দিনে ঘুমে চোখ ঢুলু ঢুলু, রাতে পেঁচার মতো জেগে থাকা- সমস্যা থেকে উত্তরণের রয়েছে উপায়।
Published : 18 Mar 2025, 04:50 PM
রাতে সময় মতো বিছানায় গেলেও চোখে ঘুম আসতে সময় লাগা এবং ভোরবেলা ঘুম ভাঙলে তন্দ্রায় ভুগতে থাকার সমস্যায় ভোগেন অনেকেই। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে এটি বেশি দেখা যায়।
ফলে সকালে ঘুম থেকে উঠতে না পারা এবং রাতে গভীর ঘুমের অভাব খুব সাধারণ অভিযোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা এই ধরনের সমস্যার পেছনে নানান কারণ চিহ্নিত করেছেন এবং সমাধানে দিয়েছেন কিছু উপকারী পরামর্শ।
প্রথমেই জানা প্রয়োজন কেনো রাতে ঘুম আসে না, অথচ সকালে এত ঘুম পায়।
প্রতিদিন এমন সমস্যা অনুভবের কারণে মারাত্মকভাবে শারীরিক ক্লান্তি দেখা দেয়। অন্যদিকে রাতে ঘুমের জন্যও শরীর প্রস্তুত হতে পারে না।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
যুক্তরাষ্ট্রর ‘মিশিগান মেডিকেল স্কুল’য়ের নিউরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এবং ঘুমের ওষুধ-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. সোনজা শুটজ সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “যারা রাতে ঘুমাতে পারছেন না বা সকালে তন্দ্রাচ্ছন্ন আছেন, তাদের সমস্যার মূল কারণ হতে পারে ‘ব্যাড স্লিপ হাইজিন’ বা বাজে ঘুমের অভ্যাস।”
সাধারণত, শরীরের ঘুম-জাগরণ সাইকেল (সার্কাডিয়ান রিদম) যদি ঠিকভাবে কাজ না করে, তাহলে রাতে ভালো ঘুমের অভাব দেখা দেয়। বিশেষ করে যদি ঘুমের সময় এবং জেগে ওঠার সময় নিয়মিত না থাকে। তাহলে এটি ঘুমের গুণগত মানে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে- জানান তিনি।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং ‘গোল্ডেন বেয়ার স্লিপ এবং মুড রিসার্চ ক্লিনিক’য়ের পরিচালক ড. অ্যালিসন হার্ভি একই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, “এই ধরনের ঘুমের সমস্যা কখনও কখনও অস্বীকারযোগ্য বলে মনে হতে পারে। অনেকেই এটিকে অলসতার লক্ষণ মনে করতে পারেন, বিশেষত তরুণদের মধ্যে। তবে এটি আসলে কোনো ধরনের ইচ্ছাশক্তির অভাব নয় বরং শরীরের ঘুমের প্রতি অত্যাধিক ব্যাঘাত বা কোনো অস্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাসের ফলস্বরূপ হতে পারে।”
ঘুমের অভ্যাস ঠিক করা
এই ধরনের সমস্যা সমাধানে প্রথমে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ঘুমের ‘প্যাটার্ন ট্র্যাক’ করা।
বিশেষজ্ঞরা জানান, ঘুমের সময় এবং সকালে ওঠার সময় সম্পর্কে সঠিক তথ্য রাখা দরকার। এটি বুঝতে পারলে সহজেই সমাধান বের করা যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক স্লিপ ডিসঅর্ডার সেন্টার’য়ের ‘বিহেইভিয়রাল স্লিপ মেডিসিন প্রোগ্রাম’য়ের পরিচালক ড. মিশেল ড্রেরাপ বলেন, “অধিকাংশ সময় রাতে ভালো ঘুম না আসার কারণ হচ্ছে শরীরের ‘সার্কাডিয়ান রিদম’য়ের পরিবর্তন। এই পরিবর্তন যদি কেউ সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে সকালে তন্দ্রাচ্ছন্নতা এবং রাতের ঘুমে সমস্যা হতে পারে।”
ঘুমের সঠিক সময়সূচি
এই বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুমের সময়সূচি ঠিক করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হল- রাতের ঘুমের জন্য শরীরকে প্রস্তুত করা এবং এই পরিবর্তন ধীরে ধীরে আনা।
