Published : 29 Apr 2025, 11:32 PM
সংবাদ সম্মেলনে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে প্রশ্ন করা এবং তার সঙ্গে সাংবাদিকদের বাহাস ঘিরে বেসরকারি টেলিভিশন দীপ্ত টিভির বুলেটিন বন্ধ এবং তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
সচিবালয়ে সোমবারের ওই ঘটনার পরদিন মঙ্গলবার নিজেদের স্ক্রলে সংবাদ সম্প্রচার বন্ধের খবর দেয় দীপ্ত টিভি। দুপুর ২টার পর থেকে পাঁচটি বুলেটিন প্রচার করেনি স্টেশনটি। রাত ১১টায় আবার সংবাদে ফেরে তারা। একইসঙ্গে টেলিভিশনটির সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানুর রহমানকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বীকে বরখাস্ত করার কারণ হিসেবে সংস্কৃতি উপদেষ্টার ব্রিফিং নিয়ে করা অভিযোগের কথা এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ বললেও বরখাস্তের চিঠিতে অতীতে ‘অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি’ কাজের উদাহরণ টানা হয়েছে।
চ্যানেল আই অনলাইনের ফেইসবুক পেইজে এক পোস্টে সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে ‘পেশাদারিত্ব প্রদর্শন না করার অভিযোগের’ তদন্ত এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদক অর্থাৎ জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনার মধ্যে সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেছেন, দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ করতে বলেনি সরকার। ‘গণহত্যার পক্ষে’ প্রশ্ন করায় টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ নিজেই এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
রাত ১১টার পর দীপ্ত টিভির কয়েকজন সংবাদকর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সংবাদ সেবা কার্যক্রম বন্ধের পর সন্ধ্যায় বার্তাকক্ষের কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করেছে স্টেশনটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ওই বৈঠকে পুনরায় খবর সম্প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
টেলিভিশনটির সংবাদকর্মীদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের বিষয় নিয়েও সেখানে সবিস্তারে আলোচনা হওয়ার হওয়ার কথা তুলে ধরেন তারা।
এ বৈঠকের পরে রাত ১১টায় আবারও বুলেটিন সম্প্রচার শুরু হয়।
এ বিষয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা ফারুকী বিবিসি বাংলাকে বলেন, "আজকে সারাদিন আমি বিশ্রামে ছিলাম। আপনার কাছেই প্রথম এটা জানলাম। আমি বা আমার মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে একদমই ওয়াকিবহাল না। ওই প্রতিষ্ঠানগুলোই আসলে বলতে পারবে তাদের এই সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ কী"।
কান চলচ্চিত্র উৎসবের ৭৮তম আসরে ‘আলী’ নামে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রের যাওয়া উপলক্ষে সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি এবং ওই চলচ্চিত্রের কলাকুশলীদের বক্তব্যের পর প্রশ্নোত্তর পর্বে নানা বিষয়ে জানতে চান সাংবাদিকরা।
সেখানে সাংবাদিকদের থেকে প্রশ্ন আসে মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে আয়োজিত বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার ইউনেস্কো স্বীকৃতি, শোভাযাত্রায় শেখ হাসিনার মুখাকৃতির আদলে মুখোশ এবং জুলাই-অগাস্ট অভ্যুত্থানের নিহতের সংখ্যা নিয়ে।
পাল্টাপাল্টি কথায় প্রশ্নোত্তরের এই পর্ব অনেকটা বাহাসে পরিণত হয়। শুরুতে বসে উত্তর দিলেও এক পর্যায়ে দাঁড়িয়েও কথা বলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
বিষয়টি চাউর হলে ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্ন ঘিরে ওই তিন টেলিভিশন সাংবাদিকের ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তাদের ছবিসহ পোস্ট করা হয় ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স-জেআরএ’ নামে একটি ফেইসবুক পেইজে।
