যেভাবে বোঝা যায় ধমনী আটকে যাচ্ছে

লক্ষণ বুঝে প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা নিলে হৃদরোগ এড়ানো যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2022, 10:36 AM
Updated : 1 Dec 2022, 10:36 AM

পরিচিত কারও যদি ‘হার্ট’য়ে ‘ব্লক’ ধরা পড়ে থাকে তবে ‘প্লাক’ শব্দটা নিশ্চয়ই আপনার কাছে পরিচিত।

জন হপকিন্স মেডিসিন’য়ের তথ্যানুসারে, “চর্বিজাতীয় বস্তু, কোলেস্টেরল, কোষের বর্জ্য, ক্যালসিয়াম, ফিব্রিন ইত্যাদি রক্তনালী ও ধমনীতে জমা হয়ে এই ‘প্লাক’য়ের সৃষ্টি, যে কারণে রক্তনালী পুরু হয়ে গিয়ে একসময় আটকে যায়।”

পুরো শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্ত সরবরাহ এবং সেগুলো থেকে দুষিত রক্ত হৃদযন্ত্রের আনার দায়িত্ব হল ধমনি আর রক্তনালীর। এগুলো আটকে গেলে রক্তপ্রবাহ ব্যহত হয়, দেখা দেয় হৃদরোগ, ‘করোনারি আর্টারি ডিজিজ’।

কিন্তু শুরু থেকেই এর উল্লেখযোগ্য কোনো উপসর্গ চোখে পড়ে না অনেকক্ষেত্রেই। অনেকগুলো ‘ব্লক’ হয়ে গেলে তারপর গিয়ে শরীর দমে যায়, হয় ‘হার্ট অ্যাটাক’, ‘স্ট্রোক’।

করোনারি আর্টারি ডিজিজ (সিএডি) কী?

যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যাটেন আইল্যান্ড ইউনিভার্সিটি হসপিটাল’য়ের ‘নন-ইনভেসিভ কার্ডিওলজিস্ট’ এরিক স্টল ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “করোনারি আর্টারি ডিজিজ’ হওয়ার পেছনে অধিকাংশ সময় দায়ী হয় ‘অ্যাথেরোস্ক্লোরোসিস’, যা আসলে ধমনীতে ‘প্লাক’ জমে তা আটকে যাওয়ার ডাক্তারি ভাষার শব্দ।”

মানুষের জীবনকালে দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় দশকে উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল, ধূমপান, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্থূলতা, শরীরচর্চার অভাব, বংশগত ঝুঁকি ইত্যাদি কারণে এই ‘অ্যাথেরোস্ক্লেরোসিস’ দেখা দেয়। বছরের পর বছর ধরে ‘প্লাক’ জমতে থাকে এবং তখনই জানান দেয় যখন অনেকগুলো রক্তনালী আটকে যায়।

আর জানান দেয় হলো ‘মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন’ বা ‘হার্ট অ্যাটাক’য়ের মাধ্যমে।

প্রভিডেন্স সেইন্ট জোশেফ হসপিটাল’য়ের ‘ইন্টারভেনশন কার্ডিওলজিস্ট’ ডা. জেফরি টাইলার বলেন, “যে রক্তনালী হৃদযন্ত্রের পেশিকে অক্সিজেন যোগায় সেগুলোর নাম ‘করোনারী আর্টারি’। এগুলোতেই ‘কোলেস্টেরল’ আর চর্বি জমে তা সরু হয়ে যায়। যে কারণে দেখা দেয় ‘করোনারি আর্টারি ডিজিজ’।”

সিএডি প্রতিরোধযোগ্য

ডা. স্টল বলেন, “রক্তনালী আটকে যাওয়ার কারণগুলোর মধ্যে বেশিরভাগই প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু তারপরও তা মানুষের প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে প্রতিবছরই।”

ডা. টাইলার যোগ করেন, “মূলত আমাদের জীবনযাত্রা ও খাদ্যাভ্যাসই এখানে দায়ী। ধূমপান অন্যতম প্রধান কারণ এই রোগ দেখা দেওয়ার। খাদ্যাভ্যাসে ফল ও সবজি কম থাকা সিএডি’র ঝুঁকি বাড়ায় মারাত্মক হারে। উচ্চ রক্তচাপ আর উচ্চমাত্রায় কোলেস্টেরল এই রোগ দেখা দেওয়ার প্রথমসারির কারণগুলোর মধ্যে একটি।”

অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস আর শরীরচর্চার অভাবেই এই দুটি সমস্যা শরীরে বাসা বাঁধে। আর সবশেষে বলা যায় বংশগত সমস্যার কথা।

কোন উপসর্গ দেখলে চিকিৎসকের কাছে যাবেন

ডা. টায়লার বলেন, “রোগ যখন শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে তখন অধিকাংশ রোগীই কিছু বুঝতে পারেন না। ‘প্লাক’ যখন বাড়তে শুরু করে তখন রোগী বুকের মাঝখানে অনেকসময় অস্বস্তি অনুভব করেন। সেই অস্বস্তি আবার হাত, পিঠ, চোয়াল, পাকস্থলী ইত্যাদি অংশে ছড়িয়ে যায়।”

যদি শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, বুকে অস্বস্তি হয়, মনে হয় জ্ঞান হারাবেন কিন্তু কয়েক মিনিট পর আবার স্বাভাবিক হয়ে যান, হৃদস্পন্দনের গতি বেড়ে যায় তবে দ্রুত আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

নারীদের জন্য উপসর্গ ভিন্ন

ডা. স্টল বলেন, “নারীদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়া এবং প্রাণ হারানোর ঝুঁকি বেশি। কারণ  গর্ভধারণজনিত বিভিন্ন সমস্যা, রজঃবন্ধ, মুখে খাওয়া জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন ইত্যাদি। নারীদের মাঝে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার প্রবণতা কম হওয়াতে তাদের রোগ ধরা পড়ে দেরিতে। নারীর উপসর্গগুলো অধিকাংশ ক্ষেত্রে দ্বন্দ্বে ফেলে দেয়। সামান্য ব্যথা, বদহজম, অবসাদ, বমিভাব ইত্যাদি হয় নারীদের প্রাথমিক উপসর্গ। নারীদের ক্ষেত্রে ক্যান্সার ও অন্যান্য দূরারোগ্য ব্যাধির চাইতে বেশি প্রাণঘাতি হৃদরোগ।”

আরও পড়ুন:

Also Read: বুকে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র লক্ষণ নয়

Also Read: বুকে ব্যথা হার্ট অ্যাটাকের একমাত্র লক্ষণ নয়

Also Read: মানসিক কারণে হওয়া বুকে ব্যথার লক্ষণ