বংশগত কারণ ছাড়াও স্বাস্থ্যগত ও প্রসাধনীর কারণেও চুল সাদা হওয়া শুরু করতে পারে।
Published : 13 Feb 2024, 01:09 PM
বয়সের সাথে সাথে চুল পাকা স্বাভাবিক। তবে অনেকের তরুণ বয়সে চুল পেকে যায়। এর পেছনে রয়েছে নানান কারণ।
“চুল পড়ার সমস্যা হওয়ার মতো চল্লিশের আগে চুল পাকার সমস্যাও দেখা দিতে পারে”- হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ভারতীয় ত্বক বিশেষজ্ঞ রিংকি কাপুর।
তিনি এই সমস্যার জন্য ১১টি কারণ উল্লেখ করেন।
বংশগতি: কম বয়সে চুল পাকার অন্যতম কারণ হল বংশগতি। যদি কারও বাবা-মা বা পূর্বপুরুষের অল্প বয়সে চুল পাকার ইতিহাস থাকে তবে সন্তানদের মাঝেও এই প্রভাব দেখা দেয়। কিছু জিন মেলানিন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে যা রংয়ে প্রভাব রাখে। ফলে চুল সাদা হয়ে যায়।
অক্সিডেটিভ চাপ: ‘ফ্রি রেডিকেল’ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ভারসাম্যহীনতার কারণে অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ে। বাহ্যিক বিষয় যেমন- দূষণ, অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ায়।
ভিটামিনের ঘাটতি: অপর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ যেমন- ভিটামিন বি১২, লৌহ, কপার ও জিংকের ঘাটতি চুল সাদা হওয়ার জন্য দায়ী। এসব পুষ্টি উপাদান মেলানিন উৎপাদন করে চুলের ফলিকলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
হরমোন: কৈশোর, গর্ভাবস্থা ও মেনোপোজের সময় হরমোনের পরিবর্তন চুলের রংয়ের ওপর প্রভাব রাখে। হরমোণের ওঠানামা যেমন- ‘মেলানোসাইট স্টিমুলেটিং হরমোন’ ও কর্টিসোল চুল সাদা করার জন্য দায়ী।
দীর্ঘমেয়াদী মানসিক চাপ: দীর্ঘদিন মানসিক চাপ দেহের নানান কার্যক্রিয়া এমনকি চুলের রংয়েও পরিবর্তন আনে। দীর্ঘমেয়াদী বা উচ্চমাত্রার মানসিক চাপ ‘মেলানোসাইটিস’ বা মেলানিন উৎপাদনে ক্ষয় বৃদ্ধি করে যা চুল সাদা করার জন্য দায়ী।
ধূমপান: নানান রকম স্বাস্থ্য ঝুঁকির সাথে জড়িত ধূমপান। আর এটা অকালে চুল পাকার জন্যও দায়ী। এতে থাকা ক্ষতিকর দূষিত পদার্থ প্রাকৃতিক প্রক্রিয়াকে বিভ্রান্ত করে, মেলানিন উৎপাদনের ওপরে প্রভাব রাখে।
শ্বেতী রোগ: এটা এক ধরনের ত্বকের জটিলতা যা রঞ্জক কোষকে আক্রান্ত করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এটা চুলের রংয়ের ওপরেও প্রভাব রাখে। কোষ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াতে অনেক সময় চুল সাদা হয়ে যেতে পারে।
থাইরয়েডের জটিলতা: “কিছু শারীরিক অসুস্থতা যেমন- থাইরয়েডের সমস্যা এবং অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতার সমস্যা ছাড়াও কেমোথেরাপি গ্রহণ করলে চুলের রংয়ের পরিবর্তন হয়”- বলেন ডা. কাপুর।
অকালে চুল পাকার অন্যতম কারণ হিসেবে বিভিন্ন ধরনের ওষুধ অথবা স্বাস্থ্য সেবাকে ধরা যেতে পারে।
চুলে রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার: অতিরিক্ত কড়া রাসায়নিক উপাদান যেমন- ব্লিচ বা রঙিন উপাদান চুলের ক্ষয়সাধন করে আর মেলানোসাইটিসের ওপর প্রভাব রাখে। নিয়মিত রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার চুল সাদা করে ফেলে ও প্রাকৃতিক ‘পিগমেন্টেইশন’ বা রং নষ্ট করে দেয়।
অটোইমিউন ডিজঅর্ডার: এই অবস্থার কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দেহের নিজের কোষে চড়াও হয়। যেটার প্রভাব চুলের রংয়েও পড়ে।
দূষণ: বায়ু দূষণের মতো প্রাকৃতিক দূষণ চুলের স্বাস্থ্য খারাপ করে। ফ্রি রেডিকেল অক্সিডেটিভ চাপ বাড়ায় এবং চুল সাদা করে ফেলে।
প্রতিরোধের উপায়
ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়তে হবে। যা দেহের পাশাপাশি চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখবে। খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে টাটকা ফল, সবজি, চর্বিহীন মাংস ও পূর্ণ শষ্য।
মানসিক চাপ কমাতে নানান কিছু চর্চা করা যেতে পারে। যেমন- ধ্যান, ইয়োগা বা গভীর নিঃশ্বাসের ব্যায়াম।
চুলে কড়া রাসায়নিক ব্যবহার পরিহার করতে হবে। যেমন- ব্লিচিং এবং অতিরিক্ত রং করা।
মাথার ত্বক নিয়মিত মালিশ করতে হবে। এতে মাথায় রক্ত চলাচল বাড়বে, চুলের গোড়া সুস্থ থাকবে। ফলে বজায় থাকবে প্রাকৃতিক রং।
সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মির ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে চুলে সুরক্ষক ব্যবহার বা মাথায় টুপি বা স্কার্ফ পরা উচিত।
শুষ্কতা এড়াতে ও চুল আর্দ্র রাখতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে।
যদি কোনো শারীরিক সমস্যা থাকে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
আরও পড়ুন