আত্ম-পরিচর্যার যেসব অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়

নিজের যত্ন নেওয়া আর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা পরস্পরের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িত।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2021, 12:30 PM
Updated : 23 Nov 2021, 12:30 PM

স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো শরীরকে যেমন ভালো রাখে, তেমনি নিজের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আপনি কতটুকু উৎসাহী তার ওপর নির্ভর করে ওই অভ্যাসগুলো মানসিক অবস্থাও ভালো রাখে।

আর বর্তমান করোনাভাইরাসের সময়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নিয়েই সবাই সতর্ক, আর সেটাই হওয়া উচিত।

যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা মনিকা’তে অবস্থিত ‘প্যাসিফিক নিউরোসাইন্স ইন্সটিটিউট অ্যাট প্রভিডেন্স সেইন্ট জন’স হেল্থ সেন্টার’য়ের ‘জেরিয়াট্রিক কগনিটিভ হেল্থ’ বিভাগের পরিচালক ডা. স্কট কায়সার বলেন, “বাজারে এমন অসংখ্য পণ্য মেলে যেগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে জোরদার করার দাবি করে। তবে সেগুলোর কার্যকারিতার সপক্ষে বৈজ্ঞানিক যুক্তি শক্ত নয়।”  

‘ইট দিস নট দ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “সাধারণ সর্দিজ্বর থেকে দূরারোগ্য ব্যধি পর্যন্ত সকল রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকার সবচাইতে কার্যকর উপায় হল স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা বজায় রাখা।”

নিয়মিত শরীরচর্চা

প্রতিদিন নুন্যতম ব্যায়ামের অভ্যাস শরীরের জন্য সব দিক দিয়ে উপকারী।

ডা. কায়সার বলেন, “ব্যায়াম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জোরদার করে, বাড়ায় রক্ত সঞ্চালন। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধির কারণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আরও সক্রিয় হয়।”

‘প্রভিডেন্স সেইন্ট জন’স চাইল্ড অ্যান্ড ফ্যামিলি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ইন সান্তা মনিকা’র ‘ইন্টেলেকচুয়াল অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ডিজাবিলিটিজ অ্যান্ড মেন্টাল হেল্থ সার্ভিসেস’য়ের ‘প্রোগ্রাম ডিরেক্টর এবং মনবিজ্ঞানী ড. মায়রা মেনডেজ বলেন, “ব্যায়ামের সরঞ্জাম বা ব্যায়ামাগারের মাসিক খরচ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ ঘরে বসে কোনো রকম সরঞ্জাম ছাড়াই অসংখ্য ব্যায়াম করা সম্ভব। শুধু সিঁড়িতে ওঠানামা করে কিংবা ঘরে বাইরে হাঁটাহাঁটি করাই প্রাত্যহিক ব্যায়াম হিসেবে যথেষ্ট।” 

বাইরে যান

মাত্র কদিন আগেই ‘লকডাউন’য়ের কারণে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ ছিলেন গৃহবন্দি। দিনের কিছুটা সময় ঘরের বাইরে বেড়িয়ে আসা মানসিক অবস্থার জন্য কতটা উপকারী তা ঘরে বসে থেকে সবাই টের পেয়েছেন।

ডা. কায়সার বলেন, “স্বাস্থ্যবান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে বাইরে বেড়িয়ে আসার কারণে পাওয়া অনেকগুলো উপাদান। যেমন বাইরের রোদ থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি’য়ের সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সরাসরি সম্পর্ক প্রমাণীত হয়েছে গবেষণায়।”

ডা. মেনডেজ বলেন, “যে কাজগুলো আপনাকে আনন্দ দেয় সেই কাজগুলোবে হেলাফেলা করা উচিত নয়। যেমন- গান শোনা, মিষ্টি রোদে প্রাণ ভরে শ্বাস নেওয়া- এই ছোট বিষয়গুলোও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রার অংশ।”

আড্ডা

পরিবার, বন্ধুমহলের সঙ্গে আড্ডা, সামাজিক বিভিন্ন কার্যকলাপে অংশ নেওয়া নিছক বিনোদন নয়, শরীর ও মনের ওপর এদের জোরালো উপকারী ভূমিকা থাকে।

ডা. কায়সার বলেন, “সামাজিক একাকিত্ব অত্যন্ত ভয়ঙ্কর। নিজেকে একা অনুভব করা ঠিক ততটাই ক্ষতিকর, যতটা ধূমপান ক্ষতি করে। পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সুন্দর সময় কাটানো মাধ্যমে যে আনন্দ পাবেন তা আপনার মস্তিষ্ককে ভালো রাখবে, মেজাজও থাকবে শান্ত।”

ডা. মেনডেজ যোগ করেন, “বিশ্বস্ত মানুষগুলো সঙ্গে নিজের চিন্তা ও অভিজ্ঞতাগুলো ভাগাভাগি করে নেওয়ার মাধ্যমে নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে পারবেন। নিজের যত্ন নেওয়ার সহজ উপায় এটি যাতে এক পয়সাও খরচ নেই।”

পর্যাপ্ত ঘুম

ঘুম যে অত্যন্ত জরুরি ‍সেকথা কারও অজানা নয়। জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে মানুষের ঘুমের চাহিদা ভিন্ন। প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের জন্য সারারাতের একটানা সাত থেকে নয় ঘণ্টার ঘুমকে পর্যাপ্ত বলা যায়।

শুধু ঘণ্টার সংখ্যা নয়, ঘুমের মানও গুরুত্বপূর্ণ। রাতের ঘুমটা হতে হবে একটানা গভীর ঘুম। আর দুদিন ভালো ঘুমালেন তো একদিন এলোমেলো হয়ে গেল, এমনটা চলবে না। ঘুমের নিয়মটা হতে হবে প্রতিদিন একই রকম।

ডা. কায়সার জানান, “ঘুমের ঘাটতি পূরণ না হলে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে শরীরে। এদের মধ্যে ‘ডিমেনসিয়া’ ও অন্যান্য জ্ঞানীয় সমস্যা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আবার পর্যাপ্ত না ঘুমালে শরীর নিজেকে মেরামত করার পর্যাপ্ত সময় পায়না, ফলে একদিনের ক্লান্তি পরেরদিনও ছাপ রেখে যায়।”

ধ্যান

ডা. কায়সার বলছেন, “ধ্যানের অভ্যাস মানসিক স্থিতিশীলতা আনে। বিশেষ করে এর মাধ্যমের প্রতিদিনের মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে। এই মানসিক চাপ ডেকে আনে প্রদাহ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে, ফলে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। দিন শেষে এক মানসিক চাপ আপনার শারীরিক ও মানসিক দুই দিকে থেকেই দুর্বল করে তোলে।”

ডা. মেনডেজ বলেন, “সারাদিনে মাত্র কয়েক মিনিটের ধ্যান বা ‘মেডিটেইশন’ আপনার মনকে শান্ত করবে, মানসিক চাপগুলো কমাবে। ‘ব্রিদিং এক্সারসাইজ’ মাত্র কয়েক মিনিট সময় নেয়, আর শরীর ও মনকে শান্ত করতে সেটুকুই যথেষ্ট।” 

নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস

স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলায় যদি আগ্রহ না জাগে তবে নিজে রান্না শিখতে পারেন। নিজের রান্না করা খাবার খাওয়ার সময় পুরস্কৃত হওয়ার অনুভূতি কাজ করে। তবে রান্না করতে হবে স্বাস্থ্যকর খাবার।

যদি রান্না করতে ভালো না লাগে কিংবা সময় না মেলে তবে এমন খাবারের দোকান খুঁজে নিন যা স্বাস্থ্যকর খাবার পরিবশেন করে।

ডা. কায়সার বলেন, “রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উদ্দেশ্যে যখন খাবার খাচ্ছেন তখন নির্দিষ্ট কিছু উপাদানের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। যেমন- দস্তা ও ভিটামিন সি।”

আরও পড়ুন