স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেইটস হল ‘ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস’।
Published : 30 Jul 2024, 05:28 PM
ওজনোর পন্থার মধ্যে খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। তবে পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করার হিসাব রাখাও গুরুত্বপূর্ণ।
এক্ষেত্রে ‘ম্যাক্রোস’ বা ‘ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস’ গ্রহণের পরিমাণের দিকে নজর রাখতে হয়। কিন্তু কীভাবে?
এই বিষয়ে মার্কিন পুষ্টিবিদন অ্যামি গুডসন বলেন, “প্রধান তিনটি ‘ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস’ হল- ফ্যাটস বা চর্বি, কার্বোহাইড্রেইটস এবং প্রোটিন। সার্বিক স্বাস্থ্যে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।”
ইটদিসনটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ডালাস নিবাসী এই খাদ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, “মস্তিষ্ক, কোষ, ঝিল্লি ও হরমোন উৎপাদনে ভূমিকা রাখে স্বাস্থ্যকর চর্বি। পাশাপাশি দীর্ঘক্ষণ পেটভরা অনুভূতি দেয় বলে খাবার খাওয়া কম হয়।”
তবে চর্বি সাধারণত বেশি ক্যালোরি উৎপাদন করতে পারে। যেমন- কার্বোহাইড্রোইটস ও প্রোটিন প্রতি গ্রামে চার ক্যালোরি উৎপাদন করে তবে প্রতি গ্রাম চর্বি থেকে উৎপাদন করে নয় ক্যালোরি।
তাই সাধারণভাবে কার্ব ও প্রোটিনের চাইতে কম চর্বি গ্রহণ করলেই হয়।
অন্যদিকে কার্বোহাইড্রেইট শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। কার্ব ভেঙে গ্লুকোজ হয়, যা দেহের কার্যক্রম চালাতে ও কর্মক্ষম থাতে সাহায্য করে। তাছাড়া মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় ও দ্রুত শক্তি যোগাতে কাজ করে এই পুষ্টি উপাদান প্রয়োজন।
আর প্রোটিন হল পেশির গঠন ও পুনর্গঠনের প্রধান চাবিকাঠি। পাশাপাশি হরমোন, এঞ্জাইম ও দেহের অন্যান্য রাসায়নিক তৈরিতে ভূমিকা রাখে।
হিসাবের পন্থা
এই উপাদানগুলো কীভাবে হিসাব করে খেলে ওজন কমাতে ভূমিকা রাখবে সে বিষয়ে জানান গুডসন।
ক্যালরি ক্যালকুলেটর অ্যাপ এক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। কারণ খাবার গ্রহণের তালিকা গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়বে।
প্রয়োজন নির্ধারণ করা
দৈনিক ক্যালরির চাহিদা নির্ধারণ করা হল প্রথম পদক্ষেপ। এটা করতে লিঙ্গ, বয়স, উচ্চতা, ওজন ও কাজকর্মের পরিমাণ গোনায় ধরতে হবে।
সাধারণ পদ্ধতিতে প্রতি পাউন্ড ওজনে কত ক্যালরি প্রয়োজন সেটা হিসাব করে দেওয়া আছে। নিজের বর্তমান ওজন ধরে রাখতে চান নাকি কমাতে চান সেটা হিসাব করে ক্যালরি গ্রহণ করা যায়।
সাধারণভাবে ক্যালরির দৈনিক চাহিদা হল এরকম-
ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস গ্রহণের অনুপাত নির্ণয়
ব্যক্তিগত তথ্যের ভিত্তিতে ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস গ্রহণের অনুপাত নির্ণয় করতে হয়। এক্ষেত্রে সাধারণ হিসাবটা হল
প্রোটিন: মোট ক্যালরির ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ।
কার্বোহাইড্রেইটস: মোট ক্যালরির ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ।
ফ্যাট বা চর্বি: মোট ক্যালিরির ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ।
হিসাব করে যে পরিমাণ ম্যাক্রোনিউট্রিয়েন্টস গ্রহণ করা উচিত
১ গ্রাম প্রোটিন= ৪ ক্যালরি।
১ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট = ৪ ক্যালরি।
১ গ্রাম ফ্যাট= ৯ ক্যালরি।
যাদের দৈনিক ২০০০ ক্যালরি প্রয়োজন, গুডসনের এই উদাহরণ তাদের ক্ষেত্রে সহজেই কাজে লাগতে পারবেন। অনুপাত হবে ৩০ শতাংশ প্রোটিন, ৪০ শতাংশ কার্বস এবং ৩০ শতাংশ চর্বি।
আর সূত্রটি হল
প্রোটিন: ২০০০ x ০.৩০ = ৬০০ ক্যালরি / ৪ = ১৫০ গ্রাম।
কার্বোহাইড্রেইটস: ২০০০ x ০.৪০ = ৮০০ ক্যালরি/ ৪ = ২০০ গ্রাম
চর্বি: ২০০০ x ০.৩০ = ৬০০ ক্যালরি / ৯ = ৬৭ গ্রাম।
ওজন কমাতে ‘ম্যাক্রোস’য়ের সামঞ্জস্য বজায় রাখার পন্থা
কী পরিমাণ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করা প্রয়োজন সেটা নির্ধারণ করার পর ওজন কমানোর লক্ষ্যে আরও কিছু বিষয় খেয়াল রাখা প্রয়োজন হয়।
যথেষ্ট প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ নিশ্চিত করা: প্রতিবেলার খাবার প্রোটিন গ্রহণ করা জরুরি। এটা অনেকক্ষণ পেটভরা অনুভূতি দেয় বলে খাবার খাওয়া কম হয়। সাধারণত এক প্লেট খাবারে তিনভাগের একভাগ প্রোটিন থাকা দরকার।
কার্বস হিসাব করা: ফল, সবজি এবং পূর্ণ শষ্য গ্রহণের মাধ্যমে জটিল কার্ব গ্রহণ করতে হবে। সরল চিনি এড়াতে হবে যাতে শরীরের শক্তি বজায় থাকে আর রক্তে শর্করার মাত্রা হঠৎ বেড়ে না যায়। প্লেটের চারভাগে একভাগ উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ কার্বস রাখার পরামর্শ দেন, গুডসন।
শ্বেতসার-হীন সবজি বাছাই করা: ব্রকলি, ফুটি, কুমড়া, গাজর, লাল ক্যাপ্সিকাম- এই ধরনের রঙিন সবজি প্রতিবেলার খাবারে রাখতেহ হবে। সাধারণত প্লেটের আধা ভাগ সবজি রাখতে হয়।
খাবারের স্বাদ বাড়াতে স্বাস্থ্যকর চর্বি: বাদাম, বীজ, অলিভ অয়েল- এগুলো গার্নিশ বা খাবারে ছিটিয়ে খাওয়ার জন্য উপযুক্ত। এগুলো আরও বেশি পেটভরা রাখতে সাহায্য করে। তবে এগুলো মুঠোভর্তি করে নয়, প্রধান খাবারের সাথে অল্প মাত্রায় মিশিয়ে খেতে হবে।
আরও পড়ুন
পুষ্টির চাহিদা মেটানোর আদর্শ খাবার
ওজন ঝরাতে যেসব খাবার এড়ানো উচিত না
চল্লিশের পর থেকে যেসব পুষ্টি উপাদান বেশি প্রয়োজন