চুল ত্বক সুন্দর রাখতে চাইলে বায়োটিন গ্রহণ করতে হবে।
Published : 27 Mar 2025, 05:13 PM
স্বাস্থ্যকর চুল, উজ্জ্বল ত্বক ও মজবুত নখের জন্য বায়োটিন বা ভিটামিন বি-সেভেন প্রয়োজন।
সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি এই ভিটামিন শরীরের শক্তি উৎপাদন, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও বিপাকক্রিয়াতেও ভূমিকা রাখে।
যেহেতু শরীর নিজে থেকে বায়োটিন তৈরি করতে পারে না, তাই খাদ্যতালিকায় বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা জরুরি।
বিশেষ করে বাংলাদেশে অনেক মানুষই নিরামিষভোজী বা নির্দিষ্ট ধরনের খাবারের ওপর নির্ভরশীল তাই বায়োটিনের অভাব হতেই পারে।
এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পুষ্টিবিদ ভায়োলেটা মরিস এবং ‘বডি টু সোল হেল্থ' প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ও পুষ্টিবিদ জেনিফার নিকোল বিয়াঞ্চিনি রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত এক প্র্রতিবেদনে জানিয়েছেন- বায়োটিন মূলত কেরাটিন নামক প্রোটিনকে শক্তিশালী করে, যা চুল, ত্বক ও নখের প্রধান উপাদান।
পাশাপাশি এটি স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্রম ঠিক রাখতে এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
ডিম: ডিমের কুসুম বায়োটিনের অন্যতম উৎস। একটি ডিমে প্রায় ১০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে। এটি উচ্চমানের প্রোটিন, ভিটামিন ডি ও কোলিন সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়। সকালের নাস্তায় সিদ্ধ, অমলেট বা ভাজা ডিম খাওয়া যেতে পারে।
স্যামন মাছ: ১০০ গ্রাম সামুদ্রিক মাছে প্রায় ৫ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে। এটি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডস ও প্রোটিনের ভালো উৎস, যা হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
তবে বাংলাদেশে স্যামন মাছ তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল। তাই এর বিকল্প হিসেবে কোরাল, রুই, কাতলা মাছ খাওয়া যেতে পারে।
সয়াবিন: সয়াবিন এবং এর থেকে তৈরি বিভিন্ন খাবার, যেমন টোফু, সয়া মিল্ক ও টেম্পে বায়োটিন সমৃদ্ধ। আধা কাপ সয়াবিনে প্রায় ১৯.৩ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন পাওয়া যায়। এটি একটি পূর্ণাঙ্গ উদ্ভিজ্জ প্রোটিন, যা পেশির বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
মিষ্টি আলু: এই খাবার বাংলাদেশে প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। অর্ধেক কাপ মিষ্টি আলু ২.৪ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন সরবরাহ করে। এটি বেটা-ক্যারোটিন সমৃদ্ধ, যা ভিটামিন এ-তে পরিণত হয়ে চোখ ও ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। ভর্তা, ভাজি বা ঝোল হিসেবেও এটি খাওয়া যেতে পারে।
সূর্যমুখীর বীজ: প্রতিদিনের খাবারে সহজেই যোগ করা যায় এমন একটি খাবার হল সূর্যমুখীর বীজ। প্রতি ২৫ গ্রামে ২.৬ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে। এটি হৃদযন্ত্রের জন্য ভালো চর্বি, ম্যাগনেসিয়াম ও প্রোটিন সরবরাহ করে।
বাদাম (আখরোট, কাজু, কাঠবাদাম): বিশেষ করে কাঠবাদামে প্রতি ২৫ গ্রামে ১.৫ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে। এটি ভিটামিন ই, স্বাস্থ্যকর চর্বি ও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস, যা স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা উন্নত করে।
সার্ডিন মাছ: বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যতালিকায় ইলিশ বা পুঁটি মাছের মতো ছোট মাছ সাধারণত বেশি থাকে, তবে সার্ডিনও একটি চমৎকার বিকল্প। প্রতি ১০০ গ্রামে ৫ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে এবং এটি ওমেগা-থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিডসের ভালো উৎস।
গাঁজান খাবার (ইস্ট বা ব্রিউয়ার’স ইস্ট): ব্রিউয়ার’স ইস্ট হল এক ধরনের খামির, যা রুটি ও কিছু পানীয় তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। প্রতি চামচে ১৪ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে। বাংলাদেশে এটি ততটা প্রচলিত নয়, তবে বিশেষ ধরনের পুষ্টিগুণের জন্য এটি জনপ্রিয় হচ্ছে।
কলিজা (গরু, মুরগি, খাসি): গরুর কলিজায় ১০০ গ্রামে ৩০.৮ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে, যা প্রতিদিনের চাহিদার চেয়েও বেশি। এটি লৌহের চমৎকার উৎস, যা শরীরে অক্সিজেন পরিবহনে সহায়তা করে। তবে অতিরিক্ত খেলে কোলেস্টেরল বাড়তে পারে, তাই পরিমিত পরিমাণে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
মাশরুম: এক কাপ মাশরুমে ৫.৬ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন থাকে। এটি ক্যালোরি কম কিন্তু উচ্চমাত্রার ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। স্যুপ, তরকারি, পাস্তা বা সালাদে ব্যবহার করা যায়।
যে কারণে প্রতিদিন বায়োটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উচিত
গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ৩০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন গ্রহণ করা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। যদিও বেশিরভাগ মানুষ এই পরিমাণ খাদ্য থেকে পেয়ে যান, তবে নিরামিষভোজী বা যারা নির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করেন, তাদের জন্য ঘাটতির কারণ হতে পারে।
এছাড়া গর্ভবতী বা স্তন্যদানকারী মায়েদের বায়োটিনের চাহিদা বেশি থাকে। বাংলাদেশের মানুষের জন্য সহজলভ্য ও পুষ্টিকর এসব খাবার নিয়মিত গ্রহণ করলে শুধু চুল ও ত্বকই নয় বরং পুরো শরীরের সুস্থতায় বড় পরিবর্তন আনা যাবে।
আরও পড়ুন
চল্লিশের পর থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান বেশি প্রয়োজন