Published : 26 May 2019, 05:28 PM
ছন্দ নামের একটি ছেলে
পাখির মত পাখনা মেলে
নীল আকাশে উড়তে চায়
সবুজ মাঠে হলুদ রঙের লাটিম হয়ে ঘুরতে চায়।
রংধনু আর মেঘের সাথে সেই ছেলেটির মিতালী
সেই ছেলেটির ছুটে চলা গানের মত গীতালি।
সেই ছেলেটির মন বসে না পড়ায়
তার গল্পই বলছি শোনো ছড়ায়।
সবাই যখন ঘুমিয়ে থাকে ছন্দ তখন জাগে
চাঁদের আলো তারার মেলা গভীর অনুরাগে
দেখে এবং ভাবে,
আকাশ পারের জোছনা ছুঁতে কেমন করে যাবে।
ছন্দ খুবই অল্প ঘুমায় ভোরের বেলা ওঠে
পুব আকাশের সূর্যের আলোয় ফুলের মত ফোটে!
ছন্দ যখন ইশকুলে যায় ডেকে বলেন বাবা-
ভাল করে ডানে বামে দেখে শুনে যাবা।
ছন্দ তখন ধীরে হাটে আর দেখে দুই পাশ
নাম না জানা ফুল পাতা ফল, হলুদ-সবুজ ঘাস
এমনি করে ক্লাসের সময় অর্ধেক হয় পার
শিক্ষক খুব রেগে বলেন- এসব কি কারবার?
ছন্দ বলে বাবার কথায় দেখে ডান আর বাম
ধীরে ধীরে আসতে হলো তাই দেরি করলাম।
ইশকুলে যেই ছুটির ঘণ্টা ডং ডং ডং বাজে
খুশির জোয়ার উথলে ওঠে ছন্দ সোনার মাঝে।
বাড়ি এসেই ছন্দ ঝাঁপায় রৌদ্র নদীর জলে
গাঙচিল আর পানকৌড়ি, সব ছন্দের দলে
উল্লাসে খুব মাতে
ডাক দিলে কেউ ছন্দ বলে সময় তো নেই হাতে।
ব্যস্ত আছি মাছের সাথে এবং বালিহাঁসের সাথে
লুকোচুরি খেলায়,
তোমার কথা শুনবো না হয় অন্য দুপুর বেলায়।
মা ডেকে কন ছন্দ রে তোর খাবার সময় যায়
ছন্দ বলে- যারা বোকা তারাই কেবল খায়!
খেতে খেতে, খেতে খেতে
পেট যদি হয় ঢোল
দেখবে তখন বাঁধবে ভীষণ রকম গণ্ডগোল।
ঢোলকরা সব পেট বাজাবে তাক ডুমা ডুম ডুম
সেই আওয়াজে দেখবে সবার বন্ধ হবে ঘুম।
মা বলে- থাম বাঁদর ছেলে
এবার হাতের সামনে পেলে
দেবো এমন মার
ছন্দ তখন নদীর জলে মিশেই একাকার।
দুপুর শেষে হালকা রোদের শান্ত বিকেল বেলায়
ওর বয়েসি সবাই যখন নানা রকম খেলায়
হৈ হুল্লোর করে
ছন্দ তখন নিজের মত একাই থাকে ঘরে
চাচ্চু ডাকেন- ছন্দ
তোর সাথে কি কারো কোন রাগ অভিমান – দ্বন্ধ ?
ছন্দ বলে- এমন কথা বলছ কেন কাকা?
চাচ্চু বলেন- এই বিকেলে ঘরের মধ্যে থাকা
তোর কি তবে সাজে?
তোর তো উচিত খেলতে যাওয়া অন্য সবার মাঝে।
ছন্দ বলে- লাভ কি কাকা, এসব খেলাধুলায়
এমন খেলায় অন্য সবার হয়তো বা মন ভুলায়
কিন্তু আমার ভাবনা অন্যখানে,
খেলায় আমার মন টানে না অন্য দিকে টানে।
আমার ঘরে যখন আমি একা একা থাকি
তখন মনে হয় যে অনেক কিছুই জানার বাকি।
সেই অজানার লিস্টি বানাই অনেক ভেবে ভেবে
এবার বলো আমার কিছু কথার জবাব দেবে?
চাচ্চু বলেন কাজ আছে রে
তোর মত তুই ভাব
ছন্দটাকে এড়ায় সবাই
দেয় না কেউ জবাব।
কত প্রশ্নের জবাব পায় না
ছন্দের মনে জমা হয়,
লেখার মাঝে সামনে পেছনে
কেন ড্যাশ দাঁড়ি কমা হয়?
