সবচেয়ে পরিতৃপ্তির খাবার হতে পারে আলু। আর খোসাসহ খেতে পারলে বেশি ভালো।
Published : 19 Feb 2024, 04:09 PM
একই সঙ্গে পুষ্টিকর ও পেট ভরা রাখে এরকম খাবার বেছে নেওয়া উপকারী।
সব খাবার সমানভাবে শক্তি দেয় না। কিছু খাবার দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করে। এতে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হয়।
এই ধরনের খাবার চেনা থাকলে সারাদিনের পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি ও অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে খাদ্য-তালিকায় যুক্ত করা যায়।
খাবারের যে গুণে তৃপ্তি বৃদ্ধি পায়
রিয়েলসিম্পল ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রের নর্থ ক্যারলিনা’তে অবস্থিত ‘টপ নিউট্রিশন কোচিং’য়ের প্রধান নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ জর্ডান হিল বলেন, “কোনো খাবারের পরিতৃপ্তি দানের ক্ষমতা নির্ভর করে এর পুষ্টিমানের ওপর।”
“সাধারণত যেসব খাবারের প্রোটিন, আঁশ, চর্বি ও পানির মাত্রা বেশি সেগুলো দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে”- বলেন তিনি।
প্রোটিন, চর্বি ও আঁশ- হজম হতে বেশি সময় নেয়, বিপাকীয় প্রক্রিয়া ধীর করে দেয়। ফলে পুষ্টি শোষণ বিলম্বিত হয় এবং পুষ্টিগুণ খাবার খাওয়ার পর অনেকক্ষণ পর্যন্ত পেট ভরা রাখতে বা পরিতৃপ্তির অনুভূতিতে দিতে পারে।
এই ধরনের খাবার রক্তে ধীরে ধীরে শর্করার নিঃসরণ করে। তাই অনেকক্ষণ পেট ভরা অনুভূত হয়।
টাইপ টু ডায়াবেটিসের মতো যাদের বিপাক সংক্রান্ত জটিলতা রয়েছে তাদের মাঝারি রক্তের শর্করা ওঠানামার পাশাপাশি সামগ্রিক পরিপূর্ণতা বা পেট ভরা অনুভূতি বাড়ায়।
কারণ যে খাবার রক্তের শর্করা দ্রুত হ্রাস বৃদ্ধি করে, সেগুলো খাওয়ার পরে দ্রুত পেট ভরা ও দ্রুত ক্ষুধার অনুভূতি দেয়।
খাবার কেনার সময় এর পুষ্টি মূল্যের বিবেচনায় প্রোটিন, চর্বি ও আঁশ বেশি এমন খাবার বাছাই করা উচিত।
পরিতৃপ্তির নির্দেশক
ব্যস্ত জীবনে পুষ্টিকর খাবার খুঁজতে প্রোটিন, চর্বি, আঁশ ইত্যাদি গণনা করার বিষয়টা বাস্তবসম্মত নয়।
১৯৯৫ সালে অস্ট্রেলিয়া’র ‘ইউনিভার্সিটি অফ সিডনি’র বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের গবেষকরা ম্যাট্রিক পদ্ধতিতে খাবারের পরিতৃপ্তি পরিমাপের জন্য একটি মান নির্ধারক নিয়ে আসেন যা ‘স্যাটাইটি ইনডেক্স’ বা ‘পরিতৃপ্তির নির্দেশক’ হিসেবে পরিচিত।
ব্যাখ্যা করে হিল বলেন, “স্যাটাইটি ইনডেক্স’ হল একটি পদ্ধতি যা বিভিন্ন খাবারের পরিতৃপ্তিমূলক প্রচেষ্টাকে পরিমাপ করে।”
অত্যন্ত ক্ষুধার্ত, ক্ষুধার্ত, আধা ক্ষুধার্ত, অনুভূতিহীন, আধা সন্তুষ্ট, সন্তুষ্ট বা অত্যন্ত সন্তুষ্ট ইত্যাদি থেকে তারা কীভাবে তৃপ্ত বোধ করবেন এর ওপর ভিত্তি করে খাবারগুলোর ‘স্কোর’ বা সূচক নির্ধারণ করা হয়।
গবেষণার জন্য ৩৮টি বিভিন্ন খাবার বিশ্লেষণ করে। প্রতিটিকে ২৪০ ক্যালোরি অংশের ওপর ভিত্তি করে এর পরিতৃপ্তি সূচক বা ‘এসআই স্কোর’ নির্ধারণ করেন।
শতভাগ ‘এসআই’য়ের মান নিয়ন্ত্রণ হিসাবে সাদা রুটি ব্যবহার করা হয়েছিল। সর্বনিম্ন এসআই খাদ্য ৪৭ শতাংশ যা পাওয়া যায় ক্রসান্টে।
সর্বোচ্চ পরিতৃপ্তি দায়ক খাবারের স্কোর ছিল ৩২৩ শতাংশ যা পাওয়া গিয়েছিল আলুতে।