তিন সাংবাদিকের পরিচয় দিয়ে করা ওই পোস্টে বলা হয়, “আজকের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর প্রেস কনফারেন্স এ যারা ফ্যাসিস্ট এর পক্ষে কথা বলেছে…”
মঙ্গলবার দুপুরে ওই পেইজ থেকে আরেকটি পোস্ট করে বলা হয়, “এই তিন সাংবাদিক এর বিরুদ্ধে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে ‘মার্চ টু দীপ্ত টিভি, চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা‘।”
এর মধ্যে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম বন্ধ এবং তিন সাংবাদিকে বরখাস্ত বা অব্যাহতি দেওয়ার খবর আসে। জেআরএ এর ফেইসবুক পেইজেও বরখাস্ত বা অব্যাহতির চিঠি প্রকাশ করা হয়।
পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম বলেন, এক সাংবাদিক গণহত্যার পক্ষ নিয়ে প্রশ্ন করার প্রেক্ষিতে দীপ্ত টিভির সংবাদ কার্যক্রম তারা নিজেরাই বন্ধ করে দিয়েছে, সরকার এখানে কিছু বলেনি, কাউকে কলও দেওয়া হয়নি।
সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘ফ্যাসিবাদের ১৫ বছরে গণমাধ্যমের বাস্তবতা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, “মন্ত্রিত্বের ৬ মাসে কাউকে আমরা কল দেইনি। দীপ্ত টিভির সাংবাদিককে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং সংবাদ বিভাগ বন্ধ করা হয়েছে। এখন মানুষ ভাববে- এটা সরকার করেছে।”
যা বলছে তিন টেলিভিশন কর্তৃপক্ষ
সংবাদ সম্প্রচার বন্ধের কারণ জানতে চাইলে দীপ্ত টিভির প্রধান বার্তা সম্পাদক এসএম আকাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “অভ্যন্তরীণ কারণে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ আপাতত নিউজ অপারেশন বন্ধ রেখেছে।”
সিনিয়র ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট মিজানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ সংস্কৃতি উপদেষ্টাকে প্রশ্নের কারণে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “চিঠিতে ওই রকম কিছু বলা হয়নি।”
ফজলে রাব্বীকে বরখাস্তের চিঠিতে তার বিরুদ্ধে অতীতে অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপের কথা বলেছে এটিএন বাংলা কর্তৃপক্ষ।
তবে টেলিভিশন স্টেশনটির প্রধান নির্বাহী সম্পাদক মনিউর রহমান বলেন, সংস্কৃতি উপদেষ্টার সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করাকে ঘিরে জুলাই রেভ্যুলেশনারি অ্যালায়েন্স নামে একটি ফেইসবুক পেইজে অভিযোগ করা হয়।
“ব্যবস্থা না নিলে আগামীকাল অফিসের দিকে মার্চ কর্মসূচি দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সুনাম এবং সার্বিক দিক বিবেচনা করে আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি।”
বিশেষ প্রতিনিধি ফজলে রাব্বীকে পাঠানো বরখাস্তের চিঠিতে বলা হয়, “অফিস শৃঙ্খলা পরিপন্থি কার্যকলাপের জন্য গত ০৫/০৬/২০১৬ ইং ও ০৭/১১/২০২২ ইং তারিখে সতর্কীকরণ এবং পরবর্তীতে গত ১৯/১০/২০২৩ ইং ও ২৯/০৮/২০২৪ ইং তারিখে পরপর দুইবার আপনাকে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।
“আপনার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মানবিক কারণে বিশেষ বিবেচনায় চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়। এর পরেও আপনি রিপোটিং এর ক্ষেত্রে যথাযথ পেশাগত দায়িত্ব পালন না করায় আপনাকে ২৯/০৪/২০২৫ইং তারিখ থেকে চাকরি হতে বরখাস্ত করা হলো।”
জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রফিকুল বাসারকে অব্যাহতি দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চ্যানেল আইয়ের অ্যাসাইনমেন্ট এডিটর আরেফিন ফয়সাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “একটা অভিযোগ উঠেছে, সেটা আমরা তদন্ত করব। আর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। এটা একটা অফিসিয়াল প্রসেস।”
যা বললেন ফারুকী
