শুধু যে ওজন বাড়ায় তা নয়, ক্যান্সার ও হৃদরোগসহ নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে পেটের মেদ।
Published : 30 Sep 2022, 12:24 PM
কোমড়ের মাপ নারীর ক্ষেত্রে ৩৫ ইঞ্চি ও পুরুষের ৪০ ইঞ্চির বেশি হওয়া দেহের জন্য ক্ষতিকর।
পেটে জমা মেদ ‘ভিসারাল ফ্যাট’ নামে পরিচিত।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘সেন্ট লুইস’য়ের ‘ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের ‘জেরিয়াট্রিক্স অ্যান্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স’ বিভাগের প্রধান ও গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজিস্ট স্যামুয়েল ক্লেইন বলেন, “ভিসারাল ফ্যাট অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোর কিছু অংশকে আবৃত করে এবং বৃহদান্ত্র থেকে অ্যাপ্রোনের মতো ঝুলে থাকে।”
ইটদিস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “এটি ইন্সুলিন প্রতিরোধ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ‘কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ’ এবং ফ্যাটি লিভার রোগসহ বিপাকীয় রোগ হওয়ার ঝুঁকি সৃষ্টি করে।”
মেদ বহুল পেট ক্ষতিকর
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’তে অবস্থিত ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক- অ্যাভন হসপিটাল’য়ের ডা. ড্যানিয়েল অ্যালান বলেন, “শক্ত মেদবহুল পেট স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ায়। এর কারণ হল দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ প্রত্যঙ্গে চর্বি জমা। এটা শক্তভাবে পেটে জমা বাঁধে এবং পেটের প্রাচীরকে বাইরের দিকে প্রসারিত করে। ফলে দেখতে বড় দেখায়।”
পেটের প্রাচীর নিজেই পেশি এবং শক্ত তন্তুযুক্ত টিস্যু দিয়ে তৈরি এবং খুব শক্ত তাই পেটও শক্ত লাগে।
পেটের মেদ ও ক্যান্সার
দীর্ঘমেয়াদী পেটের চর্বি নারী ও পুরুষ- দুয়ের ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
জার্মান চিকিৎসক রে শিলিং বলেন, “হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়াতে কেবল দীর্ঘ মেয়াদে কার্ডিওভাস্কুলার রোগই নয় বরং যকৃতে চর্বি জমা বাঁধে যা ‘ফ্যাটি লিভার ডিজিজ’ নামে পরিচিত। এটা অনেক ক্ষেত্রে ‘লিভার সিরোসিস’ বা যকৃতে ক্যান্সারের রূপ ধারন করতে পারে।”
পেটের চর্বি রক্তনালীগুলোর আস্তরণসহ প্রদাহ সৃষ্টি করে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা্কেও প্রভাবিত করতে পারে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া অনেক ক্ষেত্রে ক্যান্সারের হওয়াতে ভূমিকা রাখে। স্থূলতার সঙ্গে সম্পর্কিত ক্যান্সারগুলো হল- স্তন ক্যান্সার, ডিম্বাশয়ের ক্যান্সার এবং জরায়ু ক্যান্সার। পুরুষদের মধ্যে প্রোস্টেট ক্যান্সার।
আর উভয় লিঙ্গেরই অগ্ন্যাশয় এবং মলাশয়ে ক্যান্সার।
‘স্কিনি ফ্যাট’য়েল ঝুঁকি
চিকন হওয়ার পরেও অনেকের দেহে ভয়ানক ‘ভিসারাল ফ্যাট’ বহন করতে পারে।
‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক’স ওয়েলনেস ইন্সটিটিউট’য়ের মেডিকেল ডিরেক্টর ডা. ড্যানিয়েল নেইডেস বলেন, “তিনি নিজে এমন অনেক রোগী দেখেছেন যারা বাইরে থেকে দেখতে সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান। তবে ভেতর থেকে অনেকাংশে দুর্বল।”
খাদ্যাভ্যাসে ত্রুটি
খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে ‘ভিসারাল ফ্যাট’ জড়িত। স্বাস্থ্যকর খাবারের অভাবে এর অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘আল্ট্রাওয়েলনেস সেন্টার’য়ের চিকিৎসক মার্ক হ্যাইম্যান এই বিষয়ে বলেন, “চিনি বা প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়ার কারণে ‘ভিসারাল ফ্যাট’ বাড়তে থাকে যে কারণে দেহের ওজন বৃদ্ধি পায়।”
শরীরচর্চা না করা
নিয়মিত শরীরচর্চার অভাবে পেটে বাড়তি মেদ জমে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ইন্টারনাল মেডিসিন’য়ের সহকারী অধ্যাপক ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ইয়ান জে. নিল্যান্ড বলেন, “ভিসারাল ফ্যাট স্থানীয় অঙ্গ বা পুরো শরীরের প্রক্রিয়াকে প্রভাবিত করতে পারে। পদ্ধতিগতভাবে এটি হৃদপিণ্ড এবং যকৃতের পাশাপাশি পেটের অঙ্গগুলোকে প্রভাবিত করে।”
তিনি আরও বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে, মেট্রিক ওজন হিসাবে দেহের যে ইন্ডেক্স ব্যবহার করা হয়, সেটার মাধ্যমে শরীরের ওজন সব জায়গায় সমানভাবে হচ্ছে কি-না তা জানা যায় না। চর্বির ধরন ও অবস্থান সম্পর্কে ধারণা থাকা উচিত। শরীরচর্চা ভিসারাল চর্বি কমাতে সহায়তা করে।”
আরও পড়ুন