সব কার্বোহাইড্রেইটস বা শর্করা খারাপ না। তবে দৈনিক পরিমাণ মতো গ্রহণ করতে হবে।
Published : 08 Nov 2023, 05:12 PM
ওজন কমাতে চাইলে দৈনিক ঠিক কতটা শর্করা বা কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করা প্রয়োজন এ নিয়ে দ্বিধা বা তর্কের শেষ নেই।
তবে স্বাস্থ্যকর ওজন ধরে রাখতে খাবার তালিকা থেকে সম্পূর্ণ কার্বোহাইড্রেইট বাদ না দিয়ে বরং পরিমিত গ্রহণ করা প্রয়োজন। এতে সুস্থ থাকা যায়।
ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিবন্ধিত মার্কিন পুষ্টিবিদ ও ‘গ্যারেজ জিম রিভিউস’য়ের ক্রীড়া খাদ্য পরিকল্পক ডেসটিনি মুডি বলেন, “যারা ওজন কমাতে কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ কমাতে চান তাদের দৈনিক কতটুকু কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করতে হবে সে বিষয়ে ধারণা থাকতে হবে।”
কার্বোহাইড্রেইট প্রেমি অথবা কার্বোহাইড্রেইট এড়িয়ে চলেন এমন ব্যক্তিদের জন্য সুস্থ ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে ঠিক কতটা কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করা প্রয়োজন সে সম্পর্কে ধারণা থাকা আবশ্যক ।
ওজন নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে কার্বোহাইড্রেইট এর সম্পর্ক
যদিও ওজন বাড়ার প্রধান কারণ হিসেবে কার্বোহাইড্রেইট’কে দোষারোপ করা হয়। তবে সুস্থ থাকতে সুষম খাবার গ্রহণ অত্যাবশ্যকীয় অংশ।
বস্টনের ‘হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল’য়ের করা গবেষণা অনুযায়ী, কার্বোহাইড্রেইট দেহে জ্বালানি হিসেবে কাজ করে, কর্মশক্তি বাড়ায় ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণ সহজ করে।
তবে সকল কার্বোহাইড্রেইট সমান ভাবে তৈরি নয়। স্বাস্থ্যকর জটিল কার্বোহাইড্রেইটগুলো হল- গোটা শস্য, সবজি, ফল ও ডাল ধরনের খাবার থেকে আসে।
অন্যদিকে রয়েছে পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেইট যেমন- বেইক করা খাবার, মিষ্টি খাবার এবং সাদা রুটি।
ব্যাখ্যা করে মুডি বলেন, “স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের সাথে স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইটের উৎস খুঁজে বের করতে এবং পরিমিত ক্যালোরি গ্রহণ করার কৌশল জানা থাকা দরকার।”
কতটুকু কার্বস যথেষ্ট?
কার্বোহাড্রেইটস বা কার্বস গ্রহণের কোনো নির্দিষ্ট মাপ নেই। ‘ডাইয়েটারি গাইডলাইনস ফর আমেরিকানস’ অনুযায়ী, স্বাস্থ্যকর ব্যক্তিরা দৈনিক চাহিদার ৪৫ থেকে ৬৫ শতাংশ ক্যালরি গ্রহণ করতে পারেন কার্বোহাইড্রেইট থেকে।
প্রত্যেকেই আলাদা। তাই ওজন কমাতে নিজের প্রয়োজন মতো ও দেহে জ্বালানি হিসেবে কাজ করতে পারে এমন পরিমিত কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণের মাত্রা নিজেই পরীক্ষা করে বের করতে হবে।
মুডি বলেন, “যদি আপনি দৈনিক ২০০০ ক্যালোরি গ্রহণ করেন তাহলে ৯০০ থেকে ১৩০০ ক্যালোরি স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইট থেকে আসা উচিত। এই হিসাবে প্রায় ২২৫ থেকে ৩২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেইট দৈনিক গ্রহণ করা প্রয়োজন। বিভিন্ন বয়স, শারীরিক কার্যক্ষমতা, ওজন নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্য ও স্বাস্থ্যের ওপর এই মাত্রা নির্ভর করে থাকে।”
পরিমাণের চেয়ে গুণগত মানের বেশি প্রাধান্য দেওয়া
কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণের পরিমাণের ওপর মনোযোগ না দিয়ে বরং এর গুণগত মানের ওপর মনোযোগ দেওয়া উচিত।
যেমন- প্রক্রিয়াজাত খাবারে বাড়তি চিনি ও পরিশোধিত ময়দা যোগ করা থাকে যা স্বাস্থ্যকর নয়। পাবমেড সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণায় দেখা যায়, এই ধরনের কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ রক্তে দ্রুত শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং তা ওঠানামা ঘটায়। ফলে ওজন কমানো যাত্রা বিঘ্নিত হয়।
মুডি বলেন, “ওজন কমাতে চাইলে উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ জটিল কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করা উচিত, পরিশোধিত খাবার যতটা সম্ভব কম গ্রহণ করতে হবে এবং চিনি ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।”
ধীরে হজম হয় এবং দীর্ঘক্ষণ শক্তি যোগায় এমন কয়েকটি স্বাস্থ্যকর কার্বোহাইড্রেইট হল-
গোটা শস্য, যেমন- ওটস, দানাদার ময়দা এবং বাদামি চাল।
সবজি, যেমন- মটর, ডাল ও টফু।
কম শর্করা ধরনের ফল, যেমন- বেরি আপেল ও কমলা।
মুডি আরও বলেন, “ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ, কম শর্করা সমৃদ্ধ ফল খাওয়া উচিত। আর রক্তের শর্করা ও ক্ষুদা নিয়ন্ত্রণ করতে সব সময় উচ্চ ‘গ্লাইসেমিক ইনডেক্স’ ফল খাওয়ার পাশাপাশি চর্বি ও প্রোটিনের উৎস বজায় রাখতে হবে।”
অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করা যাবে না
কার্বোহাইড্রেইট, চর্বি বা প্রোটিনের মতো মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট গ্রহণ ওজন বাড়ায়। যুক্তরাজ্যের ‘এমআরসি এলসি উইডোসন ল্যাবরেটরি’ পরিচালিত গবেষণা অনুযায়ী, খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ ওজন কমানোর একটা কার্যকর উপায়।
তাই খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা ও দেহের ক্ষুধাভাব বুঝতে পারা প্রয়োজন।
সুষম খাবার খাওয়া, কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ বাদ না দিয়ে বরং এর পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা ভালো। ওজন কমাতে এই পদ্ধতি অনুসরণ ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে, পুষ্টির চাহিদা মেটায় এবং ওজন নিয়ন্ত্রণের পথ সুগম করে।
মুডি বলেন, “যে কোনো খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া নানাভাবে দেহের ক্ষতি করে। এই কারণে পুষ্টিবিদেরা সকল ধরনের খাবার পরিমিত গ্রহণের পরামর্শ দেন।”
যদি কোনো কারণে খাবার তালিকা থেকে গুরুত্বপুর্ণ পুষ্টি উপাদান- চর্বিহীন মাংস ও স্বাস্থ্যকর চর্বি বাদ দেওয়া হয় তাহলে বাড়তি কার্বোহাইড্রেইট গ্রহণ করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন
ওজন কমানোর আসল চাবিকাঠি কি খাদ্যাভ্যাসে কম কার্বোহাইড্রেইট?