চিপস, সোডা পানীয়, মোড়কজাত খাবার বা সসেজ- এসবই প্রক্রিয়াজত খাবার।
Published : 22 Sep 2024, 04:53 PM
আজ দুপুরে অফিসে কী খেয়েছেন; কিংবা বন্ধুদের আড্ডায়? যা খেয়েছেন সেসবের উপাদানগুলো খেয়াল করেছেন কী?
এসবের মধ্যে যদি দেখেন- প্রক্রিয়াজাত উপাদান বেশি, তবে হয়ত টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে আছেন।
প্যাকেটজাত খাবার, কোমল পানীয়, চিপস, সসেজ, চিকেন নাগেটস, আইস ক্রিম- এই ধরনের প্রক্রিয়াজাত খাবারে মেশানো হয় নানান ধরনের সংরক্ষক, কৃত্রিম উপাদান ও রং।
‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’য়ের করা গবেষণায় দেখা গেছে, এই ধরনের খাবারগুলো স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব ফেলে।
সিএনএন ডটকম জানায়, এই গবেষণার জন্য ইউরোপের আটটি দেশের তিন লাখেরও বেশি মানুষের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যাভ্যাসের ওপর পর্যবেক্ষণ চালানো হয়।
‘দি ল্যানসেট রিজিওনাল হেল্থ-ইউরোপ’য়ে প্রকাশিত এই গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে, একজন ব্যক্তির খাদ্যাভ্যাসে ১০ শতাংশ প্রক্রিয়াজাত খাবার যুক্ত হওয়ার সাথে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে ১৭ শতাংশ।
আরও দেখা গেছে, প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের পরিমাণ কমানোর সাথে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমেছে।
এই কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও ‘ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ড’য়ের ‘নাফিল্ড ডিপার্টমেন্ট অফ প্রাইমারি হেল্থ কেয়ার সায়েন্সেস’য়ের ‘খাদ্য ও স্থূলতা’ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. নেরিস অ্যাস্টবারি বলেন, “পর্যবেক্ষণমূলক গবেষণা বলে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যাভ্যাসের সাথে টাইপ টু ডায়াবেটিস হওয়ার সম্পর্ক নিরূপন করেছে তারা। তবে কী কারণে হয় সেটার জন্য আলাদা গবেষণার প্রয়োজন।”
শুধু ডায়াবেটিস নয়, অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে নানান ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
‘ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডন’য়ের প্রধান গবেষক ডা. স্যামুয়েল ডিকেন বলেন, “যে কোনো প্রক্রিয়াজাত খাবার কেনার পর মোড়ক দেখেই আপনি জানতে পারবেন কী কী উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই ধরনের বেশিরভাগ খাবার ঘরে তৈরি করা হয় না।”
এসব খাবার সর্বত্র। সহজলোভ্য হওয়াতে বাজারজাতকরণও বেশি হয়।
ডা. ডিকেন বলেন, “যেমন- চিনিযুক্ত পানীয় বা শরবত, দোকানে বিক্রি হওয়া তৈরি খাবার, চিপস, সকালের নাস্তা হিসেবে সিরিয়াল- এগুলো অনেকদিন টিকিয়ে রাখতে নানান ধরনের সংরক্ষক ব্যবহার করা হয়। জনপ্রিয়তার জন্য বিভিন্ন ধরনের রং মেশানো হয়। অনেকগুলোতে আবার দাবি করা হয়- চর্বি কম অথবা আঁশ সমৃদ্ধ।”
এই ধরনের খাবার সাধারণত উচ্চ ক্যালরি যুক্ত হয়। ফলে পেট ভরার আগেই বেশি ক্যালরি গ্রহণ করা হয়ে যায়।
“আমরা সবাই জানি, অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ থেকে দেহে চর্বি জমার পরিমাণ বাড়ে। যা থেকে টাইপ টু ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়”- মন্তব্য করেন এই গবেষক।
পরিবর্তে যা খাওয়া উচিত
প্রধান শত্রু হল চিনি, আর প্রক্রিয়াজাত প্রাণিজ খাবার।
তাই ডিকেন পরামর্শ দেন, “দুপুরের খাবার কিনতে গিয়ে কোমল পানীয়র পরিবর্তে সাধারণ খাবার পানি নিন। চিপসের পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন ফল।”
তবে সব প্রক্রিয়াজাত খাবারই যে খারাপ হবে সেটাও ঠিক না। অনেক খাবারের বিষাক্ততা এড়াতেও নানান ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয়। যা খাদ্য নষ্ট হওয়া থেকে বাঁচায়।
এই তথ্য জানিয়ে ‘লন্ডন মেট্রোপিলিটন ইউনিভার্সিটি’র স্বাস্থ্য ও পুষ্টি-বিষয়ক অধ্যাপক ডা. হিল্ডা মুলরুনি বলেন, “ভালো পন্থা হল, মোড়কে থাকা উপাদান দেখে খাবার কেনা। তাহলেই বোঝা যাবে ওই খাবারটা কতটা প্রক্রিয়াজাত।”
আর প্রক্রিয়াজাত খাবার কী পরিমাণ খাওয়া হচ্ছে সেটা বোঝার জন্য মাসব্যাপী একটা তালিকা নিজেই প্রস্তুত করা যেতে পারে। সেই তালিকা অনুসারে এই ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়া হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনার পরামর্শ দেন- ডা. মুলরুনি।
তিনি বলেন, “মনে রাখতে হবে শুধু খাদ্যাভ্যাস একমাত্র কারণ নয়। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কতক্ষণ বসে থাকা হয়, কী পরিমাণ কর্মক্ষম থাকা হয়, ঘুমের পরিমাণ, আর্দ্র থাকার মাত্রা, ধূমপান ও অ্যালকোহল গ্রহণের পরিমাণও মুখ্য ভূমিকা পালন করে।”
আরও পড়ুন
ডায়াবেটিস সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণা