“মাথা ঘোরার নানান কারণ থাকতে পারে। এরমধ্যে দুশ্চিন্তাও একটা কারণ।”
Published : 10 Mar 2023, 03:02 PM
বাজেভাবে ঘুমের কারণে পিঠে ঘাড়ে ব্যথা হতেই পারে।
তবে কিছু লক্ষণ আছে যেগুলো দেখা দিলে বিপদ এড়াতে আগেভাগেই সাবধান হওয়া উচিত।
মাথা ঘোরা
দুর্বলতার করণে মাথা ঘুরতে পারে। বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ দাঁড়ালেও মাথা ঝিমঝিম করতে পারে। যার কারণ পানিশূন্যতা।
তবে ভার্টিগো, মানে দুনিয়া ঘুরতেছে অনুভূত হওয়া বা মাথা হালকা লাগার কারণ হতে পারে মস্তিষ্কে সমস্যা, কোনো কোনো সময় হজমতন্ত্রের জটিলতা অথবা দৃষ্টিশক্তি বা কানের ভেতরে কোনো সংক্রমণ।
এই বিষয়ে ভারতের ব্যাঙ্গালোরের চিকিৎসক ডা. শরৎ হোনাতি বলেন, “মাথা ঘোরার নানান কারণ থাকতে পারে। এরমধ্যে দুশ্চিন্তাও একটা কারণ।”
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “হিমোগ্লোবিনের স্বল্পতা, যাকে বলে অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার কারণেও মাথা ঝিমঝিম করে।”
এছাড়া কানের ভেতরে ভাইরাস সংক্রমণের কারণে সাময়িক ভার্টিগো দেখা দিতে পারে। উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ, বা প্রেশার অনেক কম হওয়ার কারণে দুর্বলতা, অবসাদ ও সাধারণ ক্লান্তি কাজ করে, জানান হোনাতি।
রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়লে বা কমলেও মাথা ঘোরায়। হতে পারে সেটা ডায়াবেটিস, থায়রয়েড বা হৃদসংক্রান্ত সমস্যার লক্ষণ।
মাথা ঘোরার সাথে বমিভাব বা বমি হওয়া ভালো লক্ষণ নয়। তাই এসব উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বেশি ঘাম হওয়া
স্থূলতা ও মেনোপজের কারণে অতিরিক্ত ঘাম বা ‘হাইপারহাড্রোসিস’ দেখা দিতে পারে। আবার অতিরিক্ত ব্যায়াম করা, মানসিক চাপ বা ঝাল খাবার থেকেও ঘাম হয়।
তবে অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার লক্ষণ হতে পারে থাইরয়েডের সমস্যা বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা।
জর্জ ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিনি অ্যান্ড হেল্থ সায়েন্স’য়ের অধ্যাপক এই ক্ষেত্রে বলেন, “চার-পাঁচগুন ঘাম হওয়ার মানে হল- দেহ তার তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে চেষ্টা করছে। সেটা হতে পারে মানসিক চাপে থাকা অবস্থায় কিংবা টিভি দেখতে দেখতে।”
তিনি আরও বলেন, “এখন বেশি ঘাম হওয়া বা ‘হইপারহাইড্রোসিস’ একটা শারীরিক সমস্যা। এটা হতে পারে ডায়াবেটিস, থাইপারথাইরয়ডিজম, কোনো সংক্রমণ এমকি ক্যান্সার থেকে। পাশাপাশি উচ্চ রক্তচাপের বা বিষ্ণণ্নতা কাটানোর ওষুধের কারণেও হতে পারে।”
যেটাই হোক, শরীরে অতিরিক্ত ঘাম হলে নীরিক্ষা করা জরুরি।
সবসময় ঠাণ্ডা বোধ করা
শীতকালে বা মেঘলা দিনে ঠাণ্ডা বোধ হওয়া স্বাভাবিক। তবে সবসময় ঠাণ্ডাভাব জাগলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত দেয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের তথ্যানুসারে, “এর মধ্যে রয়েছে হাইপারথায়রয়ডিজম, রক্তশূন্যতা, রক্ত সঞ্চালনে দুর্বলতা, শরীরে পর্যাপ্ত চর্বি কম থাকা।”
