ডায়েট খাবার ও পানীয় গ্রহণে উল্টো ওজন বাড়ার সম্ভাবনা থাকে।
Published : 25 Nov 2024, 04:58 PM
ক্যালরি কম গ্রহণ, প্রোটিন ও সবজি বেশি খাওয়া এবং কার্বোহাইড্রেইট এড়ানো- ওজন কমাতে এরকম প্রচলিত পদ্ধতিগুলোর সাথে আরেকটি জনপ্রিয় ধারণা হল- ‘ডায়েট’ খাবার গ্রহণ।
বাজারে পাওয়া যায় এমন ‘ডায়েট’ পানীয় বা খাবার ওজন কমানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখার বিষয়ে দাবি করা হলেও পুষ্টিবিদরা বলছেন, এই ধরনের খাবার বরং খিদা বাড়ায়। ফলে দিন শেষে খাওয়া হয় বেশি।
ডায়েট পানীয়
সাধারণ কোমল পানীয়তে প্রচুর চিনি থাকে। যে কোনো এক গ্লাস পরিমাণ কোমল বা সোডা পানীয় থেকে মিলতে পারে ২০০ ক্যালোরি।
এই তথ্য জানিয়ে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন পুষ্টিবিদ মেলিসা রিফকিন বলেন, “সেই হিসেবে ডায়েট পানীয় যুক্তি সঙ্গত পছন্দ মনে হলেও, ফলাফল কিন্তু উল্টো হয়।”
‘জিরো-ক্যালরি’ বা কৃত্রিম মিষ্টি ব্যবহার করে ডায়েট পানীয়তে মিষ্টি স্বাদ দেওয়া হয়।
লস অ্যাঞ্জেলেস’য়ের ‘ইউনিভার্সিটি অফ সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘কেক স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের গবেষকদের করা গবেষণায় বলা হয়, “কৃত্রিম চিনি গ্রহণের ফলে মস্তিষ্কের যে অংশ ক্ষুধা ও তৃপ্তি বোধ নিয়ন্ত্রিত হয় সেটা বেশি উদ্দিপ্ত হয়।”
তাই ক্যালোরি গ্রহণ না করা হলেও ডায়েট সোডা পানীয় পান করার ফলে দেহ যেভাবে সাড়া দেয় তাতে খিদা বাড়ে আর মিষ্টি খাওয়ার চাহিদা সৃষ্টি হয়।
এই কারণে কৃত্রিম চিনি ও মিষ্টি দেওয়া খাবার ওজন কমানোর লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়।
কম চর্বিযুক্ত দই
‘লো ফ্যাট ইয়োগার্ট’ থেকে বেশিরভাগ প্রাকৃতিক চর্বি সরিয়ে ফেলা হয়। যে কারণে কম ক্যালরির খাবার হিসেবে এটা জনপ্রিয়। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার এই দইতে চিনি বা কৃত্রিম মিষ্টি যুক্ত করে।
‘ইউনিভার্সিটি অফ জর্জিয়া’র ‘কলেজ অফ ভেটেরিনারি মেডিসিন’য়ের করা গবেষণায় জানানো হয়- কম ক্যালরি হলেও বাড়তি চিনি যোগ করার কারণে এই ধরনের দই ওজন বাড়ায়। আর কৃত্রিম চিনি যুক্ত করলে বাড়ে ক্ষুধা।”
তাই রিফকিন বলেন, “এরচেয়ে সাধারণ টক দই খাওয়া ভালো সাথে। আর ফল মিশিয়ে খেতে পারলে মিষ্টি খাওয়ার চাহিদাও কমবে।”
সবজির চিপস
আপাত দৃষ্টিতে সবজি বা ফল দিয়ে তৈরি চিপস স্বাস্থ্যকর মনে হলেও, এই খাবার খিদা মেটাতে পারে না। ফলে খাওয়ার পরিমাণ বাড়েই।
মেলিসা বলেন, “তবে অন্যান্য চিপস খাওয়ার চাইতে এই সবজি বা ফল দিয়ে তৈরি চিপস খাওয়া উপকারী হতে পারে যদি সেটাতে লবণ কম থাকে। আর একজনের নাস্তা হিসেবে কার্যকর।”
তবে যাই হোক না কোনো যে কোনো ধরনের চিপসের একটা প্যাকেটে তৃপ্তি আসে না। ফলে খাওয়া বেশি হয়, সাথে বাড়ে ওজন।
প্রোটিন বার
বাজারে নানান ধরনের প্রোটিনের বার পাওয়া যায়। আমাদের দেশেও পাওয়া যায় দেশীয় পদ্ধতিতে তৈরি বাদামের বার। তবে এগুলো স্বাস্থ্যকর মনে হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রচুর চিনি ব্যবহার করা হয়।
মাঝেমধ্যে নাস্তায় এই খাবার খাওয়া যেতে পারে। তবে সার্বিকভাবে কোনো খাবারের পরিবর্তে এসব প্রোটিন বার খাওয়া ওজন কমানোর ক্ষেত্রে উল্টো প্রভাব ফেলবে।
মেলিসা বলেন, “আর যদি ওজন কমাতেই হয়, তবে এসব বারগুলোর মোড়কে মোট ২০০ ক্যালরির কম উল্লেখ আছে কিনা সেটা দেখে নিতে হবে।”
কম চর্বির পিনাট বাটার
‘সুপার ফুড’ হিসেবে পরিচিত প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বিতে ভরপুর হলেও এই চিনাবাদামের মাখন সম্প্রতি ‘মোটা’ করার জন্য অভিযুক্ত হয়েছে।
কারণ হিসেবে মেলিসা বলেন, “লো-ফ্যাট’ বা চর্বিকম বলে যেসব পিনাট বাটার বাজারে পাওয়া যায় সেগুলোতে চিনির পরিমাণ বেশি থাকে, স্বাদ বাড়ানোর জন্য।”
এজন্য লো-ফ্যাট’য়ের পরিবর্তে সাধারণ পিনাট বাটার উপকারী।
আগে থেকেই তৈরি করে রাখা স্মুদি ও শরবত
প্যাকেটজাত শরবত, স্মুদি বা শেইক- এই ধরনের পানীয়তে যেসব উপাদান থাকে সেগুলো ওজন বাড়াতে সরাসরি প্রভাব রাখে।
আলাদা করে চিনি দেওয়া, প্রোটিন চর্বি আর আঁশের পরিমাণ কম থাকে।
তাই এই ধরনের পানীয় বাদ দিয়ে সরাসরি ফল খাওয়া ভালো। এতে পেট ভরা থাকে দীর্ঘক্ষণ, খিদা লাগে কম। যে কারণে খাওয়া কমিয়ে ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা কমানো যায়।
আরও পড়ুন