সীমিত সংখ্যক খাদ্য বিশ্লেষণ এবং প্রায় ৩০ বছরের পুরানো সময়ের কারণে এই সূচক দৈনন্দিন স্বাস্থ্য-সেবা ও ‘ডাইটেটিক্স’ বা খাদ্য-নির্বাচন-বিদ্যায় অনুশীলণ করা হয় না।
তবে এর পিছনে কিছু ধারণা রয়েছে যেমন- পুষ্টির ঘনত্ব বা পুষ্টির পরিমাণ ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য ও গুরুত্বপূর্ণ।
সব চেয়ে বেশি পরিতৃপ্তিকর খাবার হল
বাদাম ও বীজ: নানানভাবে শরীরের জন্য উপকারী। এটা পেট ভরা রাখে। পুষ্টির যোগান দেয়। এতে রয়েছে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ যা পেট ভরা রাখে। এই খাবার তালিকার শীর্ষ অবস্থান করে।
সুপ: নানান রকম উপাদান যোগ করা যায়। এই খাবার স্বাস্থ্যকর প্রোটিন (প্রাণিজ, উদ্ভিজ্জ), উচ্চ আশ (সবজি) ও প্রয়োজনীয় পানির যোগান দেয়।
ডিম: সকালের শুরুটা ডিম দিয়ে করলে সারাদিনের পর্যাপ্ত প্রয়োজনীয় শক্তি পাওয়া যায়। এই খাবার প্রোটিন ও চর্বি উপাদান সমৃদ্ধ যা দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে।
লক্ষণীয়, ডিমে থাকা অধিকাংশ চর্বি কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ। যদিও আগে বিবেচনা করা হত কোলেস্টেরল হৃদরোগের সাথে সম্পর্কিত।
তবে সম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে খাদ্য তালিকায় কোলেস্টেরল গ্রহণ হৃদরোগের সাথে সরাসরি সম্পর্কযুক্ত নয়।
স্মুদি: পুষ্টিগুণে ভরপুর, একই সাথে পেট ভরবে এমন খাবার খেতে চাইলে স্মুদি খুব ভালো পছন্দ।
স্মুদিতে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও আঁশ যোগ করতে বাদামের মাখন, প্রোটিন পাউডার, দই, দুধ, ফল, সবজি, হ্যাম্প, চিয়া বীজ, সন বীজ ইত্যাদি যোগ করা যায়।
কমলা: গবেষকদের ২০২ শতাংশ পরীক্ষার ভিত্তিতে দেখা গেছে, কমলার ‘স্যাটাইটি ইনডেক্স’ সবচেয়ে বেশি।
কমলা উচ্চ আঁশ ও পানীয় উপাদান সমৃদ্ধ। তাজা, সালাদ ও ফলের রস তৈরি করেও কমলা গ্রহণ করা যায়।
রাতের খাবারে এটা রাখতে চাইলে বাদাম ও নোনতা পনির দিয়ে পরিবেশন করা যায়।
সামুদ্রিক খাবার: সামুদ্রিক খাবার প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বির ভালো উৎস। সাদা মাছে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ এসআই থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে এর মান ২২৫ শতাংশ ।
চর্বিবহুল মাছ যেমন- স্যামন, টুনা, সার্ডিন এক্ষেত্রে বাছাই করা যেতে পারে।
পপকর্ন: পেট পরিপূর্ণ রাখে এমন আঁশ সমৃদ্ধ খাবার। এর এসআই স্কোর ১৫৪ শতাংশ। মাখন এবং লবণ দিয়ে পপকর্ন সবসময়ই মজাদার। তবে ভালো পুষ্টি গ্রহণ করতে চাইলে পপকর্নের সাথে অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত জলপাই তেল বা ভিটামিন এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ পুষ্টিকর ইস্ট যোগ করা যেতে পারে।
খোসাসহ আলু: জটিল কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ আঁশ বেশি থাকে। খোসাসহ আলু খাওয়া হলে আঁশের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
‘স্যাটাইটি ইন্ডেক্স’ সমীক্ষার ওপর ভিত্তি করে বলা যায়, পরিতৃপ্তির দিক থেকে আলু সেরা।
মটর: অন্যান্য ডাল ও মটরের মতো মটরশুঁটিতে আছে প্রোটিন ও আঁশ যা পেট ভরা রাখতে সহায়তা করে। সুপ, সালাদ, টাকোস, পাস্তা ও অন্য যে কোনো খাবারে এগুলো যোগ করা যায়।
আরও পড়ুন