কথা বলেও তাহলে তার বিশ্বাসকে সম্মান দেখানো উচিত। কোনো ভাবেই তার কথা অন্যদের সঙ্গের আলোচনা করা উচিত না। 

তোহফাতুন নূর, বাংলাদেশ গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজের ছাত্রী। বন্ধুর সঙ্গে মনের সব কথা খুলে বলা যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে মনমানসিকতা মিল আর মেলামেশার মাধ্যমে। তাই বন্ধুদের অবশ্যই সব কিছু বলা যায়। তবে কিছু বিষয় থাকে যা বন্ধুকে বলার আগে অবশ্যই তাকে যাচাই করে নেওয়া উচিত।"

বন্ধুকে খোলা মনে কিছু বললাম আর সে তা অন্যদের কাছে বলে দিল তাহলে তো আর গোপনীয়তা থাকলে না। তাই বন্ধুকে ভালোভাবে যাচাই করে তার সব কিছু বিবেচনা করে নিজের কথাগুলো বলা উচিত বলে মনে করেন, তিনি।

অনেকসময় ছেলে মেয়ের বন্ধুত্বের মাঝে বিশেষ অনুভূতি কাজ করে। অনুভূতিটা দুজনের মধ্যে সমানভাবে হলে ভালো। তবে এক তরফা হলে ভাঙন দেখা দিতে পারে বন্ধুত্বের মাঝে।

এমন পরিস্থিতিতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কি এগিয়ে নেওয়া উচিত নাকি নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনা উচিত? সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদন অবলম্বনে এই বিষয়ে কিছু পরামর্শ হল-

* শুরুতেই কোনোভাবে বন্ধুত্ব নষ্ট করা উচিত নয়। প্রথমে বন্ধুকে বোঝানো উচিত যে, আপনি তাকে কেবল বন্ধুর মতোই ভালোবাসেন এবং এর বেশি কোনো সম্পর্কে আপনি জড়াতে চান না। অন্যজনকেও বুঝতে হবে যে তার জন্য বন্ধুর মনে অন্য কোনো স্থান নেই।

* যদি কোনো বন্ধুর মধ্যে এই ধরনের অনুভূতি কাজ করে তাহলে তার সঙ্গে অনুভূতির বিষয়গুলো কম সহভাগিতা করা উচিত। না হলে তার মনের কোথাও সামান্য কিছু হলেও আশার আলো জ্বলতে পারে। যা পরে তাকে আরও আবেগপ্রবণ করে তোলে। তাই ওই বন্ধুর সঙ্গে অন্যান্য সাধারণ বন্ধুদের মতোই স্বাভাবিক আচরণ করতে হবে।

* এই ধরণের বন্ধুত্বের মাঝে ‘জেলাসি’ বা ঈর্ষা কাজ করতে পারে। অর্থাৎ যে বন্ধু আপনাকে পছন্দ করে সে হয়ত অন্য বন্ধুদের সঙ্গে আপনার মেলামেশা বা বেশি ঘনিষ্টতা পছন্দ নাও করতে পারে। তাই যতটা সম্ভব তার সঙ্গে এই সকল বিষয় নিয়ে কম আলোচনা করা উচিত।

* কাজে কর্মে ও কথা বার্তায় বন্ধুকে বোঝাতে হবে যে সে কেবলই বন্ধু অন্যদিকে বন্ধুকেও বুঝতে হবে যে নিজের ভুল বোঝার জন্য বা নিজের একতরফা অনূভুতিকে দাম দিতে গিয়ে বন্ধুত্বের সম্পর্কটা কোনভাবেই নষ্ট করা উচিত নয়।