সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী পর্তুগিজ কথাসাহিত্যিক ও সাংবাদিক জোসে সারামাগো (১৯২২-২০১০)। বয়স্করাও যদি শিশুদের বইগুলো পড়তো তাহলে ‘পৃথিবী বদলে যেতো’ বলে মনে করতেন তিনি। শিশুদের জন্য তিনি লিখেছেন বেশকিছু বই- ‘দ্য ফার্স্ট বোট’, ‘দ্য লিজার্ড’, ‘দ্য সাইলেন্স অফ ওয়াটার’, ‘এন আনএক্সপেক্টেড লাইট’ ও ‘দ্য অ্যালিগেটর’ ইত্যাদি।
Published : 02 Aug 2023, 02:46 PM
“শিশুদের জন্য গল্প লিখতে হবে সহজ শব্দ দিয়ে, আমি যদি তেমন করে গল্প লিখতে পারতাম! আমার যদি যথেষ্ট দক্ষতা থাকতো, অনেক বিবরণসহ গল্পগুলো বলতে পারতাম। সেই গল্পগুলো হতো অন্যসব রূপকথা থেকে আলাদা।” -গল্পের ভূমিকায় জোসে সারামাগো
বহুকাল আগের কথা। একটা গ্রাম ছিল, আর ছিল একটা ছেলে।
একদিন বাড়ির পেছন দিক দিয়ে বেরিয়ে পড়লো ছেলেটি। গোল্ডফিঞ্চের মতো এক গাছ থেকে আরেক গাছ অতিক্রম করে সে নদী পার হয়ে গেলো।
হঠাৎ তার খেয়াল হলো- বাড়ি থেকে এতদূর সে কখনও আসেনি। মাঠের শেষপ্রান্তে এসে ছেলেটি থামলো, তারপর নিজের ভাবনায় হারিয়ে গেল। সে কি প্রস্তুত অজানার দিকে ছুটে যেতে! মঙ্গলগ্রহের মতো অনেককিছু আবিষ্কার করার আছে তার।
আমি কি আরও দূরে যাবো?- ছটফট করে উঠল তার উৎসুক মন।
সে সিদ্ধান্ত নিলো এগিয়ে যাওয়ার। কিছুপথ হাঁটার পর সে আনন্দে ফলের বাগান, মাঠ, জনমানবহীন জঙ্গল পাড়ি দিল। কখনও সে সাদা ফুলে ভরা ঘাসের আঁকাবাঁকা পথের মাঝে হারিয়ে যাচ্ছিল। সবখানে পাখির কলরব আর মাটির ঘ্রাণ।
কিছুটা পথ হাঁটার পর ছেলেটি দেখলো তার আশপাশে কোন গাছপালার চিহ্ন নেই। একটি খাল পেরোবার পর ছোট্ট এক পাহাড়ের সামনে এসে দাঁড়ালো সে। পাহাড়ে ওঠামাত্রই পাপড়ি শুকানো নিস্তেজ এক ফুলের দেখা মিলল।
ছেলেটির খুব মায়া হলো, সিদ্ধান্ত নিল এই ফুলকে সে পুনর্জীবিত করবে। কিন্তু পানি কোথায় পাবে, তাও পাহাড়ের চূড়ায়? নদী থেকে পানি আনা সম্ভব, কিন্তু সেতো বেশ দূরে!
যেহেতু সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছে, নদীর দূরত্ব তাকে ঘাবড়াচ্ছে না। পাহাড় থেকে নেমে, বহুপথ অতিক্রম করে নদীতীরে শেষমেশ পোঁছাল ছেলেটি। তার হাতের মুঠোয় যতটুকু সম্ভব পানি ভরে সে ফুলের দিকে রওনা দিল।
ফেরত আসার পথে সব পানি ধরে রাখতে পারলো না ছেলেটি। তার মুঠোয় মাত্র তিন ফোঁটা পানি অবশিষ্ট ছিল। এভাবে বিশবার একই প্রক্রিয়া চললো। পানির ছোঁয়া মিলতেই মৃতপ্রায় ফুলটা সতেজ হয়ে উঠতে লাগলো আর চারপাশে ভরে গেল ফুলের মিষ্টি সুবাস।
এত বড় ফুল ছেলেটি আগে কখনও দেখেনি। একসময় ক্লান্ত হয়ে ছেলেটি ফুলের নিচে ঘুমিয়ে গেল।
আঁধার ঘনিয়ে এলো, ওইদিকে বাড়িতে তার বাবা-মা চিন্তায় কাতর। গ্রামের সবাই তাকে খোঁজা শুরু করল। কেউ কেউ কান্নাকাটি শুরু করে দিলো, ছেলেটিকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না। সবখানে খোঁজার পর ঠিক সূর্যাস্তের সময় মস্ত বড় এক ফুলের দেখা পেলো গ্রামবাসী। এত বড় ফুল তারা আগে কখনও দেখেনি।
সবাই ফুলের দিকে রওনা দিয়ে পাহাড়ে ওঠা শুরু করল। পাহাড়ে উঠেই ছেলেটিকে দেখতে পেল। ছেলেটি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আর তাকে সন্ধ্যার ঠান্ডা থেকে বাঁচিয়ে রাখতে ফুলটির একটি পাপড়ি তার শরীর ঢেকে রেখেছে।
বাড়িতে নিয়ে যাওয়া মাত্রই সবার মুখে ছেলেটির প্রশংসা। সে এক অসামান্য বিস্ময়কর কাজ করেছে!
এখন গ্রামের পথ দিয়ে সে যতবার হেঁটে যায়, সবার মুখে একই কথা- ছেলেটি তার নিজের আর গ্রামবাসীর সবার মাপের চেয়ে বড় একটি কাজ করেছে।