সাংবাদিকদের সঙ্গে ‘বাহাস’ নিয়ে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিজের ফেইজবুক পেইজে একটি পোস্ট দেন ফারুকী। সেখানে তিন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার বিষয়টি অস্বীকার করার ‘সুক্ষ্ম চেষ্টার’ অভিযোগ তোলেন তিনি। কথা বলেন তিন সাংবাদিকের চাকরি যাওয়া নিয়েও।
ফারুকী বলেন, “ম্যাস মার্ডার ডিনায়ালের একটা সুক্ষ্ম চেষ্টা থেকে কালকের (সোমবার) প্রেস কনফারেন্সে যে কথাগুলা বলেছেন তিনজন সাংবাদিক, সেই কথাগুলা জুলাই দেখেছে এমন যেকোনো সেনসেটিভ মানুষকেই আহত করতে পারে। যে মা তার সন্তান হারিয়েছে মাত্র আট মাস আগে, যে সন্তান খুনির গুলিতে আহত হয়েছে, যে বোন, যে ভাই শহীদ হওয়ার হাত থেকে বেঁচে এসেছে, তাদের বুকে শেলের মতো বিঁধেছে সাংবাদিক তিনজনের কথা।
“ঘটনা থেকে মাত্র আট মাস দূরে দাঁড়িয়ে আমরা, খুনির বিচার হয় নাই এখনো। পশ্চিমে বিচার হওয়ার পরেও এখনো হলোকাস্ট ডিনায়াল মানুষের বুকে লাগে। আর কালকে যখন প্রশ্ন করা হলো, একজন খুনিকে খুনি বলা যাবে কিনা- এই প্রশ্ন জনতার জুলাইকেই বেমালুম নাই করে দেওয়ার একটা চেষ্টা হিসেবেই দেখেছে সবাই। প্রেস কনফারেন্সে তাদের কথাগুলা আমাকে বিস্মিত করলেও ধৈর্য নিয়ে উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেছি।”
উপদেষ্টা লেখেন, “তারপর মানুষ তাদের ক্ষোভ জানিয়েছে। এবং আজ সন্ধ্যায় জানলাম চ্যানেলগুলা তাদের চাকরিচ্যুত করেছে। প্রত্যেক চ্যানেলেরই নিজস্ব এডিটোরিয়াল পলিসি থাকে। তারা সেই পলিসির আলোকে কী সিদ্ধান্ত নেবে, সেটা তাদের ব্যাপার।
“তারপরও অনলাইনে কাউকে কাউকে একটা কথা বলার চেষ্টা করতে দেখছি যে আমাকে প্রশ্ন করায় চাকরি গেছে তাদের। হাস্যকর কথা। বিষয়টা যে আমি না, বিষয়টা যে জুলাই এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসির ব্যাপার- এটাও তারা বুঝতে পারছে না।”
তিনি বলেন, “ সবার উদ্দেশ্যে ফর দ্য রেকর্ড বলে রাখছি, তাদের চাকরির ব্যাপারে আমাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনো রকম সংশ্লিষ্টতা নাই। এ বিষয়ে সংশয় থাকলে ওই চ্যানেলগুলার সঙ্গে যোগাযোগ করলেই সবাই সত্য জানতে পারবেন। অনুমানে দুইয়ে দুইয়ে চার না মেলানোই ভালো।”
প্রশ্নোত্তর পর্ব যেভাবে পরিণত হল বাহাসে
ইরেশ যাকেরের বিরুদ্ধে মামলা, মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম বদলে আনন্দ শোভাযাত্রা হওয়া এবং মোটিফ নিয়ে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তর দেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা।
এর মধ্যে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আদলে মোটিফ নিয়ে সমালোচনার বিষয়ে এক নারী সাংবাদিকের প্রশ্নে তিনি বলেন, এটা যারা মোটিফ তৈরি করেছে, তাদেরকে প্রশ্ন করতে হবে। এ সময় পাল্টাপাল্টি কথা বলার মধ্যে জেনে প্রশ্ন করার পরামর্শও দেন তিনি।
চারুকলা যে এ মোটিফ তৈরি করল, সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসেবে তার বক্তব্য চেয়ে প্রশ্নটি করেন রফিকুল বাসার। এক পর্যায়ে সাংবাদিক-উপদেষ্টা বাহাসের মধ্যে অন্যদের দুজনের প্রশ্ন ও বক্তব্য আসে।
তিন সাংবাদিকের সঙ্গে উপদেষ্টা ফারুকীর প্রশ্নোত্তর পর্বের কথোপকথন নিচে তুলে ধরা হল-
রফিকুল বাসার: আপনি বিষয়টাকে কী মনে করেন?
ফারুকী: কোন বিষয়?
বাসার: চারুকলা যে এই বিষয়টা করল, আপনি ব্যক্তিগতভাবে বা সংস্কৃতি উপদেষ্টা হিসাবে কী মনে করেন? এটা ঠিক হল? না কি সমস্যা আরও দীর্ঘায়িত হল?
ফারুকী: মানে কোন সমস্যাটা বুঝি নাই।
বাসার: এই যে, মোটিফ যেটা তৈরি করল, সেটাকে
ফারুকী: কার মোটিফ?
এর মধ্যে এক নারী সাংবাদিক বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী।
বাসার: সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মোটিফ নিয়ে সমালোচনাটা হচ্ছে।
ফারুকী: এবার নববর্ষের মূল থিমটা কী ছিল?
বাসার: এবার নববর্ষে আমরা যেটা বলছি, সবাইকে মিলে…
ফারুকী: নববর্ষের থিমটা কী ছিল?
