কাঁচা, হিমায়িত পাস্তুরিত না করা খাবার থেকে অসুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
Published : 11 Apr 2023, 08:02 PM
খাবার থেকে বিষক্রিয়া হলে বমি, পেটব্যথাসহ নানান উপসর্গ দেখা দেয়।
তাই কোন ধরনের খাবার থেকে বিষক্রিয়া হতে পারে সে ব্যাপারে ধারণা থাকা দরকার।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়’য়ের ‘ফুড সেফটি’ সেন্টার’য়ের পরিচালক ও অধ্যাপক ফ্রান্সিস্কো দিয়েজ গঞ্জালেস ‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকমে’ প্রকাশিত প্রতিবেদনে ঘরে ও বাইরে খাবার খাওয়ার সময় প্রয়োজনীয় সুরক্ষার বিষয়ে সতর্ক থাকার উপায় ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানান।
ঝিনুক
ঝিনুক এমন একটা খাবার যা বিষক্রিয়া সৃষ্টিকরা খাবারের শীর্ষে থাকে।
ডা. দিয়েজ গঞ্জালেস বলেন, “এগুলো কেবল ব্যাক্টেরিয়া না বরং ভাইরাসও ছড়ায়। বিশেষত তা যখন কাঁচা খাওয়া হয়।”
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’র তথ্যানুসারে, ঝিনুকে রয়েছে ভ্রিব্রিও (ক্ষুদ্রান্ত্রে অসুখ তৈরি করতে পারে এমন ভাইরাস) এবং অন্যান্য ক্ষতিকারক জীবাণু যা কোষে জমাট বাঁধতে পারে।
স্বাদ ও ঘ্রানহীন এমন ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলার সহজ উপায় হয় রান্না করে খাওয়া।
প্রায় কাঁচা মাংস
লন্ডন ভিত্তিক খাদ্য বিজ্ঞানী এবং ‘নালি কন্সাল্টিং’য়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাটালি আলিব্র্যান্ডি বলেন, “কাঁচা মাংসে ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া যেমন- ই কোলি থাকতে পারে যা খাবারে বিষক্রিয়ার সৃষ্টি করে। ভালো মতো রান্না করা মাংসের তৈরি বার্গার খাওয়া এই ঝুঁকি কমায়।”
কাঁচা মাছ
সুশির মতো খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত কাঁচা মাছে ব্যাক্টেরিয়া ও পরজীবী নাশ করতে হিমায়িত করা হয়।
ডা. দিয়েজের মতে, “মাছ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আসার সময় জীবাণু আবার ফিরে আসে। এই সমস্যা সমাধানের সহজ উপায় হল, রান্না করে খাওয়া অথবা যত দ্রুত সম্ভব প্রস্তুতের পরে খেয়ে নেওয়া।”
আলিব্র্যান্ডি ও ডা. দিয়েজ দুজনই মাছ রান্না করে খাওয়াকে বেশি নিরাপদ বলে মনে করেন।
অঙ্কুরিত বীজ
রোগসৃষ্টিকারী খাবারের মধ্যে অঙ্কুরিত বীজ অন্যতম।
ছোলা ও অন্যান্য বীজ-জাতীয় খাবারে অঙ্কুর বের হলে, উষ্ণ তাপমাত্রায় ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া ও অন্যান্য অনুজীবের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে রোগ সৃষ্টি করে।
অঙ্কুরিত শিমের বীজ লিস্টেরিয়া, সালমোনেলা এবং ই কোলি জীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। তাই তা ভালো মতো রান্না করে খেতে হবে বলে জানান, আলিব্র্যান্ডি।
“অঙ্কুরিত বীজ পেট খারাপের ক্ষেত্রে অবদান রাখে। কারণ উষ্ণ ও আর্দ্র অঞ্চলে জন্মায় এবং তা সাধারণত কাঁচা খাওয়া হয়”, ডা. দিয়েজ।
সালাদ ও পত্রল সবজি
ডা. দিয়েজ বলেন, “প্রতি বছর পাতাযুক্ত শাকসবজি থেকে উল্লেখযোগ্য রোগের প্রাদুর্ভাব দেখে থাকি।”
গ্রীষ্মকালে সাধারণত এই ধরনের রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা যায়। এটা মৌসুমিগত কারণেও হতে পারে।
এর প্রধান কারণ জানা না গেলেও অনেকেই ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন যে, এটা আবহাওয়ার কারণে হয়।
ডা. দিয়েজ মনে করেন, উষ্ণ আবহাওয়া জীবাণু সংক্রমণে সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করে।
কাঁচা দুধ
খাবার থেকে রোগের সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখে এমন একটি খাবার হল কাঁচা দুধ।
ডা. গঞ্জালেস বলেন, “গাভী থেকে দুধ দোয়ানোর সময় তা জীবাণু থেকে আক্রান্ত হতে পারে যা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।”
কম সময়ে উচ্চ তাপের মাধ্যমে জীবাণু ধ্বংস করার প্রক্রিয়া ‘পাস্তুরাইজেশন’ নামে পরিচিত। এটা খাবার নিরাপদ রাখার সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
হিমায়িত খাবার
নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপ প্রয়োগে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস হলেও তাপমাত্রা হ্রাস অর্থাৎ হিমায়নের মাধ্যমে এমন কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না।
ডা. দিয়েজ গঞ্জালেস বলেন, “হিমায়িত খাবার রোগজীবাণু মেরে ফেলে না। তাই ধ্বংস করার পদক্ষেপ না নিলে খাবারেই সঞ্চিত থেকে যায় জীবাণু।”
এর মানে হল খাবার গলা শুরু করার সাথে সাথেই এতে জীবাণূর বিস্তার শুরু হয়ে যায়।
বলা হয়ে থাকে, হিমায়িত খাবার মোড়কজাত করার আগেই সম্ভাব্যভাবে রোগের জীবাণুনাশ করে নেওয়া হয়।
যেসব খাবারে বিষক্রিয়া কম
ডা. দিয়েজ গঞ্জালেসের মতে, কিছু খাবারে বিষক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।
এক্ষেত্রে তিনি দূষণের বা ব্যাক্টেরিয়া থেকে সুরক্ষিত রাখতে প্রক্রিয়াজাত করা হয়েছে এমন খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, “টিনজাত খাবার নিরাপদ। কারণ এতে বাইরের জীবাণু বা রোগসৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশের ঝুঁকি কম থাকে।”
এছাড়াও, পাস্তুরিত পণ্য যা তাপের সাহায্যে অনুজীব ধ্বংস করা হয় সেগুলো নিরাপদ। তাজা খাবারে কিছুটা ঝুঁকি থেকে যায় কারণ এতে ব্যাক্টেরিয়া প্রবেশ করতে পারে।
কলা বা কমলার মতো তাজা ফলে এই আশঙ্কা কম। কারণ এর বাইরে প্রতিরক্ষার স্তর বা খোসা থাকে। তাই ফল খাওয়ার আগে খোসাসহ ধুয়ে নিতে বলা হয়।
আরও পড়ুন