অলিভ অয়েল মুখে নিলে গলায় একটু না জ্বললে সেটা এড়ানোই ভালো।
Published : 13 Feb 2024, 05:22 PM
স্বাস্থ্যকর খাওয়ার তেল হিসেবে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল সুপরিচিত। তবে এই তেলেরও বিভিন্ন মান রয়েছে।
আর এই মান পরীক্ষা করার উপায় হল মুখে নিয়ে পরখ করা। তবে এজন্য পালন করতে হয় কিছু নিয়ম।
এই বিষয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ‘এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল’য়ের স্বাদ-পরীক্ষক ও অলিভ অয়েল ব্র্যান্ড ‘কোস্টেরিনা’র প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটরিনা মাউন্ট্যানোস বলেন, “অনেকটা ওয়াইন পরখ করার মতো করেই অলিভ অয়েল নীরিক্ষা করা হয়।”
গ্রিক-আমেরিকান এই পরীক্ষক আরও বলেন, “মনে রাখতে হবে এই তেল অল্প মুখে নিলে একটু হলেও সুড়সুড়ি দেবে।”
যেভাবে অলিভ অয়েলের স্বাদ পরীক্ষা করতে হয়
মাউন্ট্যানসের মতে, “সব অলিভ অয়েলের মান এক নয়। কোনটা ভালো আর কোনটা অতটা ভালো না, সেটা বোঝার একটি উপায় হল, অলিভ অয়েলে একটু চুমুক দেওয়া।”
এক্ষেত্রে তিনটি ধাপ অনুসরণ করতে হয়।
ধাপ ১: অলিভ অয়েল পরখের জন্য প্রস্তুত করা
“দক্ষতার সাথে পরখ করার জন্য প্রথমে একটি ছোট গ্লাসে অলিভ অয়েল নিয়ে, গ্লাসটি ধরে দুহাতের তাপে একটু উষ্ণ করে নিতে হবে”- বলেন মাউন্ট্যানোস।
এর ফলে তেল অল্প উষ্ণ হয়ে একটু হলেও সুগন্ধ ছড়াবে। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে রং কোনো বিষয় না। কারণ অলিভ অয়েলের তেলের রং, মান নির্ধারণে কোনো ভূমিকা রাখে না।
এই পরীক্ষক বলেন, “এমনকি আমরা যখন পরীক্ষা করি তখন দেখা যায় নীল রংয়ের গ্লাস নিয়েছি।”
ধাপ ২: গন্ধ নেওয়া
এরপর গ্লাসটি ধীরে নেড়েচেড়ে ঘোরাতে হবে যাতে তেলে হালকা ঘুর্ণনের সৃষ্টি হয়। এর ফলে আরও সুগন্ধ বের হবে। এখন এভাবে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাড়তে নাড়তে নাঁকের কাছে নিয়ে গন্ধ শুকতে হবে।
মাউন্ট্যানোস বলেন, “অলিভ অয়েলের গন্ধ হবে টাটকা অনেকটা ঘাস বা ফলের মতো। যদি বাসী, দুর্গন্ধ নাঁকে লাগে এমনকি কোনো গন্ধ না পাওয়া যায় তাহলে বুঝতে হবে এই তেলের মেয়াদ শেষ বা বেশি উন্নত মানের নয়।”
ধাপ ৩: স্বাদ নেওয়া
গন্ধ শোকার পর নিতে হবে স্বাদ। এক্ষেত্রে প্রথমে চুমুক দিয়ে অল্প অলিভ অয়েল মুখে নিয়ে স্বাদ-যন্ত্রের চারপাশে বুলিয়ে নিতে হবে।
মাউন্ট্যানোস বলেন, “অলিভ অয়েল জিহ্বায় মেখে মুখের পেছনের দিকে নিয়ে যান, সঙ্গে খানিকটা বাতাস টানুন। একটা মসৃণভাবের সাথে খানিকটা তীতা বোধ হবে।”
যদি ঠিক মতো করা যায় তবে একেক তেলের স্বাদের ‘নোট’ একেক রকম পাওয়া যাবে। আর সাধারণত গন্ধের মতোই স্বাদ হবে ঘাস, ফল ও কাঠবাদামের মতো।
তবে স্বাদটাই বড় কথা নয়। পাশাপাশি গলার পেছনে কেমন অনুভূত হচ্ছে সেটাও বুঝতে হবে।
মাউন্ট্যানোস বলেন, “অলিভ অয়েলের কারণে গলার দিকে বা পেছনে এক ধরনের হালকা জ্বালাভাব হবে। আর এটা হওয়ার কারণ হল পলিফেনল্স বা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী।”
যদিও এই তেল এমনিতেই একটু তীতা। তবে খাবারে ব্যবহারে সেটা পাওয়া যায় না।
তিনি বলেন, “বরং খাবারের স্বাদ ও গন্ধ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল।”
স্বাদ নেওয়া ছাড়া অলিভ অয়েলে মান পরখ করার পন্থা
দোকানে গিয়ে কেনার সময় তো আর স্বাদ নেওয়ার উপায় নেই। এক্ষেত্রে বোতলের গায়ে লেখা কিছু বিষয় দেখে অলিভ অয়েলের মান নির্ণয় করা সম্ভব।
মোড়ক পরীক্ষা করা
অস্বচ্ছ, কালচে বোতল বা অ্যালুমিনিয়িাম টিন’য়ে রাখা অলিভ অয়েল কেনার পরামর্শ দেন মাউন্ট্যানোস। কোনো মতেই প্লাস্টিকের বোতলের তেল কেনা যাবে না।
তিনি বলেন, “অলিভ অয়ের প্লাস্টিকের প্রতি ক্ষয়কারক। সেজন্য প্লাস্টিকের বোতলে রাখা তেলে প্লাস্টিকের অতি ক্ষদ্র কণা মিশে থাকবেই। তাছাড়া তাপ ও আলোর প্রতি এই তেল খুবই উদ্বায়ী। যে কারণে বোতল স্বচ্ছ হলে সেটা তাপ ও আলো থেকে দূরে আছে কিনা, খেয়াল করতে হবে।”
তাই গাঢ় রংয়ের বোতলে রাখা অলিভ অয়েল কেনা্ হবে বুদ্ধিমানের কাজ। পাশাপাশি কিনে আনার পরও এই তেল শুকনা, ঠাণ্ডা জায়গায় রাখতে হবে। কোনো মতেই চুলার ওপরের তাকে বা ওভেনের আশপাশে রাখা যাবে না।
উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ খেয়াল করা
“এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর উৎপাদন ও মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ কখনই এক হবে না” বলেন মাউন্ট্যানোস।
এক্ষেত্রে ব্যাচ তারিখ, বোতলে ভরার তারিখ বা উৎপাদনের তারিখ কেনার দিনে ১৮ মাসের মধ্যে হতে হবে।
“যদি শুধু মেয়াদোত্তীর্ণের তারিখ থাকে তবে সেটা না কেনাই ভালো হবে”- পরামর্শ দেন তিনি।
কারণ যেদিন কেনা হবে সেদিন থেকে এক বছরের বেশি সময় আগেও তেল বোতলজাত বা উৎপাদন করা হতে পারে।
লেবেল ভালোমতো পড়া
কোথায় এই তেল উৎপাদন করা হয়েছে সেটা লেবেল দেখে জেনে নিতে হবে। কারণ যেখানে বোতলাজাত হয় সেখানে এই তেল উৎপাদিত নাও হতে পারে।
“বিভিন্ন দেশ থেকে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল উৎপাদিত হয়ে অন্যত্র বোতলজাত করতে পাঠানো হয়। যে কারণে মানের ওপর প্রভাব পড়তে পারে” বলেন মাউন্ট্যানোস।
সেই সাথে লেবেলে ‘এক্সট্রা ভার্জিন’ লেখাটা থাকতে হবে। যা কি-না তাপ ছাড়া ‘কোল্ড প্রেস’ পদ্ধতিতে তেল উৎপাদন করাকে বোঝায়।
এছাড়া যদি লেখা থাকে ‘পিউর’ বা খাঁটি, ‘লাইট’ বা হালকা অথবা ‘অলিভ পমেস অয়েল’ তাহলে বুঝতে হবে এগুলো রাসায়নিকভাবে পরিশোধিত করা হয়েছে।
আরেকটি বিষয় হল ‘ব্লেন্ড’ করা তেল কেনা যাবে না। যদি লেবেলে লেখা থাকে বিভিন্ন দেশ থেকে তেলটি সংগ্রহ করা হয়েছে তবে ধরে নিতে হবে বিভিন্ন দেশের তেল মেশানো হয়েছে। অথবা অনেক আগে চাষ করা।
মাউন্ট্যানোস বলেন, “আমরা সবসময় ‘মনোভ্যারাইটালস’ খুঁজি। অন্যদিকে একটি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে উৎপাদিত হওয়া তেলের মিশ্রণ বা ‘ব্লেন্ড’ হলেও উন্নত মান ধরা হয়।
দাম পরখ করা
ভালো জিনিসের দাম বেশি হবে, সেটাই স্বাভাবিক।
মাউন্ট্যানোস বলেন, “মৌসুমের প্রথমে উৎপাদিত অলিভ অয়েলে বেশি মাত্রায় স্বাস্থ্যকর পলিফেনলস থাকে, যা পাকার আগেই জলপাই পিষে তৈরি করা হয়। কাঁচা জলপাই থেকে কম তেল উৎপাদিত হলেও উচ্চ মানের হয়। তবে এই কারণে দামও বেশি পড়ে।”
তবে বেশি সস্তায় পাওয়া গেলে ধরে নিতেই হবে সেটা এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল নয়। তাই স্বাস্থ্যের কথা চিন্তা করে খরচ বেশি করাটাই হবে শ্রেয়।
আরও পড়ুন