‘টেনশন’ হচ্ছে? তাহলে প্রশান্তির জন্য কয়েকটি কাজ করতে পারেন।
Published : 29 Oct 2024, 04:43 PM
রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিত্য প্রয়োজনী জিনিসের দামের ওঠানামা, অস্থির পরিবেশ- সবকিছু মিলিয়ে চাপা উত্তেজনায় ভোগা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
আর স্নায়বিক চাপে যখন দাঁত দিয়ে নখ কামড়াতে কামড়াতে আঙ্গুল খেয়ে ফেলার দশা, তখন কিছু পন্থা অবলম্বন করে মানসিক শঙ্কা কমানোর চেষ্টা করতে দোষ কী!
তাই সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মার্কিন স্নায়ুবিজ্ঞানী ডা. রিচার্ড ডেভিডসন বলেন, “সারা বিশ্বেই চলছে অস্থিরতা। এখান থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে শান্ত রাখার কৌশল জানা জরুরি।”
‘ইউনিভার্সিটি অফ উইসকনসিন-ম্যাডিসন’য়ের ‘সেন্টার ফর হেলদি মাইনডস’য়ের এই প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তিব্বতের বৌদ্ধ সন্ন্যাসীদের ওপর গবেষণার চালিয়ে দেখেছেন, ধ্যান আক্ষরিক অর্থেই মস্তিষ্কে পরিবর্তন আনতে পারে।
তাই উদ্বেগ, উত্তেজনা ও মানসিক চাপ কমাতে বেশি কয়েকটি পদ্ধতির কথা জানিয়েছেন তিনি।
নড়াচড়ার মধ্যে থাকা
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ব্যায়াম কিংবা কিছু কাজের মধ্যে থাকলে মানসিক চাপ কমে। এন্ডোরফির নামক হরমোন নিঃসরণ ঘটে কর্মচঞ্চল থাকলে যা মন-মেজাজের উন্নতি ঘটায়, শরীরের টানটান-ভাব কমায়।
‘ম্যাসাচুসেটস জেনারেল হসপিটাল’ এবং ‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’য়ের করা গবেষণা বলে, মস্তিষ্কের চাপ-বিষয়ক সংকেত কমানোর সাথে ব্যায়ামের সম্পর্ক রয়েছে।
ডেনভার’য়ে অবস্থিত ‘ন্যাশনাল জিউইশ হেল্থ’য়ের ’কার্ডিওভাস্কুলার প্রিভেনশন অ্যান্ড ওয়েলনেস’য়ের পরিচালক ডা. অ্যান্ড্রু ফ্রিম্যান বলেন, “এর মানে হল মানুষ তৈরি হয়েছে প্রচুর নড়াচাড়া করার জন্য। আর যখন এই নড়াচড়া হাঁটাচলা আমরা প্রকৃতির মাঝে করি, গবেষণায় দেখা গেছে তখন উল্লেখযোগ্য হারে মানসিক চাপ কমে।”
আশপাশের পরিস্থিতি নিজের আয়ত্বে রাখা
প্রথমে চিহ্নিত করতে হবে তারপর তালিকা বানিয়ে ফেলতে হবে, কোন বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন আর কোনগুলোতে প্রভাব খাটাতে পারবেন- একই প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ‘আমেরিকান ইন্সটিটিউট অফ স্ট্রেস’য়ের ‘কনটেন্টমেন্ট ম্যাগাজিন’য়ের প্রাক্তন সম্পাদক ও মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ ডা. সিনথিয়া অ্যাক্রিল।
তিনি বলেন, “যেমন- কোনো বিষয় ভালো না লাগলে আমি বলি, এখন আমি এই বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। পাশাপাশি যেসব খবর আমাকে উত্তেজিত করতে পারে সেগুলো দেখা কমাই, বা দেখি না।”
“এছাড়া সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমও নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। যেসব- ভিডিও বা লেখা উত্তেজনার খোরাক যোগাবে সেগুলো না দেখে বরং হাঁটতে যান, প্রিয় গান শুনুন, প্রার্থনা করতে পারেন বা ফোনে এমন কারও সঙ্গে আলাপ করতে পারেন যাকে নিরাপদ মনে হয়”- পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক।
ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করা
নিজেকে নিরাপদ রাখতে মস্তিষ্ক নেতিবাচক বিষয়ে যুক্ত হয় বেশি।
“তাই জোর করে হলেও ইতিবাচকতার চর্চা করতে হবে”- মন্তব্য করেন অ্যাক্রিল।
মানে হল ঘনঘন উন্নত চিন্তার চেষ্টা চালাতে হবে।
ডেভিডসন বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে আশাবদী হওয়ার বিষয়টা শতকরা ২৫ শতাংশ জিনগত। বাকিটা নিজেই আয়ত্তে আনা যায়।”
দিনে ৩০ মিনিট ধ্যান করলে, দুই সপ্তাহের মানসিক জঞ্জাল দূর হয়ে যায়। আশাবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে দৈনিক ডায়রি লেখা ভালো অভ্যাস। যেগুলোর জন্য মনে হয় ‘থ্যাংকফুল’ বা কৃতজ্ঞ, সেগুলো লিখতে হবে- পরামর্শ দেন ডেভিডসন।
গবেষণায় দেখা গেছে কৃতজ্ঞতার অনুশীলন করলে ইতিবাচক মনোভাব বেড়ে গিয়ে নেতিবাচকতা ভেঙে পড়ে।
ভালো ঘুমের কথা ভোলা যাবে না
ঘুমের মধ্যেও মস্তিষ্ক ব্যস্ত থাকে। এই সময়ে পরের দিনের জন্য প্রস্তুত করে দেহকে। অভিজ্ঞতাগুলোকে যাচাই বাছাই করে নতুন শিক্ষার পথ দেখায়।
তাই সুস্থ মানসিকতার জন্য পর্যাপ্ত ঘুম দরকার, যাতে মস্তিষ্ক ভালোমতো কাজ করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা'র তথ্যানুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক যে কারও প্রতিরাতে রাতে অন্তত সাত থেকে নয় ঘণ্টার ঘুমের প্রয়োজন।
ক্যালিফোর্নিয়া’র ‘হান্টিংটন হেল্থ’য়ের ‘ক্লিনিকাল অ্যান্ড স্লিপ মেডিসিন অ্যান্ড পালমোনারি ক্রিটিকাল কেয়ার’য়ের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রাজ দাসগুপ্তা বলেন, “দুতিন রাত অপর্যাপ্ত ঘুম হলেই দেখবেন মনোযোগের মাত্রা কমে, নতুনক কিছু শেখার যায় না, সৃজনশীল কাজ, সঠিক সিদ্ধা বা সমস্যা সমাধান করতে অসুবিধা হয়।”
তাই ঘুম ভালো না হলে, নানান উপায়ে সেটা সারাতে হবে। প্রয়োজন পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত হবে বলে মনে করেন, ডা. দাসগুপ্তা।
আরও পড়ুন