বাসার: আমি একটু বলি…
ফারুকী: আমার প্রশ্নটার উত্তর দেন, নববর্ষের থিম কী ছিল?
আরেক সাংবাদিক: আনন্দ শোভাযাত্রা…
ফারুকী: না না, হোয়াট ওয়াজ দ্য থিম লাইন।
বাসার: ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে কালেকটিভ করা।
ফারুকী: নো, আমি জানতে চাচ্ছি, থিম লাইনটা কী ছিল ফেস্টিভ্যালের? চারুকলা যে শোভাযাত্রাটা করে, এবারে ওদের থিম লাইনটা কী ছিল?
বাসার: আমি বলছি যে, এই বিষয়টাকে আপনি ব্যক্তিগতভাবে কীভাবে দেখছেন?
ফারুকী: কোন বিষয়টা?
বাসার: এই যে একটা সমালোচনা হলো এবং এটা নিয়ে সমস্যা, যেমন-
ফারুকী: আপনি আমাকে থিমটা বললে আমি উত্তরটা দিব।
আরেক সাংবাদিক: নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান।
ফারুকী: সো, হোয়াট ডাজ ইট মিন?
বাসার: তাহলে ফ্যাসিবাদের একটা মূর্তি যে ওখানে করল, সেই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এটা কি ঐক্য হল?
ফারুকী: কার সাথে ঐক্য?
বাসার: স্যরি, কারও ঐক্য না। আমি বলছি যে, আমরা সুন্দর জায়গাতে গেলাম, না কি অসুন্দরকে আরও বেশিদিন দীর্ঘায়িত করলাম? আপনার ব্যক্তিগতভাবে মত কী?
ফারুকী: প্রথম কথা হচ্ছে, এই যে মোটিফ তারা কী ব্যবহার করবে, এটা চারুকলা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপার, এটা তাদের সিদ্ধান্ত। এবার একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে আমার ভাবনাটা কি, রাইট?
ফজলে রাব্বী: না না, সাধারণ নাগরিক না, একজন কালচারাল অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবেও আপনার….
ফারুকী: না না, আমি সাধারণ নাগরিক হিসেবে বলছি। সেটা হচ্ছে, এই যে আপনি ফ্যাসিবাদের… দেখুন, যখন আমরা জাতীয় ঐক্যের কথা বলি, তখন জাতীয় ঐক্যের কথার মধ্যে কি আমরা, ধরেন, যে মানুষ ১৪শ মানুষ খুন করেছেন জুলাইতে, তার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগে; তার বিচার, অনুশোচনা, ক্ষমা কোনো কিছুই ঘটেনি, আপনি কি আমাকে বলছেন, তার সঙ্গে এখন জাতীয় ঐক্য করবার জন্য? আই থিংক দিস ইজ অ্যাবসার্ড।
বাসার: আমি ঐক্যের কথা বলছি না। (এ সময় হাসতে থাকেন উপদেষ্টা)। মাননীয় উপদেষ্টা আমি ঐক্যের কথা বলছি না। আমি ঐক্যের কথা বলছি না। আমি বলছি যে, সমস্যা। যেমন আমরা কিছুদিন আগে, বেগম খালেদা জিয়ার, যদিও এখানে না, অন্য জায়গার মূর্তি নিয়ে আইন উপদেষ্টা একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।
ফারুকী: প্রেস কনফারেন্সটা আপনারা কান থেকে নিয়ে গেলেন কোথায়, আই ডোন্ট নো। এজন্য আমি কম উত্তর দিতে চাই। হ্যাঁ, বলুন।
বাসার: …এটা নিয়ে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছিল। আমি বলেছি যে, সেই সমস্যাটা কি জিইয়ে থাকল, না কি সমাধান হল?
