বেশি খাওয়ার ফলে হাঁসফাঁস-ভাব এড়াতে নানান পন্থা অবলম্বন করা যায়।
Published : 26 Nov 2023, 01:48 PM
অধিভোজন মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয় এর ফলে পেট ফোলা, বদহজম, গ্যাস হওয়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
তবে দাওয়াত আর ছুটির দিনে ভালো ভালো খাবার এড়ানোর উপায়ও থাকে না। তাহলে কী করবেন? খাবেন না?
পরিমাণের প্রতি খেয়াল রাখা: “সব খাবারই খাবেন তবে নজর রাখতে হবে পরিমাণের দিকে”- পরামর্শ দেন মার্কিন পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “দ্রুত অনেক বেশি খাবার খাওয়া হলে হজমে সমস্যা সৃষ্টি করে। খুব বেশি ক্ষুধা নিয়ে খাবার খেলে পরিমাণে বেশি খাওয়া হয়। তাই সারাদিন নির্দিষ্ট সময় বিরতিতে অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়ার অনুশীলন করা উচিত। দুবেলা খাওয়ার মাঝে হালকা নাস্তা করে নেওয়া ভালো উপায়।”
খাবার ভালোমতো চিবিয়ে খাওয়া: “খুব দ্রুত খেলে অথবা খাওয়ার সময় কথা বললে, খাবার পর্যাপ্ত চিবিয়ে না খাওয়ার ঝুঁকি থাকে। ফলে হজমতন্ত্রকে খাবার পরিপাক করতে অনেক বেশি পরিশ্রম করতে হয়। যে কারণে দেখা দেয় পেট ফোলাভাব”- বলেন টেক্সাস নিবাসী পুষ্টিবিদ কেলসি হ্যাম্পটন।
তাই প্রত্যেকবার খাবার খাওয়ার সময় যথেষ্ট চিবিয়ে খেতে হবে।
সঙ্গ উপভোগ করা: ছুটির দিনে পরিবার-পরিজন বন্ধুবান্ধব এদের সবার সাথে মিলিয়ে আনন্দ ফূর্তি করে খাবার খাওয়া যেতে পারে। তাহলে খাবারের চেয়ে আশপাশের বিষয়ের প্রতি বেশি মনোযোগ যায়। ফলে তুলনামূলক কম খাবার গ্রহণের সম্ভাবনা থাকে।
উপরের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার মাধ্যমে অধিভোজন থেকে বিরত থাকা যায়। তবে কোনোভাবে যদি পেটে ফোলাভাব বা অস্বস্তি দেখা দেয় সেক্ষেত্রে উপশমের কথাও জানিয়েছেন এই দুই পুষ্টিবিদ।
আদা
কড়া ঘ্রাণ সমৃদ্ধ মসলা আদা পেটের ফোলাভাব কমাতে সহায়তা করে। এতে আছে পাকস্থলী ঠাণ্ডা করার ক্ষমতা যা পেটের গ্যাস ও ফোলাভাব কমাতে পারে।
আদার সুফল পেতে আদার তৈরি চকলেট, চা অথবা আদার তৈরি আচার খাবারের পরে খাওয়া যেতে পারে। তবে অনেকক্ষেত্রে বমিভাব হলেও হজমের জন্য খুবই উপকারী।
আর্দ্র
আর্দ্র থাকা ফোলাভাব কমাতে এবং অধিভোজন থেকে বিরত থাকতে সহায়তা করে। খাবার পরিপাকতন্ত্রে যেতে সহায়তা করে তরল উপাদান।
শরীর আর্দ্র থাকলে খাবার হজম করতে প্রয়োজনীয় পরিপাক রস তৈরিতে পরিপাকতন্ত্রের ওপর কম চাপ সৃষ্টি হয়।
খাওয়ার পরে নিয়মিত ফোলাভাব দেখা দিলে পর্যাপ্ত পানি পান করা হচ্ছে কিনা সেদিকে মনোযোগ দিতে হবে। প্রাপ্ত বয়সে দৈনিক ৮০ আউন্স তরলের অর্ধেকটা পানি থেকে গ্রহণে সচেষ্ট থাকতে হবে।
সর্বোচ্চ তরলের উপকারিতা পেতে একবারে অনেক বেশি পানি পান না করে সারাদিনকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে পানি পানের চেষ্টা করতে হবে।
গতিশীল থাকা বা চলাফেরা করা
হজম স্বাস্থ্য ভালো রাখার আরেকটি ভালো উপায় হল গতিশীলতা বা নড়াচড়া করা। খাওয়ার পরে হালকা কাজকর্মে নিয়োজিত থাকা উচিত। হালকা পাতলা ঘরের কাজ অথবা বাইরে হাঁটতে যাওয়া ইত্যাদি হজম বাড়ায় এবং ফোলাভাব হ্রাস পায়।
পাশ ফিরে শোয়া
খাওয়ার পরে সোজা হয়ে শুয়ে থাকা ঠিক নয় বরং একপাশ হয়ে শুয়ে থাকলে হজম ক্রিয়া উন্নত হয়।
যদি পেটফোলাভাব দেখা দেয় তবে উপুর হয়ে শুয়ে থাকলে উপকার পাওয়া যায়।
এরফলে খাবার পরিপাক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাকস্থলী থেকে অন্ত্রে পৌঁছায়। গবেষকরা দেখেছেন- বাম পাশ ফিরে শোয়া ‘গ্যাস্ট্রোসোফাজিয়ল রিফ্লাক্স ডিজিজ’য়ের ঝুঁকি কমায়।
অনেক সময় পেটের ফোলাভাব কেবল অভ্যন্তরের রাসায়নিক ভারসাম্যহীনতার জন্য হয় না বরং অনেক ক্ষেত্রে তা অতিরিক্ত প্রক্রিয়াজাত খাবারের কারণে হয়ে থাকে।
হজমক্রিয়াকে স্বাভাবিক রাখতে সারাদিন অল্প অল্প পরিমাণে খাবার খাওয়া উচিত। যদি দুপুরে খাবারের পরে পেটফোলা অনুভূত হয় তাহলে রাতে ভারী খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। পরিবর্তে দিনে দুতিনবার হালকা হালকা নাস্তা খেতে হবে।
হজমের সাহায্য করে এমন খাবার ফোলা ভাব কমাতে সহায়তা করে সেক্ষেত্রে ব্রোথ ভিত্তিক সুপ খাওয়া যেতে পারে।
কোমল পানীয় এড়িয়ে চলা
কার্বোনেইটেড, সোডা ও অন্যান্য বুদবুদ সৃষ্টিকারী পানীয় পান ফোলাভাব আরও বাড়িয়ে তোলে। এই ধরনের পানীয় খাবারের পরপর না খাওয়াই ভালো।
কার্বোনেইটেড পানীয় পান করতে চাইলে দুবেলা খাবারের মাঝামাঝি সময়ে অথবা খাবারের সাথে অল্প পরিমাণে গ্রহণ করা যেতে পারে।
একইভাবে হজম রসের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। অন্ত্রে থাকা স্বাস্থ্যকর ব্যাক্টেরিয়া হজমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রোবায়োটিকস’য়ে অনেক সময় ভারসাম্যহীনতা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করা উপকারী হতে পারে।
যদিও প্রোবায়োটিক সম্পূরক খাওয়ার পর পরই খেলে ফোলাভাব কমে। প্রতিদিন সম্পূরক গ্রহণ হজম অস্বস্তি কমাতে সহায়তা করে এবং এটা পেট ফোলাভাব খুব বেশি হলে তা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।
আরও পড়ুন
বাইরে খেয়েও ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখার উপায়