দেহে পানিশূন্যতার কারণে রক্ত চাপের তারতম্য ঘটতে পারে।
Published : 17 Oct 2023, 06:45 PM
রক্তচাপের ভারসাম্য রক্ষার্থে দেহের আর্দ্রতার মাত্রা সঠিক থাকা প্রয়োজন। আবার উচ্চ রক্তচাপের কারণেও পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে।
পানিশূন্যতা আর উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আলাদাভাবে দেহের জন্য ক্ষতিকর। আবার এই দুই সমস্যা, একটির প্রভাবে অন্যটি হতে পারে।
ভারতীয় চিকিৎসক ডা. নিকিতা তোশি ফার্মইজি ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছেন বিস্তারিত।
পানিশূন্যতা
দেহ থেকে তরল খরচ হচ্ছে অথচ সেই মাত্রায় গ্রহণ করা না হলে পানিশূন্যতার সৃষ্টি হয়। দেহ সুষ্ঠুভাবে সঞ্চালনের জন্য পযাপ্ত তরল ইলেক্ট্রোলাইটস প্রয়োজন হয়। আর এই সমস্যা থেকে নানান স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দেয়।
পানিশূন্যতার কারণ: * অসুস্থ অবস্থায় বা ব্যস্তকার কারণে যথেষ্ট পরিমাণ তরল গ্রহণ না করা। * ডায়রিয়া ও বমি। * জ্বরের সময় শরীরে ঘাম হয়, ফলে দেহে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। * প্রচণ্ড গরম ও আর্দ্র আবহাওয়া * অতিরিক্ত প্রস্রাব, হতে পারে ডায়াবেটিস অথবা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ওষুধ বা যে কোনো ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায়। * মদ্যপান।
প্রাপ্তবয়স্কদের পানিশূন্যতার লক্ষণ: * প্রচণ্ড তৃষ্ণা লাগা * প্রস্রাব কম হওয়া * গাঢ় রংয়ের প্রশ্রাব * ক্লান্ত ও মাথা ঝিমঝিম করা * দ্বিধায় ভোগা।
অপ্রাপ্তবয়স্কদের পানিশূন্যতার লক্ষণ: * মুখের ভেতর ও জিহ্বা শুষ্কতা * কান্নার সময় চোখের পানি বের না হওয়া * তিন ঘণ্টা হয়ে গেলেও ডায়াপার না ভেজা * গাল ও চোখ বসে যাওয়া * প্রচণ্ড অলস বা নিশ্চুপ হয়ে পড়ে থাকা।
পানিশূন্যতা রোধে করণীয়: খুবই সাধারণ সমাধান হল পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করা, ফল ও সবজি খাওয়া। গরমে বা ব্যায়ামে ভালো বোধ না করলে সাধারণ সময়ের চাইতে বেশি পানি পান করা জরুরি। মোটকথা পানি পানের দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ
ধমনী ও শিরার দেওয়ালে রক্তচাপের শক্তিকে বলা হয় রক্তচাপ। চিকিৎসা শাস্ত্রে ‘হাইপারটেনশন’ নামেও পরিচিত। রক্তনালিতে এই চাপের স্বাভাবিক মাত্রা হল ১২০/৮০ এমএম এইচজিএলটি।
উচ্চ রক্তচাপের কারণ: * বংশগত কারণে * বয়স বাড়লে বা বৃদ্ধ হতে থাকলে * অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা * ধূমপান * অতিরিক্ত লবণ খেলে * শারীরিক কসরত বা পর্যাপ্ত ব্যায়াম না করলে * প্রায় সবসময় মানসিক চাপে থাকলে * মদ্যপান।
উপসর্গ: প্রায় সময় লক্ষণ প্রকাশ পায় না। তবে সময় মতো চিকিৎসা না নিলে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক, বৃক্কের ক্ষতি ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা হতে পারে। তাই নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করার মাধ্যমে বিষয়টা নজরে রাখতে হবে।
প্রতিরোধ করতে: স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। নিয়মিত ব্যায়াম করা। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখা। অ্যালকোহল গ্রহণ না করা। মানসিক চাপ কমানো। ধূমপান না করা।
পানিশূন্যতা ও রক্তচাপের মধ্যে সম্পর্ক
রক্তচাপের মাত্রা বাড়তে ও কমতে পারে পানিশূন্যতার কারণে। আর নানানভাবেই সেটা হতে পারে।
পানিশূন্যতার কারণে যদি রক্তের ঘনত্ব হ্রাস পায় তবে হবে নিম্ন রক্তচাপ। কারণ পর্যাপ্ত তরল না থাকায় রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে ধমনী ও শিরায়।
পানিশূন্যতার সময় দেহ ‘ভ্যাসোপ্রেসিন’ নামক হরমোন নিঃসরণ করে। এটা ধমনীকে আঁটসাঁট করে ফেলে আর বৃক্ককে অতিরিক্ত পানি সংরক্ষণ করার সংকেত দিতে থাকে। যা থেকে বেড়ে যায় রক্তচাপের পরিমাণ।
নিম্ন রক্তচাপ
পানিশূন্যতার কারণে রক্তের ঘনত্ব বা পরিমাণ বেশি মাত্রায় কমে গেলে নিম্ন রক্তচাপ হয়। যাকে বলে ‘হাইপোটেনশন’। পরিমাণ কমার কারণে রক্ত সারা শরীরে ঠিক মতো পৌঁছাতে পারে না। অতিরিরক্ত পানিশূন্যতা থেকে জীবননাশকারী নিম্ন রক্তচাপে ভোগার সম্ভাবনা থাকে, যাকে বলে ‘হাইপোভোলেমিক শক’।
উচ্চ রক্তচাপ
পানিশূন্যতার কারণে উচ্চ রক্তচাপও হতে পারে, যাকে বলে ‘হাইপারটেনশন’। ‘ভ্যাসোপ্রেসিন’ হরমোন নিঃসরণ আর ধমনী আঁটসাঁট হওয়ার কারণে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যাও দেখা দেয়।
আর্দ্র থাকার গুরুত্ব
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার অন্যতম চাবিকাঠি হল শরীর পর্যাপ্ত আর্দ্র রাখা। রক্তের মাত্রা ঠিক রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল গ্রহণের পাশাপাশি সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিকঠাক কাজ করছে কিনা- সেসব নিয়মিত পরীক্ষা করানো উচিত।
পর্যাপ্ত আর্দ্র থাকার মানে উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ থেকে দূরে থাকা ও সার্বিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা।
আরও পড়ুন