চর্মরোগ জটিল আকার ধারণ করার আগেই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা জরুরি।
Published : 27 Feb 2023, 03:01 PM
সামান্য তিলও হতে পারে ত্বকে ক্যান্সারের লক্ষণ।
আবার সাধারণ ব্রণ হলেই যে ডাক্তারের কাছে দৌঁড়াতে হবে তেমন কোনো কথা নেই। তবে ব্যথা যুক্ত ফোঁড়া সহজে না সারলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি হতে পারে।
বিষয় হল, ত্বকের ছোট-খাট পরিবর্তন চোখের পড়লে বড় বিপদ এড়াতে ত্বক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। যে কারণে লক্ষণগুলো জানা থাকা দরকার।
নতুন আঁচিল ওঠা বা পুরোনো তিলের পরিবর্তন
ত্বকের ক্যান্সারের মধ্যে বিপজ্জনক হল ‘মেলানোমাস’। যা দেখতে অনেকটা অস্বাভাবিক আঁচিলের মতো কিংবা ত্বকে বাদামি রংয়ের ফোঁটা ফোঁটা দাগের মতো লাগে।
রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তথ্যটি জানান নিউ ইয়র্ক’য়ের ত্বকবিশেষজ্ঞ হ্যাডলি কিং।
যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার আরেক চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞ ইফে. জে. রডনি বলেন, “হঠাৎ করেই শরীরে কোথাও নতুন আঁচিল উঠলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে।”
প্রাথমিক অবস্থাতেই রোগ নির্ণয় করতে পারলে ‘জীবন মরণ’ সমস্যার হাত থেকে বাঁচানোর সম্ভাবনা বাড়ে।
ক্ষত না সারা
ডা. কিং বলেন, “ত্বকের অতি সাধারণ ক্যান্সার হল ‘বেইজাল সেল কার্সিনোমা’। যা ত্বকের উপরে, ত্বকের মতোই রংয়ে বা লালচে আবার অনেক সময় কালচে ছোট আকারে ফুলে ওঠে। এই ধরনের ত্বকের সমস্যা যদি সহজে না সারে বা পরিবর্তন দেখা দেয় তবে ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতেই হবে।”
‘মেলানোমা’র মতো ‘বেইজাল সেল কার্সিনোমা’ দেহের অন্যান্য জায়গায় ছড়ায় না। বরং একটার পাশে আরও কয়েকটা উঠতে পারে। আর চিকিৎসা না করা হলে হাড়ে পর্যন্ত পৌঁছে যায়।
অস্বাভাবিক চুল পড়া
ডা. রডনি জানান, দৈনিক ৫০ থেকে ১০০টি চুল পড়া স্বাভাবিক। সাধারণত সেটা চোখেও পড়ে না।
তবে যদি উল্লেখযোগ্য হারে চুল পড়তে থাকে, পাতলা হতে থাকে চুলের ঘনত্ব কিংবা টাক সমস্যা দেখা দেয় হঠাৎ করে তবে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “চুল পড়ার অনেক কারণ থাকতে পারে। একজন ত্বক বিশেষজ্ঞই সে ব্যাপারে ভালো বলতে পারবেন।”
তবে চিকিৎসা না করিয়ে বেশিদিন অপেক্ষা করলে চুলের ফলিকল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ফলে এই জায়গায় আর চুল ওঠার সম্ভাবনাও থাকে না।
ত্বকের গভীরে ব্যথাযুক্ত ব্রণ
ব্রণ ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার সেরেও যায়। তবে কোনো কারণে ত্বকের ভেতরের দিকে থেকে ফুলে থাকা ব্যথাযুক্ত ব্রণ দেখা দিলে আর সেটা লালচে হয়ে না সারলে দ্রুত ত্বকবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে। না হলে কুৎসিত ক্ষত হতে পারে।
সান ফ্রান্সিককো’র ‘প্যাসেফিক স্কিন অ্যান্ড ডার্মাটোলজি’র চিকিৎসক ট্রেসি ইভান্স বলেন, “ব্রণ থেকে হওয়া ক্ষত প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসা করলে দ্রুত সারানো যায়। আমরা এক্ষেত্রে ক্রিমজাতীয় লোশন, ইঞ্জেকশন বা বড়ি খাওয়ার মাধ্যমে চিকিৎসা দিয়ে থাকি।”
ফুসকুড়ি ওঠা
ডা. রডনি বলেন, “ত্বকের কোনো জায়গায় যদি হঠাৎ করেই অদ্ভূত ফুসকুড়ি, জ্বালাভাব, চুলকানি বা অস্বস্তি দেখা দেয় তবে চর্মরোগ-বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।”
ওষুধের দোকানে গিয়ে চুলকানির মলম কিনে ব্যবহারে প্রাথমিকভাবে আরাম মিললেও, গভীরে হয়ত সমস্যা রয়েই যাবে।
একজিমা, ছোঁয়াচে ‘ডার্মাটাইটিস’, ক্ষত, ফাঙ্গাস কিংবা অ্যালার্জি- বিভিন্ন কারণে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এর সঙ্গে যদি ফুসকুড়ির জায়গায় উষ্ণভাব অনুভূত হয়, নরম লালাচে আভা থাকে, পানি-পানিভাব বা পুঁজ বের হয় তবে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
বেশিরভাগ সময় ত্বকে লালচেভাব
গরমে বা রোদে থাকার কারণে ত্বক লালচে হতেই পারে। তবে এই লালচেভাব যদি সবসময় ত্বকে দেখা দেয়, বিশেষ করে নাক ও গালে, তবে সেটা হতে পারে ‘রোজেইশা’র লক্ষণ, জানান ডা. ইভান্স।
ডা. রডনি বলেন, “এই অবস্থার সাধারণত তেমন কোনো চিকিৎসা নেই। তবে রোগের তীব্রতা কমাতে ত্বক-বিশেষজ্ঞরা নানান ধরনের ওষুধ দিতে পারে।”
বাৎসরিক ত্বক পরীক্ষা
বছরে একবার দাঁত পরীক্ষা করানো বা নারীদের ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ-বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়ার মতোই, বাৎসরিক ত্বকের পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক অবস্থাতেই ‘স্কিন ক্যান্সার’ নির্ণয় সুবিধা হয়; বিশেষ করে ‘মেলানোমা’।
ডা. কিং বলেন, “প্রাথমিক অবস্থায় মেলানোমা ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে সারানো যায়। তবে দেরি হয়ে গেলে দেহের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ে, যা কিনা প্রাণনাশক।”
তাই বছরে একবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো মতো ত্বক পরীক্ষা করানো জরুরি।
আরও পড়ুন
নারীদের ত্বকের সাধারণ সমস্যা ও সমাধান