ফারুকী: বিচার… প্রথম কথা হচ্ছে, আমার যেটা উত্তর দেওয়ার, পরিষ্কার করে দিয়েছি। ১৪শ মানুষ যারা খুন করেছে, তাদের বিচারপ্রক্রিয়ায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত, বিচার সম্পন্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত, ইউ ক্যাননট এক্সপেক্ট, এ কাইন্ড অব রিকনসিলিয়েশন প্রসেস টু স্টার্ট। দ্যাট ইজ এ ভেরি সিম্পল থিং। পৃথিবীর কোথাও এটা ঘটে না। এটা হচ্ছে, সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমার উপলব্ধি। রিগার্ডিং দ্য মোটিফ, দ্যাটস নট মাই জব। এটা হচ্ছে ঢাকা ইউনিভার্সিটি, তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা কী করবে।
ফজলে রাব্বী: বৈশাখ হচ্ছে বাঙালির উৎসব, মারমাদের অনুষ্ঠান হচ্ছে সাংগ্রাই, মুরংদের অনুষ্ঠানের নাম হচ্ছে অন্য আরেকটা। বাঙালির অনুষ্ঠান, বাঙালির অনুষ্ঠান। পহেলা বৈশাখ মানে বাঙালির অনুষ্ঠান। অন্যদের নিয়ে আসতেছেন আপনি, সেটা আলাদা প্রশ্ন।
দুই নম্বর হচ্ছে, আপনি যে ১৪শ মানুষ নিহতের… অবশ্যই যখন এই ১৪শ সংখ্যাটাতো আর একটা, আপনার কাছ থেকে, যারা পলিটিক্যাল রেটরিক বলছে, তারা ১৪শ বলবে…
ফারুকী: আই এম টকিং অ্যাবাউট ইউনাইটেড নেশনস রিপোর্ট। (সাংবাদিক কিছু বলতে চাইলে) ভাই, প্লিজ ডু সাম রিসার্চ। (বসার ইশারা দিয়ে) প্লিজ ডু ইউর ওন রিসার্চ। চেক।
এরপর যাওয়ার জন্য দাঁড়িয়ে যান ফারুকী। তার দাঁড়ানো অবস্থায় দীপ্ত টিভির মিজান প্রশ্ন করা শুরু করলে, ‘ওয়েল ইনফর্মড’ প্রশ্ন করার উপদেশ দেন উপদেষ্টা।
মিজান: আপনি বললেন, ১৪শ মানুষ যিনি খুন করেছেন। এখন কথা হচ্ছে যে, আপনি কীভাবে বুঝলেন, যে একজন মানুষ ১৪শ’ মানুষকে খুন করেছে? এটাতো কোর্ট বলবে, কোর্ট ভারডিক্ট করবে। আপনি একটা বায়াসড উত্তর কীভাবে দেন।
ফারুকী: এখন আপনাকে প্রশ্ন করি, একাত্তরে সালে মুক্তিযুদ্ধের পরে আপনার মত একজন সাংবাদিক যদি এসে বলতেন, কি আপনি আমাকে বলছেন, এতগুলো লোককে পাকিস্তানিরা মেরেছে, এটাতো কোর্ট ভারডিক্ট দেয় নাই এখনও। দিস ইজ অ্যাবসার্ড। ডোন্ট সে দিস।
মিজানসহ সাংবাদিকরা কিছু একটা বলতে চাইলে ‘ওয়েট ওয়েট’ বলে থামিয়ে দেন উপদেষ্টা।
ফারুকী: জুলাই মাসে আপনি কোথায় ছিলেন? হোয়্যার হ্যাভ ইউ বিন ইন জুলাই? ইন ঢাকা, ইন বাংলাদেশ, রাইট? এই হত্যাকাণ্ডটা আপনাদের চোখের সামনে ঘটেছে। আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে।
মিজান: এটা আপনি জেনারালাইজড করছেন। আমি বলছি যে, আপনি কীভাবে বলতে পারেন, যিনি খুন করেছেন।
ফারুকী: আমি আপনাকে প্রশ্নটা কী করলাম? আপনি যদি ১৯৭১ সালের এতগুলো মানুষ মারার পরে কেউ এসে যদি বলত, যেমন আপনার মতই ধরুন আরেকজন সাংবাদিক,
ফজলে রাব্বী: এই প্রশ্নে আমরা ৭১ নিয়ে আসছি, এটার সাথে একাত্তরের কী সম্পর্ক?
ফারুকী: দেয়ার ইজ এ রিজন, দেয়ার ইজ এ রিজন, শেষ করি। আপনি যেমন এখন প্রশ্ন করছেন, ১৯৭২ সালে এই রকম একটা প্রেস মিটে একজন সাংবাদিক যদি বসে এই প্রশ্নটা করতেন… যেমন- ওই সময়ে আওয়ামী লীগের সংস্কৃতিমন্ত্রী যিনি ছিলেন, আমি জানি না কে ছিলেন, উনাকে যদি প্রশ্ন করতেন, ‘আচ্ছা এই যে আপনারা যে বারবার বলছেন, খুনি পাকিস্তানি, খুনি পাকিস্তানি, এটাতো এখন কোর্ট প্রমাণ করেনি, কেন বলছেন খুনি পাকিস্তানি? এই প্রশ্নটা কেমন দেখাবে?