নিজের মতো করে ‘ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট’ খাওয়ার অভ্যাস শরীরে কাজে নাও লাগতে পারে।
Published : 02 Jan 2023, 11:44 AM
সুস্থ থাকতে কত কিছুই না করা হয়।
তবে সব স্বাস্থ্যকর অভ্যাস শরীরে ইতিবাচক প্রভাব নাও রাখতে পারে। তাই দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের ক্ষতি এড়াতে প্রতিদিনের অভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া ভালো।
দিনে আট গ্লাস পানি পান
যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলস’য়ের ‘ফাংশনাল মেডিসিন’য়ের বিশেষজ্ঞ এলরয় ভোজদানি রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “গড় হিসেবে প্রতিদিন মানুষের শরীরের পানি বদলাতে হয় প্রায় ২.৪ লিটার। দিনে আট গ্লাস পানি পান করার পরামর্শটা কোনো বৈজ্ঞানিক পরীক্ষালব্ধ সিদ্ধান্ত নয়, বরং সর্ব সাধারণের জন্য সহজ একটা পরামর্শ যা সবার জন্যই কার্যকর হবে।”
প্রাত্যহিক কার্যকলাপ ও তরলের ভিন্ন উৎসের বিবেচনায় করাও আট গ্লাসের বেশি কিংবা কম পানি প্রয়োজন হতে পারে। যদি ত্বক শুষ্ক হয়, ঠোঁট শুকিয়ে বা ফেটে যায় তবেই ধরে নিতে হবে পর্যাপ্ত পানি পান করা হয়নি।
তাই আট গ্লাস পানি পান করার পরামর্শটা মেনে চলা আসলেই উপকারী।
তিনি আরও বলেন, “পানি কিনে পান করার সময় চেষ্টা করুন কাচের বোতল কিনতে। আরও ভালো হয় যদি কাচ কিংবা ‘স্ট্রেইনলেস স্টিল’য়ের বোতলে বিশুদ্ধ পানি সঙ্গে রাখা যায়। প্লাস্টিকের বোতলে পানি পান করা সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক উপাদান শরীরে প্রবেশ করছে। যেমন- ‘বিপিএ’, ‘ফালেইটস’ ইত্যাদি। আর পরিবেশের জন্য প্লাস্টিক ক্ষতিকর।”
প্রতিদিন দাঁত ‘ফ্লস’ করা
লস অ্যাঞ্জেলস’য়ের ‘এবিসি এক্সট্রিম মেইকওভার’য়ের ‘কসমেটিক ডেন্টিস্ট’ এবং ‘বিলিয়ন ডলার স্মাইল’ বইয়ের রচয়িতা বিল ডর্ফম্যান বলেন, “দাঁত ব্রাশ করার মাধ্যমে প্রতি পাঁচটি দাঁতের মধ্যে তিনটির উন্মুক্ত অংশটুকু পরিষ্কার হয়। তাহলে বাকিটুকুর জন্য কি করতে হবে? ‘ফ্লস’। যদি তা না করা হয়, তবে দুই দাঁতের মধ্যবর্তী বদ্ধ স্থানে, যেখানে ব্রাশ পৌঁছাতে পারে না, সেখানে ‘ক্যাভিটিস’ সৃষ্টি হবে।”
আর সেটার চিকিৎসা সঠিক সময়ে না হলে দেখা দেবে আরও নানান জটিল সমস্যা।
আবার পরিষ্কার করার পরও দাঁতের ফাঁকে যদি ‘প্লাক’ রয়ে যায় তবে সেটা থেকে মুখে সংক্রামক রোগও দেখা দিতে পারে।
ডা. ডর্ফম্যানের পরামর্শ হল, “তাই সকলের উচিত দিনে অন্তত একবার দাঁত ব্রাশ করার আগে ‘ফ্লস’ করার অভ্যাস গড়ে তোলা।”
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো স্প্রিংস’য়ের ‘গার্ডেন অফ দ্য গডস রিসোর্ট অ্যান্ড ক্লাব’য়ের অন্তর্ভুক্ত ‘স্ট্রাটা ইন্টিগ্রেটেড ওয়েলনেস স্পা’র ‘ক্লিনিকাল সার্ভিস’ বিভাগের পরিচালক কেলি গ্র্যাগ বলেন, “শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করতে এবং বিপাকক্রিয়াকে সচল করতে অনেকেই বেছে নেন ‘ক্লেনজ’ বা ‘ডিটক্স’। তবে প্রকৃতপক্ষে সাময়িক সময়ের জন্য দ্রুত ওজন কমিয়ে ফেলা ছাড়া আর কোনো ধারাবাহিক উপকারিতার প্রমাণ নেই এই পদ্ধতি অনুসরণের।”
বিষয় হল, আমাদের শরীর এমনভাবে তৈরি করা হয়েছে যেন সে নিজেই ভেতর থেকে বিষাক্ত উপাদানগুলো বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আর এই পদ্ধতি কর্মক্ষম থাকে যদি মানুষ তার শরীরের নিয়মিত যত্ন নেয়।
প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দেওয়া, কৃত্রিম ‘প্রিজারভেটিভ’ আছে এমন খাবার না খাওয়া, প্রচুর পানি পান করা, প্রতিদিন ঘাম ঝরান, উদ্ভিজ্জ খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমান, চর্বি সামাল দেওয়া- এই কাজগুলো করতে পারলেই হল।
বাকি বিষাক্ত উপাদান বের করার কাজ শরীর নিজেই করে নেবে।
প্রোবায়োটিক খাওয়া
ডা, ভোজদানি বলেন, “দীর্ঘমেয়াদে সুস্বাস্থ্য পেতে চাইলে এবং যদি ‘আইবিএস’ কিংবা কালেভদ্রে প্রায়ই হজমের সমস্যা হয়, তবে ‘প্রোবায়োটিক’ খাওয়া আসলেই জরুরি। এই উপাদান অন্ত্রে ব্যাক্টেরিয়ার সমষ্টিতে পরিবর্তন আনে যা অন্ত্রে সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা কমায়।”
আবার অন্ত্রের সঙ্গে মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের সম্পর্ক আছে এমনটা বহু গবেষণায় উঠে এসেছে। সেই বিবেচনায় অন্ত্র যদি ভালো থাকে তবে মস্তিষ্কের রোগ হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যাওয়া উচিত, যেমন ‘আলসাইমার’স ডিজিজ’, ‘পারকিনসন’স ডিজিজ’।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ‘ল্যাক্টোব্যাসিলি’ ও ‘বিফিডোব্যাক্টেরিয়া’ এই দুই প্রজাতির ব্যাক্টেরিয়া ‘২০ বিলিয়ন সিএফইউ/সার্ভিং’ এই মাত্রায় পাওয়া যাবে এমন প্রোবায়োটিক বেছে নিতে হবে।
সেটা গ্রহণ করতে হবে খাবারের সঙ্গে। সবচাইতে ভালো সবুজ সবজির সঙ্গে মিশিয়ে খেলে।
ক্যালরির হিসাব
নিউ ইয়র্কের ‘ইন্টিগ্রেটিভ মেডিসিন ডায়েটিশিয়ান’ এবং ‘অ্যাকাডেমি অফ নিউট্রিশন অ্যান্ড ডায়েটিকস’য়ে মুখপাত্র রবিন ফোরুতান বলেন, “বাণিজ্যিক খাদ্যাভ্যাসের মেরুদণ্ড হল ক্যালরি গোনা। আসলে এটা কোনো কাজে আসে না।”
এই হিসাবের গোলমাল অনেক এবং একজন মানুষের জন্য অত্যন্ত হতাশাজনক একটি অনুশীলন এই ক্যালরি হিসাব করে খাওয়ার অভ্যাস।
ক্যালরির হিসাবে গোলমাল বাধার একটি বড় কারণ হল খাবার প্রস্তুককারক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের প্রস্তুত করা খাবারের মোট ক্যালরির মাত্রার ২০ শতাংশ কমিয়ে লিখতে পারে মোড়কের গায়ে এবং সেটা আইনত বৈধ।
আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, প্রতিটি মানুষের ক্যালরি গ্রহণ আর খরচের মাত্রা ও ধরন এক নয়।
তাই দিনে কতটুকু খাবার গ্রহণ করলেন তা জানার জন্য গড়পড়তা ক্যালরির হিসাব করা যায় ঠিকই। তবে কঠোরভাবে ক্যালরির হিসাব কষে খাবারের সঙ্গে অস্বাস্থ্যকর সম্পর্ক গড়ে তোলার কোনো মানেই হয় না।
প্রতিদিন ওজন মাপা
গ্র্যাগ বলেন, “কী অর্জন করতে চান তার ওপর নির্ভর করবে এর প্রয়োজনীয়তা। যদি ওজন কমাতে চান বা একটি নির্দিষ্ট ওজনে নিজেকে ধরে রাখতে চান সেক্ষেত্রে প্রতিদিন ওজন মাপা যৌক্তিক হতে পারে।”
তবে এতে আসক্তি চলে এলে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।
মনে রাখতে হবে, নিজের শরীর সম্পর্কে ধারণা পেতে শুধু ওজন মেপেই জানা সম্ভব নয়।
চিকন মানেই ভালো নয়, সেটারও একটা স্বাস্থ্যকর মাত্রা আছে।
ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট
ডা. ভোজদানি বলেন, “হৃদযন্ত্র ও হাড়, দুইয়ের জন্যই ক্যালসিয়াম দরকার। এটি যদি ভোজ্য উৎস থেকে না পান তবে ‘সাপ্লিমেন্ট’ হবে বিকল্প। এতে সবচাইতে বেশি উপকার পাবেন পঞ্চাশোর্ধ নারী-পুরুষ এবং যারা শাকাহারি খাদ্যাভ্যাস মেনে চলেন।”
ক্যালসিয়াম নেওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে, সঙ্গে ‘ভিটামিন ডি-থ্রি’ এবং ‘ভিটামিন কেটু-সেভেন’ নিতে হবে যাতে ক্যালসিয়াম হাড়ে জমা হয়, রক্তনালীতে নয়।
এথেকে বোঝা যায়, বিষয়টা এতটা সহজ নয় যে কিনলাম, খেলাম আর হয়ে গেলো। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে তবেই ‘সাপ্লিমেন্ট’ নিতে হবে।
আরও পড়ুন
স্বাস্থ্যকর অভ্যাস থেকে প্রদাহ