যেমন রয়েছে খাবারে বৈচিত্র্য তেমনি আছে প্রাকৃতিক শোভা।
Published : 20 Jul 2023, 12:50 PM
ভিয়েতনামে যেতে চাইলে ভিসা পদ্ধতি এবং সংশ্লিষ্ট এজেন্টের প্রকৃত দক্ষতা অভিজ্ঞতা জেনে বেড়াতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা উচিত।
সৌখিন পরিব্রাজক সায়মা সিদ্দিকা ভিয়েতনাম ঘুরে এসে জানাচ্ছেন নিজের অভিজ্ঞতা।
এশিয়া অঞ্চলে ভ্রমণ করার জন্য অধিকাংশ মানুষেরই প্রিয় দেশ ভিয়েতনাম। কারণটা হতে পারে এদেশের জনগণ যেমন খুব বন্ধুত্বপূর্ণ তেমনি তাদের খাবারও খুব বৈচিত্র্যময় ও সুস্বাদু। দেখার মতো জায়গাগুলো আশ্চর্যজনক চমৎকার, যেখানে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, ইতিহাস সমৃদ্ধ পুরাকীর্তি এবং আধুনিক স্থাপত্যশিল্প সমানহারে আকর্ষণীয়।
ভিসা পদ্ধতি ও জটিলতা
বাংলাদেশের যেসব নাগরিকরা ভিয়েতনাম বেড়াতে যেতে ইচ্ছুক তাদের অবশ্যই ভিসার মাধ্যমে সেই দেশে প্রবেশ করতে হবে। অর্থাৎ পৃথিবীর অন্য আরও ২০/২৫টা দেশের মতো বাংলাদেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা ফ্রি ভ্রমণের কোনো সুযোগ সুবিধা নেই।
আমাদের জন্য এদেশে দুধরনের ভিসা পদ্ধতি প্রচলিত আছে। অন-অ্যারাইভাল ভিসা আর স্টিকার ভিসা।
উল্লেখ্য যে, দুটো ভিসার জন্যই ইনভাইটেশন লেটার বা আমন্ত্রণপত্র অবশ্যই নিতে হবে। যে কোনো সাধারণ মানুষ কোনো ‘ট্রাভেল এজেন্সি’র মাধ্যমে নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে বা পরিচিত বন্ধু বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এই পত্র নিতে পারেন। এজেন্সি ভেদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে।
ভুক্তভোগী হিসেবে আমি এখানে নিজের অভিজ্ঞতা জানাতে পারি যে- ভিসার দায়িত্ব কোনো এজেন্সির হাতে দেওয়ার আগে অবশ্যই তাদের বিশ্বস্ততা যাচাই-বাছাই করে নিতে হবে। না হলে নকল আমন্ত্রণপত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে তারা শুধু যে টাকা কয়টাই নিয়ে নেবে তাই না, এর সাথে চরম ভোগান্তিসহ সমস্ত ভ্রমণ পরিকল্পনাই ওলটপালট করে দিতে পারে যে কোনো অসাধু ‘ট্রাভেল’ ব্যবসায়ী।
দর্শনীয় স্থান
ভিয়েতনাম- হাজার বছরের পুরানো ইতিহাস ও ঐতিহ্যসহ সমুদ্র সৈকত, বৌদ্ধপ্যাগোডা এসবের জন্যই বেশি পরিচিত।
হ্যালংবে’র মতো বিখ্যাত দৃশ্য থেকে সাপা শহরের পাহাড়ি গ্রাম হয়ে হ্যানয়, দালাত, দানাং কিংবা হোইআনের মতো অপরূপ শহর পাড়ি দিয়ে হোচিমিনের ফুকোয়াক দ্বীপ পর্যন্ত এর সৌন্দর্য বিস্তৃত।
খাবার
খাবারের বৈচিত্র্য যারা পছন্দ করেন তাদের জন্য ভিয়েতনাম নিঃসন্দেহে স্বর্গরাজ্য। মাছ, মাংস, শাকসবজি ভাত অথবা নুডুলসে তারা বিশেষ ধরনের মসলা ব্যবহার করে খাবারকে করে তোলেন অসাধারণ মুখরোচক। এর সাথে রান্নার পদ্ধতিতে নিয়ে আসেন খানিকটা ভিন্নতা।
সেদেশে একবার খেয়ে সারা জীবন মনে রাখার মতো কিছু খাবার হল- বানহমি, কমট্যাম, বুনবোহিউ, কাওলু, মিকুয়াং, বানজেও, বুনচা, বানহবেও, গোইকুওন, বানহকুওন।
যাতায়াত ব্যবস্থা ও খরচ
বাংলাদেশ থেকে সাধারণত বিভিন্ন সংস্থার বিমানে ভিয়েতনামে যাতায়াতের খরচ হয়ে থাকে ৪০ থেকে ৭০ হাজার টাকা।
এখানে বলে রাখা ভালো যে, টিকিট অবশ্যই ইনভাইটেশন লেটার বা আমন্ত্রণপত্র হাতে পাওয়ারপরেই কাটতে হবে।
ভিয়েতনামের অভ্যন্তরে এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করার জন্য রয়েছে সুলভ মূল্যে ‘ডোমেস্টিক ফ্লাইট’, স্লিপার কোচ এবং আরামদায়ক ট্রেনের ব্যবস্থা।
এছাড়া শহরের অভ্যন্তরে চলাচলের জন্য রয়েছে অ্যাপের মাধ্যমে চালিত বাইক ও গাড়ি সেব। সাধারণ লোকাল বাস এবং শেয়ারের মাইক্রোবাস।
তবে যারা স্কুটি চালাতে পারেন তারা অনেক কম খরচে সারাদিনের জন্য বাইক ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন।
ভিয়েতনামে বেড়ানোর আরও একটি সুবিধা হচ্ছে এদেশে অনেক কম দামে থাকা-খাওয়া এবং ঘোরাফেরা করা যায়।
যেহেতু এদেশে দিনেরাতে পথেঘাটে যাতায়াত নিরাপদ তাই নির্দ্বিধায় ছেলেমেয়ে নির্বিশেষে যে কোনো ব্যক্তি একা ঘুরে আসতে পারেন।
এক্ষেত্রে যারা ডরমেটরিতে থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা শহর অনুযায়ী ‘আগোডা’ বা ‘বুকিং ডটকম’ অ্যাপের সাহায্যে ৩শ’ থেকে ৬শ’ টাকার মধ্যে প্রতিরাতে থাকার ব্যবস্থা করে নিতে পারেন।
খাবারের খরচটা নির্ভর করে যার যার রুচি-পছন্দের ওপর। ১শ’ থেকে ৩শ’ টাকার মধ্যে ফু, চিকেন স্টিক, সালাদ অথবা বাহ্নমি-ধরনের খাবার খেয়ে নিতে পারেন মনের আনন্দে।
এছাড়াও রয়েছে অনেক ধরনের বিশেষ খাবার যা প্রতিটি শহরের বিশেষত্ব।
পুরো ২১টি দিনের ভ্রমণ শেষে আমার উপলব্ধি ছিল: ভিয়েতনামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং রান্নার জাদুতে মুগ্ধ হওয়ার সুযোগ কারও হাতা ছাড়া করা উচিৎ হবে না।