সারাদিন কম্পিউটারের পর্দায় তাকিয়ে থাকার পর কোনো সময় চোখ দিয়ে পানি পড়ে, কোনো সময় লাগে শুষ্ক।
কিংবা সুক্ষ্ম কোনো কাজ যেমন- সুইসুতা বা বুননের পর দেখতে ঝাপসা লাগে সব কিছু। অথবা অনেকক্ষণ ফোন ঘাঁটাঘাঁটির পর মনে হয় চোখে কী যেন পড়েছে, খচখচ করছে।
এসবই হল চোখ টনটন করার লক্ষণ। আর চিকিৎসা-বিজ্ঞানের এই সমস্যার আলাদা কোনো নাম নেই।
এই তথ্য জানিয়ে, ‘হার্ভার্ড হেল্থ পাবলিশিং’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, একটানা কোনো সুক্ষ্ম কাজ করার পরে চোখে টনটন করবেই। কারণ এতে দৃষ্টিশক্তিতে চাপ পড়ে।
আর বৈদ্যুতিক পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে এই সমস্যা হলে বলা হয়, ‘ডিজিটাল আই স্ট্রেইন’। এটা হওয়ার কারণ হল- পর্দা দিকে তাকিয়ে থাকার কারণে স্বাভাবিকের চাইতে কম পলক ফেলা হয়।
চোখে এমন অস্বস্তি হওয়ার কারণের মধ্যে রয়েছে
- অনেকক্ষণ কম্পিউটার, ট্যাবলেটস, মোবাইল ফোন বা টিভি দেখা
- অনেক্ষণ বা খারাপ আবহাওয়াতে গাড়ি চালানো
- বেশি ছোট অক্ষরে লেখা পড়া
- সুই-সুতার বা সুক্ষ্ম কাজ যা করতে অনেক কাছ থেকে দেখতে হয়
- কম আলোতে কাজ করা
- অতি উজ্জ্বল আলোতে কাজ করা
- চোখে সরাসরি বাতাস লাগা
- ধুলাবালিময় পরিবেশে বেশিক্ষণ থাকা
- ভুলভাবে কনটাক্ট লেন্স বা চশমা পরা।
- এই সমস্যার সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে
- চোখে হয়ত শুষ্কভাব নয়তো পানি পড়া
- ঝাপসা দেখা বা ‘ফোকাস’ করতে সমস্যা
- চোখে ক্লান্তভাব, চুলকানি বা জ্বালাভাব
- চোখ খুলে রাখতে সমস্যা হওয়া
- চোখের পেছনের দিকে মাথাব্যথা করা
- উজ্জ্বল আলোতে চোখে ব্যথা অনুভব করা
- এছাড়া পড়তে সমস্যা হওয়া, চোখের কারণে মনোযোগ দিতে না পারা ইত্যাদিও চোখ-টনটন করার লক্ষণ।
চোখের এই অস্বস্তি দূর করার পন্থা
চোখের টনটনভাব যাতে না হয় বা দূর করতে নানান পদ্ধতি রয়েছে।
নিয়মিত বিরতি নেওয়া
- ২০-২০-২০ পদ্ধতি অনুসরণ করা। মানে কাজের সময় প্রতি ২০ মিনিট পর, ২০ মিনিট ধরে ২০ ফুট দূরের কিছু দেখা।
- কাজ করতে করতে দুই ঘণ্টা পর বিরতি দেওয়া বা দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালানোর বিষয় থাকলে প্রতি দেড়শ কিলোমিটার পরপর বিরতি নেওয়া।
চোখ আর্দ্র রাখতে
- পড়তে বা ডিজিটাল পর্দার দিকে তাকিয়ে থাকার সময় মনে করে পলক ফেলতে হবে।
- এই ধরনের কাজের সময় চোখের জন্য উপযুক্ত কৃত্রিম কান্নার ড্রপ ব্যবহার করা।
- কম্পিউটার ব্যবহারের সময় কন্টাক্ট লেন্স নয় চশমা ব্যবহার করা।
- গাড়ি বা বাইক চালানোর সময় চোখে বাতাস না লাগার ব্যবস্থা করা
দৃষ্টি পরিষ্কার রাখতে
- ডিজিটাল পর্দা ও চশমার কাচ যেন ঘোলা না থাকে।
- দিনের বেলা চোখে আলোর উজ্জ্বলতা যাতে কম লাগে সেজন্য ব্যবহার করতে হবে পোলারাইজড সানগ্লাস, বিশেষ কের গাড়ি চালানোর সময়।
কর্মক্ষেত্রে চোখের জন্য উপকারী পরিবেশ তৈরি
‘আমেরিকান অ্যাকাডেমি অফ অপথালমোলজি (এএও)’ নিচের পদ্ধতিগুলো অনুসরণ করার পরামর্শ দেয়।
- কম্পিউটারের পর্দা মুখ থেকে ২০ থেকে ২৬ ইঞ্চি দূরে রাখতে হবে। আর মনিটর থাকবে মাঝখানে চোখের সমান্তরাল থেকে কিছুটা নিচে।
- কম্পিউটারের পর্দায় যাতে জানালা বা বেশি আলো থেকে আসা আলো বিচ্ছুরিত হয়ে চোখে না লাগে, সেই ব্যবস্থা রাখা।
- অতিরিক্ত উজ্জ্বল আলো ঠেকাতে ডিজিটাল বা কম্পিউটারের মনিটরে ফিল্টার ব্যবহার করা।
- মনিটরের উজ্জ্বলতা সমন্বয় করা। এক্ষেত্রে ঘরের ও মনিটরের আলোর পরিমাণ সমান রাখতে হবে।
- পর্দার কন্ট্রাস্ট ঠিক রাখা।
- সঠিক ভঙ্গিতে বসা যায়, এমন চেয়ার টেবিল ব্যবহার করা।
তবে এএও ‘ব্লু লাইট গ্লাস’ ব্যবহার করতে পরামর্শ দেয় না। কারণ ডিজিটাল পর্দার নীল আলো চোখে টনটনভাব তৈরি করে- এমন কোনো জোড়ালো তথ্য প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন
অতিরিক্ত ‘স্ক্রিনিং টাইম’ থেকে ত্বকের ক্ষতি পুনরুদ্ধারের পন্থা
‘ব্লু লাইট ফিল্টার’ দেওয়া কাচ চোখ বাঁচাতে পারে না
চোখের ফোলাভাব দূর করতে