একজনের ঘুমের সময়সূচি পরিবর্তন করতে হলে, প্রতিদিন রাতে ১৫ থেকে ৩০ মিনিট আগে বিছানায় যেতে হবে। তবে শেষ রাতে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা কিংবা সাপ্তাহিক ছুটির দিন অতিরিক্ত ঘুমিয়ে পড়া- ঘুমের সঠিক রুটিনে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
তাই সপ্তাহের দিনগুলোতেই নির্দিষ্ট সময়েই উঠে পড়া উচিত।
সঠিক ঘুমের জন্য পরিবেশ
ঘুমের পরিবেশও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, রাতে ভালো ঘুমের জন্য বিছানা এবং ঘরের পরিবেশ উপযুক্ত হওয়া জরুরি।
যেমন- শোয়ার আগে ‘ইলেকট্রনিক ডিভাইস’ ব্যবহার কমানোর পাশাপাশি ঘরের আলো মৃদু রাখা উচিত।
মনের শান্তি এবং ভালো ঘুমের জন্য বই পড়া কিংবা ধ্যান করার মতো প্রশান্তির কাজগুলো করাও উপকারী।
বিশেষত তরুণরা যখন কাজ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার এক সাথে করেন তখন তাদের ঘুমের অভ্যাসে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে, যা রাতের ঘুমে সমস্যার সৃষ্টি করে।
সকালের তন্দ্রাচ্ছন্নতা
সকালে তন্দ্রাচ্ছন্নতা কাটানোর জন্য, বিশেষজ্ঞরা সুপারিশ করছেন- যেন একটি নির্দিষ্ট রুটিন অনুসরণ করা হয়, যাতে শরীর এবং মস্তিষ্ক সকালে উঠেই সক্রিয় হতে পারে।
তবে ঘড়ির অ্যালার্মে ‘স্নুজ বাটন’ প্রেস করা থেকে বিরত থাকা উচিত। কারণ এটি ঘুমের অবনতি ঘটাতে পারে।
সকালে উঠে কিছু শারীরিক কাজ করা যেমন- মুখ ধোয়া বা দাঁত ব্রাশ করা শরীরকে দ্রুত জাগিয়ে তোলে।
শারীরিক কার্যক্রম
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো দিনের বেলা শারীরিক কার্যক্রম। দিনের বেলা পর্যাপ্ত শারীরিক কসরত না করলে রাতে ঘুমে সমস্যা হতে পারে। বিশেষত যারা দীর্ঘসময় বসে কাজ করেন, তাদের জন্য নিয়মিত শারীরিক কসরত জরুরি।
ঘুমের পরিমাণ এবং গুণগত মান
প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রাতের ঘুমের পরিমাণ সাধারণত সাত থেকে নয় ঘণ্টা হতে হবে। তবে কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে এটি একটু বেশি বা কম হতে পারে।
সঠিক ঘুমের জন্য ঘুমের গুণগত মান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন ব্যক্তি যদি সঠিক পরিমাণ ঘুম না পায়, তবে শরীর সঠিকভাবে বিশ্রাম পায় না, যার ফলে দিনের বেলা ক্লান্তি এবং তন্দ্রাচ্ছন্ন-ভাব হতে পারে।
ঘুমের সমস্যা এবং অসুস্থতা
ঘুমের অভাবে কারণে সকালের তন্দ্রাচ্ছন্নতা হওয়া ‘স্লিপ ডিস্টার্বেন্স’য়ের লক্ষণও হতে পারে। যেমন- ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’। এই সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার প্রয়োজন হতে পারে।
এছাড়া, কিছু ওষুধও তন্দ্রাচ্ছন্নতা সৃষ্টি করতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য এবং ঘুম
এছাড়া মানসিক স্বাস্থ্যও ঘুমের ওপর প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে যারা বিষণ্নতায় ভোগেন, তাদের ঘুমের অভ্যাসে গুরুতর প্রভাব পড়ে।
এই ধরনের ব্যক্তিরা সাধারণত সকালবেলা খুব ক্লান্ত অনুভব করেন এবং তন্দ্রাচ্ছন্নতা দীর্ঘ সময় ধরে চলে।
যে কারণে মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
আরও পড়ুন