Published : 10 Jan 2024, 02:17 PM
নানান স্বাস্থ্যোপকারিতা পাওয়া যায় সবজি ও ফল থেকে।
তবে নারী-পুরুষ-শিশু-বৃদ্ধ বা জীবনযাপনের ওপর সবজি ও ফল খাওয়ার পরিমাণ নির্ভর করে না।
পর্যাপ্ত সবজি ও ফল খাওয়ার উপকারিতা
প্রকার ভেদে উপকারিতা ভিন্ন হতে পারে। তবে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য হাতের নাগালে থাকা বেশিরভাগ ফল ও সবিজতে থাকা উপাদানে তেমন কোনো ভিন্নতা নেই।
ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস
আঁশ: সব ধরনের ফল ও সবজিতে কিছু পরিমাণ হলেও আঁশ থাকে, যা স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইটস- রিয়েলসম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক পুষ্টিবিদ ক্রিস্টিনা ম্যানিয়ান। এই উপাদান সার্বিকভাবে অন্ত্র, রোগ প্রতিরোধ ও বিপাকীয় ক্ষমতা এবং হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
প্রোটিন: শক্তি ও দেহের সার্বিক গঠনের জন্য দরকারী এই উপাদান শুধু মাংস নয় সবজি ও ফল থেকেও পাওয়া যায়। ছোলা, মটর, ডাল উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস। এছাড়া ব্রকলি ও কপি, ফলের মধ্যে পেয়ারা ও কিউই এবং বাদাম আর বীজ ধরনের খাবার থেকে মিলবে প্রোটিন।
স্বাস্থ্যকর চর্বি: যদিও স্বাস্থ্যকর চর্বি পাওয়া সহজ নয় তবে বেশিরভাগ সবজি, ফল, বাদাম ও বীজ এই চাহিদা পূরণ করতে পারে। এই পুষ্টি উপাদান শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে, কোষের গঠন বজায় রাখে আর সার্বিকভাবে হৃদযন্ত্র ও মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে পারে।
মাইক্রোনিউট্রিয়েন্টস
ভিটামিন ও খানিজ: বেশিরভাগ ভিটামিন ও খনিজের চাহিদা মেটানো যায় সবজি ও ফল খেয়ে। বিপাক থেকে শুরু করে কোষে স্বাস্থ্য, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা, হাড়ের স্বাস্থ্য, হৃদযন্ত্র, মস্তিষ্ক, ত্বক- মানে সার্বিকভাবে দেহ ভালো রাখতে এসব পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন হয়।
উদ্ভিজ্জ যৌগ: গুরুত্বপূর্ণ পথ্য-জাতীয় যৌগ পলিফেনল্স পাওয়া যায় ফল ও সবজি থেকে। বিজ্ঞানিরা প্রায় ৮ হাজারের ওপরে উদ্ভিজ্জ যৌগের সন্ধান পেয়েছে যেগুলোর একেকটির উপকারিতা মানব দেহে একেক রকম।
কী পরিমাণ ফল ও সবজি প্রতিদিন খাওয়া উচিত?
উপকারের কথা না হয় জানা হল। তবে কতটা সবজি ও ফল খেলে এসব পুষ্টি উপাদান মিলবে সে বিষয়টা কীভাবে বুঝবেন?
এই বিষয়ে ‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ)’র নির্দেশিকায় জানানো হয়, প্রতিদিন পাঁচ-মিশালি ফল ও সবজি খাওয়া উপকারী।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানাচ্ছে- ৮০ গ্রাম হিসেবে দৈনিক পাঁচ পরিবেশনে ফল ও সবজি গ্রহণ করতে হবে।
তবে সবজি থেকে বাদ যাবে আলু, মিষ্টি আলু এবং অন্যান্য শ্বেতসার বহুল মূলীয় সবজি।
যেভাবে গণনা করতে হবে
পুষ্টিবিদ ম্যানিয়ান জানান, সব ফল ও সবজিতে একভাবে পুষ্টি উপাদান থাকে না। তাই প্রকার অনুসারে সার্ভিং বা পরিবেশনের মাপ পরিবর্তিত হয়।
সাধারণভাবে এক পরিবেশন বলতে বোঝায়-
কাঁচা সবজি ও ফল হলে এক কাপ।
রান্না করা, টিনজাত বা হিমায়িত হলে আধা কাপ।
শুকনা ফলের ক্ষেত্রে কাপের এক চতুর্থাংশ। তবে বেছে নিতে হবে আলাদাভাবে চিনি না দেওয়া শুকনা ফল।
ফল ও সবজির রস বা জুসের ক্ষেত্রে চার আউন্স। অবশ্যেই চিনিমুক্ত হতে হবে। তবে জুসের চাইতে সম্পূর্ণ ফল ও সবজি খাওয়া বেশি উপকারী।
শ্বেতসার ভিত্তিক সবজি যেমন- আলু, লাউ, ভুট্টা, মূলা ও গাজর ধর্মী সবজি, শালগম এবং শুঁটি ধরনের খাবার যেমন- ছোলা, বীজ, ডাল- সাধারণত সবজির পরিবেশন হিসেবে ধরা হয় না। কারণ এগুলো হজম হয় শষ্যের মতো করে।
খাদ্যতালিকায় সবজি ও ফল যুক্ত করার উপায়
নানান উপাদেয় পন্থায় দৈনিক খাদ্যতালিকায় সবজি ও ফল যোগ করা যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের অলাভজনক স্বাস্থ্য সংস্থা মায়ো ক্লিনিক এক্ষেত্রে ‘১-২-৩ পন্থা’ প্রয়োগের পরামর্শ দেয়। যেখানে বলা হয়- দৈনিক পাঁচ মিশালি সবজি ও ফল খাওয়ার উপায় হল সকালে এক পরিবেশন, দুপুরের খাবারে দুই পরিবেশন এবং রাতের খাবারে তিন পরিবেশন ফল ও সবজি যোগ করা।
আর ফল ও সবজি দিনের খাবার এবং নাস্তা হিসেবেও গ্রহণ করা যায়।
টাটকা বা হিমায়িত ফল যেমন- বিভিন্ন ধরনের বেরিজাতীয় ফল, কলা, আম, আনারস ও আপেলের সাথে শাক, কপি দিয়ে মিশিয়ে স্মুদি তৈরি করে খাওয়া যায়। এক্ষেত্রে কয়েক পরিবেশন গ্রহণ করা যায়।
ডিম ভাজির সঙ্গে অল্প ভাজা সবজি যোগ করে খাওয়া যায় মজা করে।
সকালে স্যান্ডউইচ খেতে চাইলে যোগ করা যায় টমেটো, পেঁয়াজ বা ক্যাপ্সিকাম।
ওটস বা দইয়ের সঙ্গে খাওয়া যায় টাটকা ও হিমায়িত ফল।
সালাদ হতে পারে ফল ও সবজি খাওয়ার সেরা উপায়। এক্ষেতে টাটকা ছাড়াও রোস্ট বা গ্রিল্ড করা সবজি দিয়ে তৈরি করা সালাদ খেতে মজা বেশি।
আর পাস্তা, স্যান্ডউইচ ও সুপের সাথে তো সহজেই সবজি মিলিয়ে খাওয়া যায়।
ছবি: টিমা মিরোশনিচেনকো, পেক্সেল ডটকম।
আরও পড়ুন