ফুল ফোটে কেন রাতের আঁধারে
দিনে কেন ফুল ফোটে না
সূর্যের আলো দিনে থাকে শুধু
রাত্রে কেন সে ওঠে না
ফল কোথা থেকে গাছে আসে আর
কিভাবে মাটিতে গাছ হয়
নদীতে সাগরে চাষ ছাড়া কেন
এত বড় বড় মাছ হয়!
মৌচাকে শুধু মধু থাকে
কেন ভ্রমরের চাকে থাকে না
বড়রা এমন দায় ছাড়া কেন
কিছুর খবরই রাখে না।
কি করে আকাশে ভেসে থাকে মেঘ
বৃষ্টিরা কেন ঝরে
বাতাসের বেগে কেন গাছপালা
ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে!
কোথা থেকে পেল জোনাকি পোকারা
ঝিলমিল করা আলো
আকাশের রঙ আজকে যা দেখি
থাকে না কেন তা কালও?
এমন হাজার প্রশ্ন নিয়ে ছন্দের মাথা জট
দাদা বলে-
এটা কেমন ছেলে রে কেবলই ফটর ফট
করতে করতে ঘামায় মাথা,
থাম না রে ভাই লাভ কী!
ছন্দ বলে- থামবো আগে,
বলো দাও
এর জবাব কী?
এইভাবে ছন্দের যায় রাত দিন
ছন্দের প্রশ্নরা এতই স্বাধীন!
যাকে পায় তাকে বলে উত্তর চাই
সকলেই ভেবে বলে- ঠিক জানা নাই!
ছেলের এমন কাণ্ডে বাবা বলেন এবার
ছন্দ-
দিনের বেলায় সূর্য রাতে হাসনাহেনার গন্ধ
আমার কাছে তুই,
কিংবা গোলাপ টগর বেলি রক্তজবা জুঁই।
তুই যে আমার আকাশ জুড়ে জোছনা মাখা চাঁদ
তোকে ঘিরেই আমার অনেক স্বপ্ন অনেক সাধ।
কেন রে চলিস এমন খেয়াল খুশি মত
তোর কী কিছুর অভাব আছে,
বল তা কোথায়, কত?
ছন্দ বলে- বাবা আমার অভাব কোথাও নাই
একটা শুধু চাওয়া আমার জানার সুযোগ চাই।
এই দুনিয়ায় এত্ত কিছুর এই যে মিলন মেলা
কিন্তু কেন তোমরা সবাই করছো অবহেলা?
কোন কিছুর খোঁজ রাখ না
জানতে চাইলে চুপ
আমার মনে হাজার হাজার প্রশ্নরা নিশ্চুপ
তখন হবে যখন আমি জানবো বুঝবো সব
তার আগে নেই আমার কোন আনন্দ উৎসব।
বাবা বলেন- আয়রে মানিক আমার
কাছে আয়!
আজ বুঝেছি তোর কচি মন
আসলে কী চায়।
আমরা যেসব না জানি তুই
জানবি সেসব কিছু
আঁধার ঠেলে ছুটবি ভোরের
আলোর পিছু পিছু
কিন্তু তোকে চলতে হবে
সে পথ ধরে রোজ
যে পথ ধরে চললে পাবি
সঠিক আলোর খোঁজ।
সবার আগে পড়তে হবে
শিখতে হবে পড়া
অজানা সব জ্ঞানের আলোয়
শিক্ষাঙ্গন গড়া
বইয়ের মাঝেই সব পাবি তুই
তোর যা চাওয়ার আছে
মিছেই কেন ঘুরবি রে তুই
না জানাদের কাছে
পড়তে পড়তে তোর কাছে সব
আলো হবে জড়ো
একদিন তুই ঐ আকাশের
মতই হবি বড়।
ছন্দ নামের সেই যে ছেলে
আগের সময় পেছন ফেলে
বাবার কথায় বদলে যায়!
ওর মত নেই একজনও আর
এখন ওদের পাড়াগাঁয়
ছন্দ এখন ইশকুলে যায় সময় মতো পড়ে
‘ছন্দ রে তোর মত ছেলে চাই প্রতিটি ঘরে
এমন কথাই সবাই বলে
ছন্দ শুনে হাসে
ছন্দ রে তোর জীবন
কাটুক আনন্দ উচ্ছ্বাসে।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |