‘সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার’ মানে এই না যে ‘স্যাড’ হতে হবে।
Published : 20 Nov 2023, 12:46 PM
হেমন্তের শেষে বা শীতের বিকেলগুলো কেমন মন-মরা লাগে। এমনকি দিনের সময়ও জেগে বিষণ্নভাব।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই ‘সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার (স্যাড)’ বা ঋতুগত বিষাদগ্রস্ততায় ভোগার প্রধান কারণ সূর্যালোকের স্পর্শ কম পাওয়া। কারণ শীতের সময়ে দিন ছোট আর রাত বড় হয়।
“যে কারণে দেহঘড়িতে ছন্দ পতন ঘটে। শরীর নানান বিষয় দেহঘড়ির সময় ধরে কার্যক্রম চালায়। আর এই কাজকর্মে প্রভাব রাখে দিন-রাতের আবর্তন” এভাবেই সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস সাউথওয়েস্টার্ন মেডিকেল সেন্টার’য়ের স্নায়ুবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক জোসেফ তাকাহাশি।
দেহঘড়ির ছন্দ পতনের কারণে মেজাজের এই পরিবর্তনের ফলে মন খারাপভাব হওয়া ছাড়াও দেখা দেয়- ক্লান্তি, শক্তি ও ঘুমের অভাব।
আর এই প্রভাব কাটাতে বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।
উজ্জ্বল আলোর সামনে থাকা
এই নিয়মিত চিকিৎসা পদ্ধতিতে ৩০ মিনিট ধরে ১০ হাজার লাক্স পরিমাণ আলোর সামনে থাকতে বলা হয়।
এই বিষয়ে ‘স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের মনোরোগ প্রশিক্ষক ডা. জেইসন তুচ্চারনি বলেন, “লাক্স হল আলোর তীব্রতা পরিমাপের একক। উজ্জ্বল দিনে আলোর তীব্রতার পরিমাণ হয় সাধারণ ৫০ হাজার থেকে ১০ হাজার লাক্স।”
এই ধরনের তীব্র আলোর জন্য ‘লাইট বক্স’ কিনে সেটার সামনে সময় কাটানো যেতে পারে। এর ফলে দুভাবে উপকার হয়। প্রথমত দেহঘড়ির ছন্দ ঠিক হয় আর সেরোটনিন হরমোন নিঃসরণের মাত্রা বাড়ে যা আমাদের মেজাজে ভারসাম্য রাখে।
তুচ্চারনি পরামর্শ দেন, “এই ধরনের আলোর সামনে শুধু বসে না থেকে ঘরের নানান কাজ করা বা বই পড়ে ত্রিশ মিনিট কাটানোই হবে ভালো পন্থা।”
রাতের ঘুম গুরুত্ব দেওয়া
শীতকালে দিন ছোট হওয়ার কারণে দেহঘড়ির ছন্দ পতনের ফলে ঘুম জাগরনের অভ্যাসে ঝামেলা তৈরি হয়। আর অপর্যাপ্ত ঘুম থেকে দেখা দেয় স্মৃতিভ্রংশ রোগ ও দিনের বেলায় ঝিমানোর অনুভূতি”- ব্যাখ্যা করেন নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘নর্থওয়েল হেল্থ’য়ের ঘুম-বিশেষজ্ঞ থমাস কিলকেনি।
এই সমস্যা কাটাতে রাতে নিয়মিত যে ঘুমের অভ্যাস, সেটা থেকে অন্তত এক ঘণ্টা আগে ঘুমাতে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
তিনি বলেন, “ঘরের আলো কমিয়ে দেওয়া, অন্যান্য কাজ কর্ম আগেই সেরে ফেলাসহ ঘুমানোর আগে সব ধরনের বৈদ্যুতিক যন্ত্র- মানে টেলিভিশন, মোবাইল, ল্যাপটপ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। কারণ এসবের উজ্জ্বল আলো মস্তিষ্ককে দ্বিধায় ফেলে দেয় যে- এখনও দিন। ফলে ঘুম আসতে চায় না।”
বাইরে হাঁটতে যাওয়া
ব্যায়ামের ফলে সেরোটনিন ও এন্ডোর্ফিন্স হরমোনের নিঃসরণ বাড়ে যা আমাদের ভালো বোধ করায় আর মানসিক চাপ সামলাতে সাহায্য করে। এমনকি সাধারণ ১০ থেকে ১৫ মিনিট হাঁটা থেকেও এই উপকার পাওয়া যায়।
“বাইরে হাঁটতে যাওয়া উপকারী”- বলেন কিলকেনি, “কারণ এই সময়ে সূর্যালোকের সংস্পর্শেও থাকা হয়। তাই রাতের চাইতে সকালে হাঁটতে যাওয়া বেশি ভালো।”
শরীরচর্চা বা হাঁটার কারণে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা বাড়ে। তাই রাতে ব্যায়াম করা মানে হল ঘুম আসাতে দেরি হওয়া।
সামাজিক যোগাযোগ
শীতের জড়তা কাটানোর আরেকটি ভালো উপায় হল মানুষের সাথে সময় কাটানো। সম্প্রতি ‘ইউএস সার্জন জেনারেল’ জানিয়েছেন, সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা দৈনিক ১৫টি সিগারেট টানার মতো ক্ষতিকর।
তুচ্চারনি বলেন, “একাকী থাকা মনের জন্য ভালো না। হতে পারে কোনো পার্টি বা অনুষ্ঠান নেই অথবা নেই কোনো ‘ডিনার ডেট’। তবে কয়েকজনের সাথে সময় কাটানো বা আড্ডা দিলেও মনের ওপর ভালো প্রভাব পড়ে।”
তাই হাঁটার সময় বন্ধুদের সাথে নেওয়ার চেষ্টা করা যেতেই পারে।
চিকিৎসা নেওয়া
“মানসিক চিকিৎসা নিয়ে মনের নেতিবাচক চিন্তাগুলো চিহ্নিত করা যায়। আর সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ইতিবাচক মনোভাব তৈরি করতে সাহায্য করে মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা”- মন্তব্য করেন নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘স্টোনি ব্রুক মেডিসিন’য়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ লুসিয়ান ম্যানু।
বিষণ্নতা কাটাতে দেখা গেছে ‘আলোক থেরাপি’র চাইতে ‘কগনেটিভ বিহেইভেওরাল থেরাপি’ অনেক বেশি কার্যকর। আর এই পদ্ধতি ঋতুগত বিষণ্নতা সারাতেও কাজ করে।
ম্যানু আরও বলেন, “এই ক্ষেত্রে ওষুধের ব্যবহারও রয়েছে, যা কিনা ঘুম উন্নত করার পাশাপাশি ওজন ও ক্ষুধাও বাড়ায়। যারা বেশি মাত্রায় ‘সিজনাল অ্যাফেক্টিভ ডিজঅর্ডার’য়ে বেশি ভোগেন তারা চিকিৎসকের পরামর্শে এই ব্যবস্থাপত্র নিতে পারেন।”
আরও পড়ুন