কিশোর বয়সে আত্মঘৃণা একটি গভীর এবং জটিল মানসিক সমস্যা।
Published : 17 Apr 2025, 06:54 PM
কিশোর বয়সে অনেকের মধ্যে নিজের প্রতি বিদ্বেষ কাজ করতে পারে; যা একটি দীর্ঘস্থায়ী অনুভূতি হিসেবে প্রবাহিত হয় এবং কিশোরদের মানসিক স্বাস্থ্যকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
আত্মঘৃণা বলতে যা বোঝায়
অধিকাংশ মানুষ জীবনে কখনও না কখনও আত্মসমালোচনা অনুভব করেছে। এটা সাধারণত সৃষ্টিকর্তা বা পরিবেশের প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ হতে পারে। যা নিজের অনুভূতিতে আঘাত দেয়। তবে আত্মঘৃণা- এর চেয়ে অনেক গভীর এবং জটিল।
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের সহকারী অধ্যাপক ও মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, ড. ব্লেইস আগুইরি এই বিষয়ে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “যদি একজন কিশোর জীবনের খুব প্রাথমিক সময় থেকে আত্মবিশ্বাসের অভাব অনুভব করতে শুরু করে এবং মনে করে যে সে অপর্যাপ্ত, তবেই তা আত্মঘৃণার রূপ নিতে পারে।”
এটা তখনই ঘটতে পারে যখন কিশোররা ছোটবেলা থেকেই শিখে নেয় যে তারা যথেষ্ট ভালো নয় বা তাদের মধ্যে কিছু একটা ত্রুটি রয়েছে।
হতে পারে সেটা শারীরিক, মানসিক বা সামাজিক কোনো সমস্যার কারণে। এক্ষেত্রে, কিশোররা তাদের নিজস্ব ত্রুটির দিকে বেশি মনোযোগ দেয় এবং অনুভব করে যে তারা কখনই ভালো হতে পারবে না।
আত্মঘৃণার কারণ
ড. আগুইরি তার গবেষণায় বলছেন, “অনেক কিশোরের নিজস্ব অক্ষমতা বা শারীরিক দুর্বলতার কারণে আত্মঘৃণার শিকার হয়। যেমন- কেউ যদি শিখতে বা শারীরিকভাবে কিছু করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে মনে করে তারা সবার তুলনায় কম শক্তির অধিকারী।”
এছাড়া, যেসব কিশোর শারীরিক বা মানসিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত, তাদের মধ্যে আত্মঘৃণা আরও বেশি প্রকট হয়। তবে এটি শুধু একক কারণে হয় না, বরং সমাজের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি, বাবা-মায়ের আচরণ এবং ‘বুলিং’য়ের মতো নানান কারণেও এই অনুভূতি বেড়ে যায়।
প্রতিবেদনে ড. আগুইরি আরও বলেন, “ডিজিটাল যুগে সামাজিক মাধ্যম ও বিজ্ঞাপনগুলোর মাধ্যমে এক ধরনের ত্রুটিপূর্ণ আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে, যা কিশোরদের মধ্যে আরও বেশি আত্মঘৃণার সৃষ্টি করছে।”
তারা বারবার শোনে যে, তারা যথেষ্ট সুন্দর, স্মার্ট বা সফল নয় এবং যদি তারা কোনো কিছু না কিনে তবে তাদের জীবনে পরিবর্তন আসবে না।
আত্মঘৃণা এবং বিষণ্নতার মধ্যে পার্থক্য
আত্মঘৃণা এবং বিষণ্নতা এক নয়, যদিও অনেক সময় এগুলো একে অপরকে প্রভাবিত করতে পারে।
ড. আগুইরি বলেন, “বিষণ্নতায় কেউ হয়ত জীবন নিয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারে। তবে আত্ম-বিদ্বেষে সেটা নিজের প্রতি এক ধরনের ঘৃণা সৃষ্টি করে।”
একজন বিষণ্ন ব্যক্তি সাধারণত নিজের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ থাকে। আর আত্মঘৃণায় ভোগে এমন একজন ব্যক্তি তার নিজস্ব অস্তিত্বকেই খারাপ মনে করে।
আরও দেখা গেছে- যাদের আত্মঘৃণা আছে, তাদের মধ্যে খাওয়া সংক্রান্ত ব্যাধি বা আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দেয়।
অনেক কিশোর যারা এই অনুভূতিতে ভুগছে, তারা তাদের শরীরের আকার বা নিজেদের শারীরিক এবং মানসিক অবস্থা নিয়ে কষ্ট পায়।
আত্মঘৃণার চিকিৎসা
আত্মঘৃণার চিকিৎসার জন্য ‘ডায়ালেকটিকল বিহেভিয়ার থেরাপি (ডিবিটি)’ একটি কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।
এই থেরাপির মাধ্যমে কিশোরদের শেখানো হয় কীভাবে তাদের অনুভূতিগুলোর সঙ্গে আচরণ করতে হবে, আর তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে।
ড. আগুইরি এই থেরাপি নিয়ে তার গবেষণায় বলেন, “ডিবিটি’ কিশোরদের শেখায় তাদের অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করতে, তাদের সহানুভূতির মাধ্যমে একে অপরকে বুঝতে এবং তাদের আত্মমূল্যায়ন উন্নত করতে।”
কীভাবে অভিভাবকরা সহায়তা করতে পারেন
ড. আগুইরি পরামর্শ দেন, “এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানের সঙ্গে সঠিকভাবে কথা বলুন। আর তাদের অনুভূতি সঠিকভাবে শোনার চেষ্টা করুন।”
তিনি আরও যোগ করেন,“কোনও সন্তান যখন নিজের অনুভূতির মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন বাবা-মা তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা না করে, বরং তাদের শুনতে এবং তাদের পক্ষে দাঁড়াতে পারেন।”
এছাড়া সমর্থন এবং একটি নিরাপদ পরিবেশ কিশোরদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন
কিশোর বয়সে শারীরিক সৌন্দর্য নিয়ে সচেতন করতে
আত্ম-পরিচর্যার যেসব অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়