যুক্তরাষ্ট্রের ওহিও’য়ে অবস্থিত ‘বিচউড ফ্যামিলি হেল্থ অ্যান্স সার্জারি সেন্টার’য়ের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. জ্যানেট মর্গার এই বিষয়ে বলেন, “বিপাক প্রক্রিয়া ও দেহের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য থায়রয়েড গ্রন্থি পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করতে না পারলে তাকে ‘হাইপারথায়রয়ডিজম’ বলে।”
যেমন- ঘুমের সময় শরীরের গতি স্বাভাবিকভাবেই কমে আসে, ফলে দেহ হয় ঠাণ্ডা।
এছাড়া নিম্ন রক্তচাপ বা হইপোগ্লাইসেমিয়া’র কারণেও এই সমস্যা দেখা দেয়, জানান ভার্জিনিয়ার ‘কাইরোপ্র্যাক্টিক’ চিকিৎসক এরিক বার্গ।
তিনি আরও বলেন, “দেহে লোহিত কণিকার অভাব অথবা নির্দিষ্ট কিছু ভিটামিনের অপর্যাপ্ততার কারণেও সারাক্ষণ ঠাণ্ডা বোধ হতে পারে।”
কারণ যেটাই হোক, পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে।
ওজন কমা
বিনা কারণে বা চেষ্টা বা অজান্তে ওজন কমার নানান কারণ থাকতে পারে।
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক জানাচ্ছে, অকারণে ওজন কমার লক্ষণ হতে পারে পাকস্থলীর ক্যান্সার, থায়রয়েডের সমস্যা, হৃদসংক্রান্ত সমস্যা, ‘অ্যাডিসন’স ডিজিজ’, ‘পার্কিনসন’স ডিজিজ’, এইডস, হজমতন্ত্রের সমস্যা, দাঁতের সমস্যা, মানসিক চাপ, ওষুদের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সেলিয়াক ডিজিজ, ডায়াবেটিস, পরজীবির আক্রমণ, নেশা করা, কোনো কারণে খাওয়ার সমস্যা, অগ্নাশয় ফুলে যাওয়া, মদ্যপান, গিলতে সমস্যা কিংবা ঘুমের সমস্যা।
আর কোন কারণে ওজন কমছে তা একমাত্র পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তারই ভালো বলতে পারবেন।
ত্বকে কোনো দাগ
তিল বা আঁচিল ওঠা মানেই ত্বকের ক্যান্সার নয়। যদি সেগুলো গোলাকৃতি হয় এবং কোনো পরিবর্তন না ঘটে তবে চিন্তার কিছূ নেই।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্কিন ক্যান্সার ফাউন্ডেশন’ জানাচ্ছে- যদি ত্বকে নতুন কোনো দাগ দেখা দেয়, বাড়তে থাকে অস্বাভাবিকভাবে তবে সেটা হতে পারে ‘মেলানোমা’র লক্ষণ। এটা এক ধরনের ত্বকের ক্যান্সার।
তারা আরও জানায়, এমনকি ক্যান্সার তৈরি করবে না এরকম অনিয়মিতভাবে আঁচিল দেখা দিলেও ত্বকের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘রেজিলিয়েন্ট হেল্থ ইন্সটিটিউট’য়ের ত্বকবিশেষজ্ঞ ডা. কিয়েরা এল.বার বলন, “সারা বিশ্বে ত্বকের ক্যান্সার সাধারণ ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন নতুন নতুন ‘কেইস’য়ের খবর আমরা পাচ্ছি। তাই প্রতিমাসে একবার হলেও সারা শরীর পরীক্ষা করে দেখতে হবে কোনো অস্বাভাবিকতা দেখা দিচ্ছে কিনা ত্বকে।”
আর এই অল্প সাবধানতা থেকেই বড় কোনো বিপদ হওয়ার আগেই রক্ষা করা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন
যেসব লক্ষণ দেখা দিলে ত্বক-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত