দাম দিয়ে ডিম কিনে অস্বাস্থ্যকর পন্থায় রান্না করার-তো কোনো মানে হয় না।
Published : 14 Oct 2024, 06:48 PM
সহজে ডিম খাওয়ার পন্থা হল সেদ্ধ করা। আর ডিমের সাথে নানান সবজি যোগ করে ভাজি করলে পুষ্টিগুণ বেশি হয়।
তবে পোচ কিংবা ওমলেট (যাকে এদেশে কেউ কেউ মামলেট বলেন) তৈরি করতে গিয়ে উচ্চমাত্রায় তাপ বা আগুন ব্যবহার করলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি বিষাক্ততার মাত্রাও বাড়ে।
তাই রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন পুষ্টিবিদ অ্যান্দ্রিয়া সোয়ারেস বলেন, “দিনের যে কোনো সময় প্রোটিনের চাহিদা মেটানোর জন্য ডিম খাওয়া উপকারী। তবে স্বাস্থ্যকর উপায়ে রান্নার পদ্ধতি জানা উচিত।”
ডিমের স্বাস্থ্যোপকারিতা
ডিমের পুষ্টিগুণ নিয়ে নানান মত-বিরোধ রয়েছে। বিশেষ করে কুসুম নিয়ে। কারণ এই হলুদ অংশেই থাকে খাদ্য-কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেইটেড ফ্যাট বা চর্বি। আর এই দুই উপাদানই হৃদস্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।
সোয়ারেস বলেন, “তবে সাম্প্রতিক গবেষণার ফলাফল বলছে উল্টো। হিউসটন’য়ের ‘ভিএ মেডিকেল সেন্টার’সহ বেশ কয়েকটি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের করা গবেষণার ফলাফলে জানানো হয়, ডিমের খাদ্য-কোলেস্টেরল রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রায় তেমন কোনো প্রভাব রাখে না। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার ‘দি বোডেন ইন্সটিটিউট অফ ওবেসিটি, নিউট্রিশন অ্যান্ড ইটিং ডিজঅর্ডার, চার্লস পার্কিন্স সেন্টার’য়ের করা গবেষণায় বলা হয়- নিয়মিত ডিম খাওয়ার সাথে হৃদরোগ হওয়ার ক্ষেত্রে প্রভাব খুবই কম।”
এছাড়া ডিমে রয়ছে নানান ধরনের উপকারী খনিজ, যেমন- সেলেনিয়াম, ফসফরাস, কোলিন, লৌহ, ভিটামিন এ, বিভিন্ন ধরনের বি ভিটামিন- রিবোফ্লাভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড এবং ফোলেইট।
এসব পুষ্টি উপাদান সামগ্রিকভাবে হাড়, মস্তিষ্ক, চোখ, রক্ত ও বিপাক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। আর রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়।
সোয়ারেস বলেন, “একটি বড় আকারের ডিমে ছয় থেকে সাত গ্রাম প্রোটিন থাকে যা পেশি বৃদ্ধি, কোষের পুনঃনির্মাণ ও রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে।”
স্বাস্থ্যকর উপায়ে ডিম রান্না
এসব পুষ্টি উপাদান রান্নার কারণে যেমন নষ্ট হয়ে যেতে পারে তেমনি বিষাক্ত উপাদানও চলে আসতে পারে। তাই ডিমের স্বাস্থ্যোপকারিতা ধরে রাখতে রান্নার পদ্ধতিতে নজর দিতে হয়।
স্ক্র্যাম্বল্ড এগস
ব্যস্ততার মাঝে ডিমের ঝুরি বা স্ক্র্যাম্বলড এগস তৈরি করা সবচেয়ে সহজ। আর দ্রুত সময়ে করা যায়। তবে এই রান্নায় প্রয়োজন হয় বাটার বা মাখন কিংবা তেল। আর বেশিরভাগ সময় ননস্টিক ফ্রাইপ্যান ব্যবহার করা হয়।
যদিও মাখন আরেকটি উচ্চ মাত্রায় খাদ্য-কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেইটেড চর্বি সমৃদ্ধ খাবার। আর ননস্টিক প্যান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর উপাদান নির্গত করে।
তাই সোয়ারেস পরামর্শ দেন, “রান্নার জন্য নিরাপদ ননস্টিক প্যান বা স্টেইনলেস স্টিলের পাত্রে অল্প তেল বা মাখন দিয়ে স্ক্র্যাম্বল্ড এগ তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্যকর তেল হিসেবে বেছে নেওয়া যেতে পারে অলিভ অয়েল, যা হৃদস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।”
ডিম সেদ্ধ
বেশি মাত্রায় সেদ্ধ করা ডিম খেতে বেশ লাগে। চাইলে বহন করে নিয়েও যাওয়া যায় দুপুরের খাবার হিসেবে।
“আর এই কারণেই ডিম সেদ্ধ করে খাওয়া হল সব থেকে উপকারী। কারণ এতে আলাদা করে তেল পানি ব্যবহার করা হচ্ছে না। উল্টো ডিমের ভেতর থাকা তরল বাষ্প হয়ে উবে যায় না, যা কিনা ডিম ভাজি বা ঝুরি তৈরি করার সময় বাষ্পীভূত হয়ে চলে যায়। যে কারণে সেদ্ধ ডিমের ঘনত্ব বেশি থাকে, ফলে পেট ভরা অনুভূতি দেয় বেশি সময় ধরে”- বলেন সোয়ারেস।
ডিম পোচড
তেলের পরিবর্তে পানি দিয়ে ডিম পোচ করা বেশি স্বাস্থ্যকর।
হালকা গরম হওয়া পানিতে আলতো করে খোসা মাঝখান দিয়ে ভেঙে ছেড়ে দিতে হবে ডিম। আর সাদা অংশ শক্ত হওয়া পর্যন্ত রান্না করতে হবে, তবে কুসুমটা থাকবে নরম।
সোয়ারেস বলেন, “এই পদ্ধতিতে অনেক সময় ডিমের সাদা অংশটা ছড়িয়ে গিয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা হল, পানিতে অল্প পরিমাণে ভিনেগার মিশিয়ে দিলে ডিমের সাদা অংশ একসাথে থাকবে। আর পাওয়া যাবে রেস্তোরাঁর মতো ডিম পোচ।”
এই পদ্ধতি বেশ স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে আলাদা তেল ব্যবহার হচ্ছে না। ফলে চর্বি ও ক্যালরি কম থাকছে। পাশাপাশি অন্যান্য তেলের কোলেস্টেরল এবং স্যাচুরেইটেড চর্বিও যুক্ত হচ্ছে না।
“আর কুসুম গরম পানিতে রান্না হয় বলে ‘কোলেস্টেরল অক্সিডেইশন’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকেই না”- বলেন সোয়ারেস।
ডিম ভাজি
সকালের নাস্তায় ফ্রায়েড এগস বা ডিম ভাজি খাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া হয়ত যাবে না।
ভাজা ডিম খেতে বেশ লাগে। তবে তেল বা মাখন দিয়ে ভাজা হয় বলে উচ্চমাত্রার চর্বিযুক্ত খাবার হিসেবে গণ্য করা হয় খাবারটিকে।
সোলারেস বলেন, “এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যকরা চর্বির উৎস হিসেবে অলিভ অয়েল ব্যবহার করা যায়। আর অল্প আঁচে রান্না করতে হবে। যাতে পুড়ে না যায়। কারণ পোড়া খাবার ক্ষতিকর ‘অ্যাক্রিলামাইড’ নিঃসরণ করে যা ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।”
আরও পড়ুন