হার্ট অ্যাটাক মানেই বুক ব্যথা কিংবা শরীরের বাম পাশে ব্যথা। তবে হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভিন্ন কথা।
হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে যে উপসর্গগুলোকে সাধারণ মানুষ প্রধান বলে মনে করেন সেগুলোতো আছেই। পাশাপাশি নারীরা সম্পূর্ণ ভিন্ন উপসর্গ অনুভব করেন পুরুষের তুলনায়।
আমেরিকাল হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের গবেষণার উদ্ধতি দিয়ে বেস্টলাইফ ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনেকসময় দেখা যায় মূল ‘কার্ডিয়াক ইভেন্ট’য়ের কয়েক সপ্তাহ আগ থেকেই উপসর্গ দেখা দেওয়া শুরু করে। তবে রোগী তা ধরতে পারে না।
৯৫ শতাংশ নারীর মাঝে হার্ট অ্যাটাকের প্রায় এক মাস আগ থেকে নতুন উপসর্গ দেখা দেয়। আর তার মধ্যে ৭১ শতাংশের উপসর্গই মিলে যায়।
অস্বাভাবিক ক্লান্তি: ২০০৩ সালে ‘আমেরিকাল হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ ৫০০ নারীকে নিয়ে একটি জরিপ চালায়, যাদের প্রত্যেকেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হয়েছেন। ‘সার্কুলেশন’ নামক জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়।
এদের মধ্যে ৯৫ শতাংশই জানান, হার্ট অ্যাটাকের প্রায় এক মাসেই আগ থেকেই তারা অনুভব করছিলেন শরীরের কোথাও একটা সমস্যা হচ্ছে। ৭১ শতাংশ বলেছেন তাদের ক্লান্ত লাগত কোনো ভারি পরিশ্রম না করেও।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’য়ের এক প্রতিবেদনে ‘কার্ডিওলজিস্ট’ লেজলি চো বলেন, “অবসাদের কোনো অনুভূতি যদি কারও কাছে নতুন ধরনের হয় কিংবা তার কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া না যায় তবে সেখানে হৃদরোগ কিংবা হার্ট অ্যাটাকের একটা সম্ভাবনা সবসময়ই থাকে।”
“প্রতিদিন যেসব কাজ করা হয় সেই কাজ করতে গিয়ে, যেমন সামান্য বিছানা গোছাতে গিয়েই যদি কেউ ক্লান্তি অনুভব করেন তবে তার অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।”
অনিদ্রা: ঘুমাতে না পারাও হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ হওয়া সম্ভব।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের ওই জরিপ মতে, প্রায় ৪৮ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন হার্ট অ্যাটাকের এক মাস আগ থেকেই রাতে ঘুমাতে তাদের সমস্যা হতো।
ডা, লেজলি চো বলেন, “অতিরিক্ত ক্লান্তি, যার কোনো উপযুক্ত কারণ নেই, আবার ঘুমাতেও সমস্যা হচ্ছে, তবে বুঝে নিতে হবে হার্ট অ্যাটাক বেশি দূরে নয়।”
বুকব্যথা: হার্ট অ্যাটাক মানেই যেন বুকব্যথা। তবে জরিপ বলছে এই উপসর্গটাই নাকি সবচাইতে কম অনুভব করেছেন অংশগ্রহণকারীরা। মাত্র ৩১ শতাংশ।
অপরদিকে ৪৩ শতাংশ বলেছেন তারা কোনো বুকব্যথাই টের পাননি।
‘ইউনিভার্সিটি অফ আরকানসাস ফর মেডিকেল সায়েন্সেস’য়ের অধ্যাপক জিন সি. ম্যাকসুয়েনি বলেন, “পুরুষের তুলনায় নারীর মাঝে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বুকব্যথা দেখা না দেওয়া অনেকে হার্ট অ্যাটাক চিহ্নিত করতে পারেন না। একই কারণে রোগ নির্ণয়েও ভুল হয় এবং সঠিক চিকিৎসা ছাড়াই রোগীকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগ থেকে ছাড় দেওয়া হয়। কারণ অনেক চিকিৎসকও ধারণা করেন বুকব্যথাই হার্ট অ্যাটাকের প্রধান লক্ষণ।”
দম আটকে আসা: হার্ট অ্যাটাকের সবচাইতে বেশি চোখে পড়া লক্ষণ দম আটকে আসা বা ‘শর্টনেস অফ ব্রেথ’, জানা যায় আমেরিকাল হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’য়ের ওই জরিপে, বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে।
জরিপে ৫৮ শতাংশ নারী এই উপসর্গ অনুভব করেছেন বলে জানান।
নিউ ইয়র্কের ‘জন এইচ. টিশ সেন্টার ফর উইমেন’স হেলথ’য়ের ‘মেডিকাল ডিরেক্টর’ ডা. নিসা গোল্ডবার্গ বলেন, “প্রাণঘাতি হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণগুলো সামান্য বুক জ্বালাপোড়া ভেবে উড়িয়ে দেওয়ার প্রবণতা নারীদের মধ্যে বেশি। নিজের হার্ট অ্যাটাক হতে পারে বা হয়েছিল এমনটা জানতে পেরে অনেক নারীকেই আমরা অবাক হতে দেখেছি।”
তাই বুকব্যথা থাক আর না থাক, দম আটকে আসার অনুভুতি হলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন