ব্যায়াম ছাড়াও স্বাস্থ্যবান থাকার পন্থা

শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভালো থাকার জন্য চাই ছোটখাট অভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2023, 01:51 PM
Updated : 22 Jan 2023, 01:51 PM

সুস্থ থাকতে সুষম খাবার খাওয়া আর শরীরচর্চার প্রতি মনোযোগ দেওয়ার কথা বলা হয়।

ব্যায়াম করার জন্য যে পরিমাণ অধ্যবসায় আর সময়ের প্রয়োজন সেটা অনেকেরই হয় না। তাই যারা নিয়মিত শরীরচর্চায় আছেন তাদের কুর্ণিশ।

তবে কয়েকটি পন্থা অবলম্বন করেও স্বাস্থ্যবান থাকা যায়।

সম্পূর্ণভাবে আর্দ্র থাকতে হবে

সহজ সরল বিষয় হচ্ছে দেহের কার্যাবলী সঠিকভাবে ঘটানোর জন্য পানির প্রয়োজন।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘মায়ো ক্লিনিক’য়ের তথ্যানুসারে- বর্জ্য বের করে দিতে, শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে, কোষের ও হাড়ের জোড় সম্মুন্নত রাখার জন্য পানি চাই।

ইউ.এস. ন্যাশনাল অ্যাকাডেমিস অফ সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিন জানাচ্ছে- প্রতিদিন পুরুষের ১৫.৫ কাপ ও নারীর ১১.৫ কাপ পানি পান করা উচিত।

স্থিরভাবে বসে না থাকা

প্রতিদিন নড়াচড়া না করে দীর্ঘক্ষণ একভাবে বসে থাকা খুবই বাজে অভ্যাস।

‘অ্যানাল্স অফ ইন্টারনাল মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে ইটদিস নটদ্যাট প্রতিবেদনে জানানো হয়, অনেকক্ষণ একভাবে বসে থাকার সঙ্গে মৃত্যু ঝুঁকি বৃদ্ধি পাওয়ার সম্পর্ক রয়েছে।

এদিকে ইয়েলমেডিসিন ডটঅর্গ’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বেশি সময় ধরে এক জায়গায় বসে থাকলে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার, স্মৃতিভ্রংশ রোগ, ওজন বাড়া, বিষণ্নতা, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগ।

তাই বসে থাকতে থাকতে মাঝে মাঝে উঠে দাঁড়ানো জরুরি। আরও এটা স্বাস্থ্যকরও।

হার্ভার্ড হেল্থ’য়ের এক প্রকাশনায় বলা হয়, “মাঝে উঠে দাঁড়ানো, পায়চারি ও নড়াচড়ার মাধ্যমে একদিনে ৩৫০ ক্যালরি খরচ করা যায়।

তাই বাসায় কিংবা অফিসে বসে থাকার ফাঁকে ফাঁকে হাত-পা টান টান ও হাঁটাহাঁটি করার মতো অভ্যাস গড়তে হবে।

অনলাইন থেকে সুষম খাবার বাছাই

প্রলোভন থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে। এই সময়ে অনলাইন থেকে নানান মুখরোচক খাবার অর্ডার করলেই বাসায় চলে আসে। সেগুলো খাওয়া বন্ধ করার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার বাছাই করার চেষ্টা করতে হবে বিভিন্ন অনলাইন খাবারের দোকান থেকে।

বিষয় হল, ঘরে মুখরোচক অস্বাস্থ্যকর খাবার না থাকলে সেগুলো খাওয়া হবে কম।

মজার বিষয় হল ‘জার্নাল অফ নিউট্রিশন এডুকেশন অ্যান্ড বিহেইভিয়র’য়ে প্রকাশিত বস্টনের ‘চ্যান স্কুল অফ পাবলিক হেল্থ’য়ের গবেষণা অনুযায়ী- সরাসরি বাজারে গিয়ে খাবার কিনলে মানুষ বরং অস্বাস্থ্যকর খাবার কম কেনে।

তাই বাইরে গিয়ে খাবার কিনে আনার চেষ্টা করতে হবে। এতে হাঁটাহাঁটিও হবে।

পদক্ষেপ বাড়ানো সিঁড়ি ব্যবহারে অভ্যস্ত হওয়া

যখনই বাইরে যাওয়া হবে হাঁটার চেষ্টা করতে হবে। দোতলা তিনতলা উঠতে নামতে লিফটের পরিবর্তে সিঁড়ি ব্যবহার করার অভ্যাস গড়তে হবে।

এটা যে কতটা উপকারী সেটা উপলব্ধির জন্য ‘হার্ভার্ড হেল্থ’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুসারে জানানো যায়, দেখা গেছে নারীদের মধ্যে যারা দৈনিক ৪,৪০০ পদক্ষেপ ফেলেছেন তাদের মৃত্যু ঝুঁকি কমেছে ৪১ শতাংশ।

দিনে ২,৭০০ পদক্ষেপ নিতে পারলেই যথেষ্ট ধরে নেওয়া যায়।

তাই যে পথেই বের হওয়া হোক, হাঁটার জন্য রাস্তা বেছে নিতে হবে। রাস্তা পার হতে সিঁড়ি ভেঙে ফুটওভার ব্রিজে ওঠার অভ্যাস গড়তে হবে।

দেহ পুষ্ট করতে পর্যাপ্ত ঘুম

মোবাইলের মতো দেহেরও রিচার্জের প্রয়োজন। আর এজন্য চাই পর্যাপ্ত ঘুম।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রিয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা জানাচ্ছে, ভালো ও পর্যাপ্ত ঘুম না হলে দেখা দেবে- হৃদযন্ত্রের নানান রোগ, টাইপ টু ডায়াবেটিস, বিষণ্নতা ও স্থূলতা।

এই সংস্থা আরও জানায়, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সিদের জন্য প্রতি রাতে সাত বা এরও বেশি ঘুমের প্রয়োজন। ৬১ থেকে ৬৪ বছর বয়সিদের প্রয়োজন সাত থেকে নয় ঘণ্টা। আর পয়ষট্টির ওপরে যাদের বয়স তাদের দরকার সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুম।

নিয়ম করে একই সময়ে ঘুমানো, বিছানায় যাওয়ার আগে মোবাইল ফোন থেকে দূরে থাকা, টিভি না দেখা এবং ঘুমের আগে অতিরিক্ত না খাওয়া ইত্যাদি অভ্যাসের মাধ্যমে পর্যাপ্ত ঘুমের অভ্যাস গড়া যায়।

মানসিক চাপ দূর করতে

মানুষের জীবনে মানসিক চাপ থাকবেই। সেটা হতে পারে চাকরির সমস্যা, প্রতিদিনের খরচ, পরিবার নিয়ে দুঃশ্চিন্তা কিংবা সম্পর্কে সমস্যা।

কারণ যেটাই হোক, শারীরিক ও মানসিক ভাবে ভালো থাকতে মনের চাপ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। না হলে উচ্চ রক্তচাপসহ নানান রোগ দেখা দেবেই।

মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে- স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, সচল থাকা ও পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ কমানো যায়। এছাড়া ধ্যান, ইয়োগা, মালিশ ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণকারী ব্যায়ামের মাধ্যমেও শরীর ও মন শিথিল রাখা যায়।

পাশাপাশি শান্ত সংগীত শোনা, বই পড়াও কারও কারও ক্ষেত্রে ভালো কাজ দেয়। এছাড়া অতিরিক্ত চিন্তা করা ও দায়িত্বের অধিক দায়িত্ব নেওয়ার মতো বিষয়গুলো এড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।

আর সেচ্ছাসেবী হিসেবে কোনো কর্মকাণ্ডে যুক্ত হতে পারলেও মানসিকভাবে অনেক শান্তি পাওয়া যায়।

আরও পড়ুন

Also Read: ঘুমের সমস্যা থেকে মস্তিষ্কে আঘাত

Also Read: ঘুমের অভ্যাস ঠিক করতে

Also Read: মানসিক চাপ থেকে ত্বকের সমস্যা

Also Read: সুস্থ থাকতে উদ্ভিজ্জ খাবার

Also Read: মানসিক চাপে থাকার লক্ষণ আর প্রতিকারের উপায়